ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

অর্থ পাচার মামলায় ৭ বছর সাজা হওয়ায় নির্বাচনে অংশ নেয়ার অযোগ্য

তারেকের রাজনৈতিক ভবিষ্যত অনিশ্চিত !

প্রকাশিত: ০৫:৩২, ২২ জুলাই ২০১৬

তারেকের রাজনৈতিক ভবিষ্যত অনিশ্চিত !

আরাফাত মুন্না ॥ অর্থ পাচার মামলায় সাত বছরের সাজা হওয়ায় সংবিধান অনুযায়ী দেশে নির্বাচনে অংশগ্রহণের যোগ্যতা হারিয়েছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার বড় ছেলে ও বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান। ফলে তার রাজনৈতিক ভবিষ্যতও অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। বৃহস্পতিবার তারেক রহমানকে সাত বছর কারাদ- দিয়ে হাইকোর্ট রায় দেয়ার পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় এমন মন্তব্য করেছেন দেশের প্রখ্যাত আইনজীবীরা। তারা বলেন, এই রায়েই বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের দুর্নীতির চিত্র ফুটে উঠেছে। তারেক রহমান দুর্নীতিবাজদের সহযোগিতার পাশাপাশি নিজেও দুর্নীতিগ্রস্ত ছিলেন এই রায় তাই প্রমাণ করে। দ্রুত তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নিতেও সরকারের কাছে দাবি জানান তারা। এই অপরাধের ফলে তারেক রহমানকে বহিষ্কার বা কোন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা না নিলে দল হিসেবে বিএনপিই দুর্নীতিবাজদের দলে পরিণত হবে বলেও মন্তব্য আইনজ্ঞদের। এদিকে হাইকোর্ট রায়ের পর্যবেক্ষণেও বলা হয়েছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর ছেলে ‘রাজনৈতিক ঢাল’ ব্যবহার করে ‘সচেতনভাবে’ আর্থিক অপরাধে জড়িয়েছিলেন। ‘রাজনৈতিক প্রভাব ব্যবহার করে’ এ ধরনের দুর্নীতিকে সুশাসন, টেকসই উন্নয়ন ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার জন্য ‘হুমকি’ হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে হাইকোর্টের রায়ে। ঘুষ হিসেবে আদায়ের পর ২০ কোটি টাকা বিদেশে পাচারের অভিযোগ করা এ মামলার রায়ে ঢাকার তৃতীয় বিশেষ জজ মোঃ মোতাহার হোসেন ২০১৩ সালের ১৭ নবেম্বর তারেককে বেকসুর খালাস দিয়েছিলেন। আর গিয়াসউদ্দিন আল মামুনকে দেয়া হয়েছিল সাত বছর কারাদ- এবং ৪০ কোটি টাকা জরিমানা। খালাসের সেই রায় বাতিল করে বৃহস্পতিবার হাইকোর্ট বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেককে সাত বছরের কারাদ- ও ২০ কোটি টাকার অর্থদণ্ড দেয়। পাশাপাশি মামুনের কারাদ- বহাল রাখা হয়। এবং জরিমানা ৪০ কোটি থেকে কমিয়ে ২০ কোটি টাকা করা হয়েছে। বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি আমির হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেয়। হাইকোর্টের এই রায়ের পর তারেক রহমানের রাজনৈতিক ভবিষ্যত কি হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ভবিষ্যতে তার নির্বাচনে অংশগ্রহণে সাংবিধানিক বাধার কথা উল্লেখ করে আইনজীবীরা বলছেন, তারেক রহমান নির্বাচনের অযোগ্য। দেশে ফিরলেই তাকে যেতে হবে কারাগারে। আর এ রায়ের বিরুদ্ধে আপীল করতে হলেও তারেক রহমানকে আত্মসমর্পণ করতে হবে বলে জানান তারা। সংবিধানের ৬৬ (২) এর (ঘ) অনুচ্ছেদে সংসদে নির্বাচিত হাইবার অযোগ্যতা সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘কোন ব্যক্তি সংসদের সদস্য নির্বাচিত হইবার এবং সংসদ সদস্য থাকিবার যোগ্য হইবেন না, যদি তিনি নৈতিক স্খলনজনিত কোন ফৌজদারী অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হইয়া অন্যূন দুই বৎসরের কারাদ-ে দ-িত হন এবং তাঁহার মুক্তিলাভের পর পাঁচ বৎসরকাল অতিবাহিত না হইয়া থাকে।’ এ বিষয়ে সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ জনকণ্ঠকে বলেন, সংবিধানে স্পষ্ট বলা আছে, কোন ব্যক্তির নৈতিক স্খলনজনিত ফৌজদারি অপরাধে কমপক্ষে দুই বছরের কারাদ- হলেই তিনি আর নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না। আর তারেক রহমানের তো সাত বছর কারাদ- হয়েছে। এই রায়ের ফলে তারেক রহমান আর নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না। বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান ও জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আব্দুল বাসেত মজুমদার জনকণ্ঠকে বলেন, এই রায়ের ফলে তারেক রহমানের নৈতিক স্খলন জনিত অপরাধ প্রমাণ হয়েছে, আর সাজা হয়েছে সাত বছর কারাদণ্ড। তিনি বলেন, সংবিধানে স্পষ্টভাবে বলা আছে, নৈতিক স্খলন জনিত অপরাধে দুই বছরের বেশি সাজা হলে মুক্তি লাভের পাঁচ বছরের মধ্যে নির্বাচন করতে পারবেন না। ফলে তারেক রহমান সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনের অযোগ্য। তিনি আরও বলেন, এই রায়ের মাধ্যমে তারেক রহমান যে কি পরিমাণ দুর্নীতি করেছে, তা প্রমাণিত। রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন এই আইনজীবী নেতা। ফৌজদারি আইন বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ফিন্যান্স কমিটির চেয়ারম্যান এ্যাডভোকেট শ ম রেজাউল করিম জনকণ্ঠকে বলেন, তারেক রহমান একটি বড় রাজনৈতিক দলের নেতা, তার বিরুদ্ধে সীমাহীন দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহারসহ গুরুতর অভিযোগ বিদ্যমান থাকা অবস্থায় দেশের সর্বোচ্চ আদালতে এই সাজা হওয়ার মাধ্যমে প্রমাণিত, শুধু অভিযোগই নয় বাস্তবেই তিনি দুর্নীতিবাজ। রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান জনকণ্ঠকে বলেন, এই রায়ের ফলে প্রমাণ হয়েছে ক্ষমতার অপব্যবহার করে দুর্নীতিতে লিপ্ত ছিলেন তারেক রহমান। তিনি বলেন, এখন তার আপীল করার সুযোগও নেই। আপীল করতে হলে প্রথমে দেশে এসে আত্মসমর্পণ করতে হবে বলে জানান এই আইনজীবী। তিনি বলেন, যেহেতু তারেক রহমানকে নৈতিক স্খলনজনিত ফৌজদারি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত করে সাত বছর কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে, সে কারণে সংবিধানের ৬৬ (২) এর (ঘ) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী নির্বাচনে অংশগ্রহণের অযোগ্য হয়েছেন।
×