ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

পদ্মার বাঁধ সংরক্ষণের অর্থ লোপাট

প্রকাশিত: ০৪:৩২, ২২ জুলাই ২০১৬

পদ্মার বাঁধ সংরক্ষণের অর্থ লোপাট

স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী ॥ শুষ্ক মৌসুমে বসে থেকে বর্ষায় এসে রাজশাহী শহররক্ষা বাঁধের সংরক্ষণকাজের নামে প্রায় দেড় কোটি টাকা হরিলুটের অভিযোগ উঠেছে। পেছনের তারিখ দিয়ে তিন দিন আগে বানানো কাঁচা সিসি ব্লক বসানো হচ্ছে রাজশাহী শহররক্ষা বাঁধে। তাও আবার পানির মধ্যে। এ নিয়ে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন রাজশাহী সদর আসনের এমপি ফজলে হোসেন বাদশা। রাজশাহী শহর ঘেঁষে বয়ে চলা পদ্মায় বৃহস্পতিবার গিয়ে দেখা যায় পানি বাড়তির দিকে। নদীতে স্রোতও আছে। কোথাও কোথাও দেখা দিয়েছে ভাঙ্গন। আর এ অবস্থায় রাজশাহী পুলিশ লাইনসের পাশে নদীপাড়ে পানির ভেতর কংক্রিটের ব্লক স্থাপন করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। পাউবো কর্মকর্তাদের যুক্তি, নদীপাড়ের এ এলাকাটিতে এখনই ব্লক স্থাপন করা না হলে এবারের ভরা মৌসুমেই তলিয়ে যেতে পারে শহর। তবে স্থানীয়দের ভাষ্য, প্রতি বছরই পদ্মায় পানি আসার পর এ এলাকাটিতে নদীপাড় সংরক্ষণের কাজ শুরু করে পাউবো। কোটি কোটি টাকার প্রকল্পে নয়-ছয় করতেই এটি করা হয়। নগরীর টি-বাঁধ এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, নদীপাড়ের ব্লক তৈরির কাজ চলছে। একই সঙ্গে নদীপাড়ে পানির ভেতর স্থাপন করা হচ্ছে কংক্রিটের ব্লক। স্থানীয় লোকজন জাুনান, ঈদের ১০ দিন আগে থেকে এ এলাকায় ব্লক স্থাপনের কাজ শুরু হয়। কিন্তু ঈদের পর থেকেই এখানে পানি চলে আসে। এর পর থেকেই হাঁটুপানির ভেতর অনুমান করে দায়সারাভাবে ব্লক স্থাপন করছেন শ্রমিকরা। স্থানীয়দের অভিযোগ, ব্লক তৈরি ও স্থাপনের স্থানে সব সময়ের জন্য পাউবোর একজন প্রকৌশলী উপস্থিত থাকার কথা। কিন্তু পাউবোর দায়িত্বপ্রাপ্ত ওই উপ-সহকারী প্রকৌশলী সেখানে উপস্থিত থাকেন না। তার জায়গায় তিনি অফিসের একজন পিয়নকে সেখানে রেখে যান। ফলে ব্লক তৈরি থেকে স্থাপন- সবকিছুতেই ঘাপলা করছেন ঠিকাদারের লোকজন। সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, পানির ভেতর যেভাবে ব্লক স্থাপন করা হচ্ছে, তাতে এবারের মৌসুমেই পানির স্রোতে সব ব্লক নড়ে গিয়ে বাঁধ ভেঙ্গে যাওয়ার আশঙ্কা আছে। এরই মধ্যে প্রথম দিকে স্থাপন করা বেশকিছু ব্লক সরে গেছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এক কোটি ৪০ লাখ টাকা ব্যয়ে ব্লক স্থাপনের কাজটি করছে মেসার্স মোল্লা এন্টারপ্রাইজ নামে নাটোরের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। তবে নদীপাড়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ও পাউবো কর্মকর্তাদের পাওয়া যায়নি। শামিম হোসেন নামে এক যুবক নিজেকে ঠিকাদারের তত্ত্বাবধায়ক পরিচয় দিয়ে জানান, এখন পানির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে শ্রমিকদের কাজ করতে হচ্ছে। এজন্য বৈদ্যুতিক বাতি জ্বালিয়ে শ্রমিকদের রাতেও পানির ভেতর কাজ করানো হচ্ছে। এ ব্যাপারে রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মুখলেসুর রহমান বলেন, এ মুহূর্তে টি-বাঁধ এলাকা সংরক্ষণ করা না হলে শহর তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। পুলিশ লাইনসও বিলীন হয়ে যেতে পারে। এছাড়া জেলা প্রশাসক, পুলিশ কমিশনার, সিনিয়র জেল সুপার ও সিভিল সার্জনসহ বেশ কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তার বাংলোও পদ্মায় বিলীনের শঙ্কা রয়েছে। তাই তড়িঘড়ি করে হলেও কাজটি করা হচ্ছে। এতে কোন ত্রুটি থাকলে পানি নেমে যাওয়ার পর তা ঠিক করে দেয়া হবে বলে জানান তিনি। এদিকে পদ্মা বাঁধের কাজ পরিদর্শনে গিয়ে ক্ষুব্ধ হয়েছেন এমপি ফজলে হোসেন বাদশা। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, নদীর তীর রক্ষণাবেক্ষণের নামে এভাবে কাজ করলে তা আদৌ কোন কাজে আসবে না।
×