বিশেষ প্রতিনিধি ॥ বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো ৩০ ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানকে দেয়া হচ্ছে জনপ্রশাসন পদক। সৃজনশীল কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ বিসিএস কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে এ পদক দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বৃহস্পতিবার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী সচিবালয়ে এ পদক প্রদান নিয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেন। আগামীকাল ২৩ জুলাই শনিবার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্মকর্তাদের মধ্যে এ পদক প্রদান করবেন।
জনপ্রশাসন সচিব বলেন, জনপ্রশাসন পদকের জন্য জেলা, মন্ত্রণালয় বা বিভাগ থেকে ১২৯টি মনোনয়ন জমা পড়ে। এ থেকে বাছাই কমিটির মাধ্যমে জাতীয় পর্যায়ে ১৩ ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠান এবং জেলা পর্যায়ে ১৭ ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানকে পুরস্কার দেয়া হচ্ছে। জাতীয় পর্যায়ে ব্যক্তি (সাধারণ অথবা কারিগরি), দল (সাধারণ বা কারিগরি) ও প্রাতিষ্ঠানিক (সাধারণ বা কারিগরি) ক্যাটাগরিতে স্বর্ণপদক (১৮ ক্যারেট মানের এক ভরি ওজন) পুরস্কার দেয়া হবে।
জাতীয় পর্যায়ে ব্যক্তি (সাধারণ/কারিগরি) ক্যাটাগরিতে নগদ এক লাখ টাকা পাবেন। দল (সাধারণ/কারিগরি) ক্যাটাগরিতে জনপ্রতি নগদ এক লাখ টাকা (দলের সদস্যসংখ্যার ওপর ভিত্তি করে সর্বাধিক পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত) ও ক্রেস্ট এবং প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে (সাধারণ/কারিগরি) ক্রেস্ট পাবেন।
এছাড়া জেলা পর্যায়ে ব্যক্তি (সাধারণ/কারিগরি) ক্যাটাগরিতে নগদ ৫০ হাজার টাকা; দল (সাধারণ/কারিগরি) ক্যাটাগরিতে জনপ্রতি নগদ ৫০ হাজার টাকা (দলের সদস্যসংখ্যার ওপর ভিত্তি করে সর্বাধিক এক লাখ টাকা) ও মেডেল এবং প্রাতিষ্ঠানিক (সাধারণ/কারিগরি) ক্যাটাগরিতে মেডেল দেয়া হবে। জাতীয় ও জেলা পর্যায়ে ব্যক্তি, দল এবং প্রাতিষ্ঠিানিকÑ এ তিন ক্ষেত্রেই সম্মাননাপত্র প্রদান করা হবে। জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ইসমাত আরা সাদেক বলেন, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সৃজনশীল ও উদ্ভাবনী কার্যক্রম উৎসাহিত করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৫ সালে জনপ্রশাসন পদক প্রবর্তন করেন।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, পদক দেয়ার জন্য মনোনয়গুলোকে দুটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে; সাধারণ এবং কারিগরি। এ দুই ক্যাটাগরিকে আবার ব্যক্তিগত, দলগত এবং প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে ভাগ করা হয়েছে। এভাবে মোট ছয় ক্যাটাগরির প্রত্যেকটিতে একটি করে মোট ছয়টি করে পদক জাতীয় ও জেলা পর্যায়ে দেয়া হবে। সাধারণ শ্রেণীতে অন্তর্ভুক্ত আছেÑ সাধারণ প্রশাসন ও ব্যবস্থাপনা, পরিবেশ ও আর্থসামাজিক উন্নয়ন এবং সংস্কার ও গবেষণা (সামাজিক)। কারিগরি শ্রেণীর মধ্যে রয়েছেÑ বিজ্ঞান, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি এবং গবেষণা (বিজ্ঞানভিত্তিক)। আট বিভাগ এবং মন্ত্রণালয়/দফতরের সাধারণ (ব্যক্তিগত) ৫৩টি, সাধারণ (দলগত) ১৫টি, সাধারণ (প্রাতিষ্ঠানিক) ২৭টি, কারিগরি (ব্যক্তিগত) ১৬টি, কারিগরি (দলগত) ১০টি, কারিগরি (প্রাতিষ্ঠানিক) ৮টিসহ মোট ১২৯টি মনোনয়ন দেয়া হয়েছিল।
জনপ্রশাসনে যে ধরনের অবদানের জন্য পদক দেয়া হচ্ছে সেগুলো হলোÑ সংস্কার, উন্নত অনুশীলন, দলগত উদ্যেগ, উন্নততর সেবা, অনন্য ধারণা বা নতুন প্রস্তাব, সুশাসন, তথ্যপ্রযুক্তি প্রসার বা ই-গবর্নেন্স, নাগরিকের অংশগ্রহণ, সম্পৃক্ততা ও ভূমিকা বৃদ্ধি, স্থানীয় সংস্কৃতি ও সামাজিক প্রতিভার উন্নয়ন, স্থায়ী প্রকৃতির উৎপাদনশীল সম্পদ সৃষ্টি, টেকসই সরকারী-বেসরকারী অংশীদারিত্ব, দক্ষতা বৃদ্ধি, দুর্নীতি হ্রাস, দারিদ্র্য বিমোচন, প্রাতিষ্ঠানিক উন্নয়ন, সরকারী কর্ম ও প্রযুক্তিগত পদ্ধতির উৎকর্ষ সাধন এবং নারী উন্নয়ন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, পুরস্কারপ্রাপ্তরা তাদের নামের শেষে পদবী হিসেবে ‘পাবলিক এ্যাডমিনিস্ট্রেশন এ্যাওয়ার্ডি (পিপিএ)’ লিখতে পারবেন। ভবিষ্যতে পদায়ন-পদোন্নতির ক্ষেত্রে এটি বিশেষ বিবেচনায় নেয়া হতে পারে। শীর্ষ এক কর্মকর্তা জনকণ্ঠকে বলেন, কর্মকর্তাদের সৃজনশীল কাজে প্রতিযোগিতা বাড়াতে এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এতে কর্মকর্তাদের প্রতিযোগিতামূলক কর্মকা- বৃদ্ধি পাবে। ফলে তাদের দক্ষতাও বৃদ্ধি পাবে। পাশাপাশি দেশও উপকৃত হবে। তিনি বলেন, এতে পদোন্নতি বা ভাল পদে পদায়নের জন্য সহজ হয়ে যাবে। পুরস্কারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের আগে ভাল পদে পদায়নের পর আমরা অন্যদের কথা ভাবতে পারব, যে কারণে কাজের প্রতিযোগিতা বাড়বেই।