ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

টঙ্গীতে জঙ্গী আস্তানা- শীর্ষ জেএমবি কমান্ডারসহ গ্রেফতার ৪

প্রকাশিত: ০৫:৩২, ২২ জুলাই ২০১৬

টঙ্গীতে জঙ্গী আস্তানা- শীর্ষ জেএমবি কমান্ডারসহ গ্রেফতার ৪

গাফফার খান চৌধুরী/নুরুল ইসলাম ॥ চলমান সাঁড়াশি অভিযানে আরও একটি জঙ্গী আস্তানার সন্ধান মিলেছে। বৃহস্পতিবার আবিষ্কৃত জঙ্গী আস্তানাটির সন্ধান মিলে ঢাকা সংলগ্ন টঙ্গীর একটি বাড়িতে। আস্তানাটি থেকে উদ্ধার হয় অত্যাধুনিক অস্ত্র, প্রচুর তাজা বুলেট, শক্তিশালী বিস্ফোরক, হ্যান্ডগ্রেনেড, কমান্ডো নাইফ, জিহাদী বইপত্রসহ জঙ্গী কর্মকা-ের নানা আলামত। গ্রেফতার হয় এক শীর্ষ জেএমবি কমান্ডারসহ চারজন। প্রত্যেকেই জেএমবির গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব রয়েছে। গাবতলীতে পুলিশ কর্মকর্তা ইব্রাহিম হত্যা ও হোসনী দালানে বোমা হামলায় জড়িতরা গ্রেফতারকৃত শীর্ষ জেএমবি কমান্ডারের অধীনে সামরিক প্রশিক্ষণ নিয়েছিল। এ দুটি ঘটনায় গ্রেফতারকৃতদের প্রায় সবাই ছাত্র শিবিরের সদস্য। বৃহস্পতিবার ভোর চারটায় র‌্যাব-১ ঢাকা সংলগ্ন টঙ্গী পৌরসভাধীন চেরাগআলী এলাকার আউচপাড়া মুক্তার বাড়ি সড়কের ৪৪ নম্বর ৬তলা জেসমিন আক্তারের বাড়িতে অভিযান চালায়। অভিযানে বাড়ির চতুর্থ তলার দক্ষিণ দিকের ডি/২ নম্বর ফ্ল্যাট থেকে গ্রেফতার হয় মোঃ মাহমুদুল হাসান ওরফে হাসান ওরফে তানভীর (২৭)। পিতা-মোঃ বাবুর আলী, গ্রাম-রশিদপুর, থানা-উল্লাপাড়া, জেলা-সিরাজগঞ্জ। মোঃ আশিকুল আকবর ওরফে আবেশ (২২)। পিতা-মোঃ খলিলুর রহমান, গ্রাম-কোবারু বুড়িরহাট, রংপুর সদর জেলা। নাজমুস সাকিব ওরফে তাহমিদ (১৯)। পিতা- মোঃ আকরাম হোসেন, বাড়ি-সাইটবাড়িয়া, বেতুলী, থানা-কালিগঞ্জ, জেলা-যশোর ও মোঃ শরিয়ত উল্লাহ ওরফে শুভ ওরফে সানি (১৯)। পিতা-মোঃ শামছুল ঘশ, গ্রাম-শেখহাটি, থানা ও জেলা-নড়াইল। ফ্ল্যাটটি থেকে উদ্ধার হয় ১টি অত্যাধুনিক বিদেশী পিস্তল, ১৩৩ রাউন্ড তাজা বুলেট, ৩টি কমান্ডো নাইফ (জেএমবির ভাষায় নান চাকু), ৩টি ছুরি, ২টি চাইনিজ কুড়াল, ১টি চাপাতি, ৭টি হ্যান্ডগ্রেনেড, ১৩টি ইলেক্ট্রিক ডেটোনেটর, ৭টি পাওয়ার জেল, ২ কেজি পটাশিয়াম, আধাকেজি সোডা, ১টি ডামি টার্গেট, বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক ও বিস্ফোরক তৈরির সরঞ্জাম এবং জিহাদী বইপত্র। সরেজমিনে উপস্থিত থেকে অভিযান পরিচালনা করেন র‌্যাবের ইন্টেলিজেন্স উইংয়ের প্রধান লে. কর্নেল আবুল কালাম আজাদ। র‌্যাব জানায়, গত ১৪ জুলাই ঢাকার উত্তরার ৬ নম্বর সেক্টর থেকে গ্রেফতারকৃত জেএমবি সদস্য মোঃ কামরুজ্জামান ওরফে