ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

আইনমন্ত্রীর ভাষ্য

তারেককে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেবে সরকার

প্রকাশিত: ০৫:৩৩, ২২ জুলাই ২০১৬

তারেককে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেবে সরকার

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে উচ্চ আদালত থেকে সাত বছরের কারাদ- ও বিশ কোটি টাকা অর্থদ- দেয়ার প্রেক্ষিতে যুক্তরাজ্য থেকে তাকে ফিরিয়ে আনতে নতুন উদ্যোগ নেবে সরকার। এক বছর আগে তারেক রহমানকে ফেরত পাঠানোর অনুরোধ করে যুক্তরাজ্য সরকারকে চিঠি দেয়া হয়েছিল। তবে যুক্তরাজ্য তাকে ফেরত না দেয়ায় এখন নতুন প্রক্রিয়া শুরু করবে সরকার। একাধিক সূত্র এসব তথ্য জানায়। তারেক রহমান চিকিৎসার জন্য লন্ডনে গেলেও এখন সেখানে তিনি শরণার্থী হিসেবে অবস্থান করছেন। ইতোমধ্যেই তাঁর পাসপোর্টের মেয়াদও ফুরিয়েছে। তবে তিনি পাসপোর্ট নবায়নের জন্য এখনও বাংলাদেশ সরকারের কাছে কোন আবেদন করেননি। বৃহস্পতিবার উচ্চ আদালত থেকে অর্থ পাচার মামলায় নিম্ন আদালতের খালাসের রায় বাতিল করে তারেক রহমানকে সাত বছরের কারাদ- ও বিশ কোটি টাকার অর্থদ- দেয়া হয়। আদালতের রায়ের পর তাকে বিদেশ থেকে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, তারেক রহমানের এতদিনে কোন মামলায় সাজা ছিল না। এ কারণে এতদিন সেভাবে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা হয়নি। এখন করা হবে। তবে যুক্তরাজ্যের সঙ্গে বাংলাদেশের বন্দীবিনিময় চুক্তি নেই জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ইন্টারপোলের মাধ্যমে গেলে ফিরিয়ে আনতে পারার সম্ভাবনা আছে। চুক্তি করেও যদি আনতে হয়, তাহলে আমরা আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে চুক্তি করার চেষ্টা করব। তারেক রহমানের অর্থ পাচার মামলার বিষয়ে আইনমন্ত্রী আরও জানান, এর আগে বিচারককে প্রভাবিত করে বিএনপি নেতা তারেক রহমান নিম্ন আদালতে খালাস পেয়েছিলেন। সেই রায়ের দু’দিন পর পরিবার-পরিজন নিয়ে জজ সাহেব মালয়েশিয়ায় পালিয়ে যান। আসার অনুরোধ করার পরেও, এমনকি চাকরি থেকে নোটিস দেয়ার পরও আজ পর্যন্ত ফিরে আসেননি। নিম্ন আদালতের সেই রায় প্রসঙ্গে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, আমি এ কথা এই রায়ের (উচ্চ আদালতের) আগে কোনদিন মুখ থেকে বের করিনি। আজকে বলছি, কারণ উচ্চ আদালতে এটা প্রমাণিত হয়েছে, তিনি যে রায় দিয়েছিলেন সেটা ঠিক ছিল না। বিভিন্ন মামলা মাথায় নিয়ে ২০০৮ সাল থেকে যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত তারেক রহমান উচ্চ আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ আদালতে আপীল করতে পারবেন কি-না জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী বলেন, লন্ডনে বসে আপীল হবে না। আমরা যদি উনাকে ধরে আনতে পারি অথবা তিনি যদি এসে আত্মসমর্পণ করেন, তাহলে আপীল করতে পারবেন। যুক্তরাজ্য থেকে ধরে আনা হলে পরে আপীলের সুযোগ থাকবে কি-না সেই প্রশ্নে তিনি বলেন, আমরা যে আপীলের সুযোগ দেই, সেটা বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় এক আসামির ক্ষেত্রে দেখেছি। আমেরিকা থেকে এক আসামিকে ফিরিয়ে এনে তাকে আপীলের সুযোগ দেয়া হয়েছিল। যুক্তরাজ্য থেকে তারেক রহমানকে ফিরিয়ে আনার সুযোগ কতটা জানতে চাইলে আনিসুল হক বলেন, তারেক রহমানের এতদিনে কোন মামলায় সাজা ছিল না। এ কারণে এতদিন সেভাবে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা হয়নি। এখন করা হবে। তবে যুক্তরাজ্যের সঙ্গে বাংলাদেশের বন্দীবিনিময় চুক্তি নেই জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ইন্টারপোলের মাধ্যমে গেলে ফিরিয়ে আনতে পারার সম্ভাবনা আছে। চুক্তি করেও যদি আনতে হয়, তাহলে আমরা আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে চুক্তি করার চেষ্টা করব। তারেক রহমানকে দেশে এনে সাজা খাটাতে সব আইনী প্রক্রিয়াই সরকার গ্রহণ করবে বলেও জানান আইনমন্ত্রী। তিনি বলেন, দুদককে অনুরোধ করব, এই রায় কার্যকর করতে রায়ের অনুলিপি পেতে যেন তারা দরখাস্ত করেন এবং সেই দরখাস্ত যেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠান। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই দরখাস্ত পেলে তাকে বিদেশ থেকে ধরে আনার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আইনমন্ত্রী বলেন, নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন নিয়ে এ মামলা লড়ার সুযোগ থাকলেও তারেক তা নেননি, কারণ তিনি দোষী। জামিন পেয়ে এ মামলায় কনটেস্ট করে নির্দোষ প্রমাণ করতে পারতেন। তিনি কিছুই করেননি। তার মানে এটা অত্যন্ত পরিষ্কার, তার বিরুদ্ধে যে অভিযোগÑ সেটা ঠিক। সূত্র জানায়, যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত বেগম খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমানের বাংলাদেশী পাসপোর্টটির বৈধতা হারিয়েছেন। আর এই কারণেই দেড় বছর আগে ছোট ভাইয়ের মৃত্যুর খবর শুনেও মালয়েশিয়া যেতে পারেননি তিনি। তারেক ২০০৮ সালের সেপ্টেম্বরে লন্ডনে যাওয়ার পর ওই বছরের ডিসেম্বরে তার পাসপোর্ট সর্বশেষ নবায়ন করেন। তার মেয়াদ ২০১৩ সালে শেষ হয়েছে। এরপর তিনি পাসপোর্ট নবায়ন করতে কখনই লন্ডনে বাংলাদেশ দূতাবাসে যোগাযোগ করেননি বলে দূতাবাস থেকে ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জানানো হয়েছে। আর তারেক রহমান এখনও ব্রিটিশ পাসপোর্টও পাননি। তারেক রহমান শরণার্থী হিসেবে লন্ডনে অবস্থানের কারণে গত বছর ২৪ জানুয়ারি ছোট ভাই আরাফাত রহমান কোকোর মৃত্যুর পর ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও তখন কুয়ালালামপুরে যেতে পারেননি। তিনি গত সাত বছর ধরে যুক্তরাজ্যেই অবস্থান করছেন।
×