ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বেনাপোল-পেট্রাপোল সমন্বিত চেকপোস্ট

উদ্বোধন

প্রকাশিত: ০৫:৩১, ২২ জুলাই ২০১৬

উদ্বোধন

সাজেদ রহমান/আবুল হোসেন ॥ বেনাপোল-পেট্রাপোল স্থলবন্দরের লিংক রোড দিয়ে ভারতের নবনির্মিত পেট্রাপোল স্থলবন্দরের সমন্বিত চেকপোস্টের আমদানি-রফতানি বাণিজ্যের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার বিকেল পাঁচটায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এর উদ্বোধন করেন। এ উপলক্ষে বেনাপোল চেকপোস্ট আন্তর্জাতিক বাস টার্মিনালের দ্বিতীয় তলায় এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দিল্লী এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে এই ভিডিও কনফারেন্সে যোগ দেন। ভিডিও কনফারেন্সে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জীও অংশগ্রহণ করেন। ভিডিও কনফারেন্সে খুলনা বিভাগীয় কমিশনার আব্দুস সামাদ, বেনাপোল কাস্টমস হাউসের কমিশনার এএফএম আব্দুল্লাহ, বেনাপোল বন্দরের পরিচালক নিতাই চন্দ্র সেন, যশোরের জেলা প্রশাসক ড. হুমায়ুন কবীর, বিজিবির কমান্ডিং অফিসার লে. কর্নেল জাহাঙ্গীর হোসেন, পুলিশ সুপার আনিছুর রহমান, যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহীদুল ইসলাম মিলন, শার্শা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মোজাফ্ফর হোসেন, শার্শা উপজেলা চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম মঞ্জু, শার্শা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুস সালাম, বেনাপোল সিএ্যান্ডএফ এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মফিজুর রহমান সজন, পোর্ট থানার অফিসার ইনচার্জ অপূর্ব হাসানসহ বন্দর ব্যবহারকারী এবং এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন। দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী এই ভিডিও কনফারেন্সে প্রায় ২০ মিনিট ধরে কথা বলেন। আগে কথা বলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সবশেষে কথা বলে ভিডিও কনফারেন্সের সমাপ্তি ঘোষনা করেন। ভিডিও কনফারেন্সে বেনাপোল সিএ্যান্ডএফ এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মফিজুর রহমান সজনও বক্তব্য রাখেন। বেনাপোল বন্দরের অবকাঠামোগত যেসব সমস্যা রয়েছে, তা তিনি তুলে ধরেন দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর কাছে। দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী সমস্যাগুলো পর্যায়ক্রমে সমাধানের আশ্বাস দেন। দেশের বৃহত্তম স্থলবন্দর বেনাপোলের বিপরীতে ভারতের পেট্রাপোল বন্দর এলাকায় ‘সমন্বিত চেকপোস্ট’ তৈরির কাজ শুরু হয় কয়েক বছর আগে। ৪২ হেক্টর জমির ওপর তৈরি এই আধুনিক চেকপোস্টের নানা সুযোগ-সুবিধা। এরমধ্যে ট্রাক টার্মিনাল, এয়ারকন্ডিশন ওয়্যার হাউস, এক্সপোর্ট-ইমপোর্ট জোন ও স্ক্যানিং মেশিনসহ বিশ্বের আধুনিক বন্দরের সব সুযোগ-সুবিধা থাকছে। ইতোপূর্বে যানজট নিরসনে এ পথে শুধু রফতানি বাণিজ্য শুরু হলেও এখন থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে আমদানি-রফতানি দুটোই শুরু হতে যাচ্ছে । এদিকে আধুনিকায়নের ফলে বাংলাদেশ থেকে পণ্য রফতানি যেমন কয়েকগুণ বৃদ্ধি পাবে তেমনি আমদানিও বাড়বে কয়েকগুণ বলে আশা করছেন বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা। সেই সঙ্গে পেট্রাপোল-বেনাপোল বন্দর দিয়ে ট্রানজিট সুবিধাও নেবে ভারত সরকার। বেনাপোলের ব্যবসায়ীরা জানান, বর্তমানে পেট্রাপোল বন্দরের যে পরিকাঠামো রয়েছে, তাতে বহু সমস্যা। পেট্রাপোল সেন্ট্রাল ওয়্যার হাউস কর্পোরেশনের যে গুদাম রয়েছে তাতে সব মিলিয়ে ৯০০টি ট্রাক দাঁড়াতে পারে এক সঙ্গে। ট্রাক পরীক্ষার উপযুক্ত ব্যবস্থা নেই। পণ্যভর্তি ট্রাকের মধ্যে পাচারের নানা উপকরণ চলে গেলেও তা বোঝার উপায় নেই। তা ছাড়া, একই এলাকা দিয়ে পাসপোর্ট নিয়ে মানুষ ও পণ্যসহ ট্রাক যাতায়াত করে। ফলে অসুবিধার মধ্যে পড়তে হয় সকলকে। ওই সব অসুবিধা দূর করে এবং বাংলাদেশের সঙ্গে স্থলপথে বাণিজ্যের কাজে গতি আনতে পেট্রাপোল বন্দরের পাশেই আধুনিক ‘সমন্বিত চেকপোস্ট’ তৈরির পরিকল্পনা করে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার। কয়েক বছর আগে ওই কাজের সূচনা করেছিলেন ভারতের তৎকালীন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পি চিদম্বরম। যদিও কাজ শেষ করার নির্দিষ্ট সময়সীমা আগেই শেষ হয়ে গেছে। ভারতের শুল্ক দফতরের এক কর্মকর্তা জানান, এখানে এক সঙ্গে দু’হাজার ট্রাক দাঁড়াতে পারবে। এখন শুধু পণ্য আমদানি-রফতানির কাজই হবে। ভবিষ্যতে এখান দিয়ে যাত্রী যাতায়াতের কথা আছে। বেনাপোল আন্তর্জাতিক প্যাসেঞ্জার টার্মিনাল ও ওপারে পেট্রাপোল বন্দরে পৃথক ভিডিও কনফারেন্সের আয়োজন করেন উভয় দেশের বন্দর কর্তৃপক্ষ। সমন্বিত চেকপোস্ট ছাড়াও বেনাপোল বন্দরের লিংক রোড, বাস টার্মিনালসহ কয়েকটি স্থাপনা উদ্বোধন করা হয়।
×