সাগর (২৪) ও মোঃ রাশেদ গাজী ওরফে রাশেদ (২২) গ্রেফতার হয়। র‌্যাব তাদের বরাত দিয়ে জানায়, সাগর ও রাশেদ যশোরের পাঠশালা কোচিং সেন্টার নামের একটি মেসে থাকত। সেই মেস থেকেই তারা জেএমবির কার্যক্রম চালাত। মেসে জেএমবির গ্রেফতারকৃত দক্ষিণাঞ্চলের আমির নিয়মিত গোপন বৈঠক ও সামরিক প্রশিক্ষণের উপযোগী জঙ্গী সদস্যদের নির্বাচন করত। সামরিক প্রশিক্ষণের উপযোগীদের প্রশিক্ষণের জন্য দেশের বিভিন্ন জায়গায় পাঠাত। এভাবেই মেসটি থেকে জেএমবির কার্যক্রম চলে আসছিল। গত ১ জুলাই গুলশানে হলি আর্টিজান রেস্তরাঁ ও বেকারিতে হামলার পর থেকে প্রশিক্ষক হাসানসহ কয়েকজন আত্মগোপনে চলে যায়। তারা ঢাকায় টঙ্গীতে ওই বাসায় নতুন করে আস্তানা গাড়ে। আস্তানা গাড়ার পর গ্রেফতারকৃত দুইজনের সঙ্গে আবার যোগাযোগ স্থাপিত হয়। তারই সূত্র ধরে গ্রেফতার হয় চার জেএমবি সদস্য। বাড়িটির মালিক, কেয়ারটেকার ও অন্য ভাড়াটিয়ারা জানান, ঈদ-উল-ফিতরের আগে বাড়িটির চতুর্থ তলার ওই ফ্ল্যাটটি মাসিক সাত হাজার টাকায় ভাড়া নিয়েছিল। টঙ্গী এলাকার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ছাত্র পরিচয়ে কয়েক ছাত্র ফ্ল্যাটটি ভাড়া নেয়। ভাড়া নেয়ার পর মাত্র ৫ থেকে ৬ দিন কয়েক ছাত্র নিয়মিত যাতায়াত করেছে। এরপর তেমন কেউ যাতায়াত করত না। তবে মাঝে মধ্যেই দু’একজন করে যাতায়াত করত। যাতায়াতকারীদের কাছে ভারি ব্যাগ থাকত। ভাড়াটিয়ারা যেহেতু ছাত্র, ব্যাগে বইপত্র থাকায় ভারি হবে, এটাই স্বাভাবিক। এমন ধারণা থেকেই কেয়ারটেকার বা বাড়ির মালিক বা অন্য ভাড়াটিয়ারা কোন সময়ই ছাত্রদের ভারি ব্যাগ বা অসময়ে যাতায়াতের বিষয়ে কোন কিছুই জানতে চাননি। র‌্যাবের লিগ্যাল এ্যান্ড মিডিয়া বিভাগের পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান জানান, গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে মোঃ মাহমুদুল হাসান ওরফে হাসান জেএমবির দক্ষিণাঞ্চলের দায়িত্বপ্রাপ্ত আমির ও প্রশিক্ষক। নবম শ্রেণীতে পড়াকালীন বড় ভাইয়ের মাধ্যমে জেএমবিতে যোগ দেয়। এইচএসসি পাস করার পর যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়। এরপর তাকে জেএমবির দক্ষিণাঞ্চলের আমির নিযুক্ত করা হয়। পরবর্তীতে জেএমবির কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত মোতাবেক হাসান ঢাকায় বসবাস করেই সাংগঠনিক কার্যক্রম চালাতে থাকে। দলীয় সিদ্ধান্তের কারণে গ্রেফতার এড়াতে মুখের বড় দাড়ি কেটে ফেলে। শুধু হাসান নয়, হাসানের সঙ্গে ঢাকায় আসা জেএমবির সব সদস্যই দাড়ি কেটে ফেলে দলীয় সিদ্ধান্ত মোতাবেক।
×