ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

ঈদের পর ফের বাড়ছে চিনির দাম

প্রকাশিত: ০৪:২৭, ২২ জুলাই ২০১৬

ঈদের পর ফের বাড়ছে চিনির দাম

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ ঈদের পর বাজার মনিটরিং বন্ধের কারণে খুব অল্প সময়ের মধ্যে চিনিসহ অন্যান্য পণ্যের দাম ক্রমেই বাড়ছে। সবচেয়ে দ্রুত গতিতে অনেকটা লাগামহীন বাড়ছে চিনির দাম। এভাবে দাম বাড়তে থাকলে সব ধরনের মিষ্টি জাতীয় পণ্যের দাম অনেক বেশি বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন সাধারণ ভোক্তারা। বাজার বিশ্লেষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত এক বছরে দেশের খুচরা বাজারে চিনির দাম ৬০ শতাংশ বেড়েছে। শুল্ক বৃদ্ধির পাশাপাশি চিনি পরিশোধনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর কারসাজিতে পাইকারি বাজারে দফায় দফায় দাম বাড়ার কারণে খুচরা বাজারেও এই পণ্যের দাম বাড়ছে। রমজান মাসে বাজার মনিটরিংয়ের কারণে খুচরা বাজারে প্রতি কেজি চিনি ৫০-৬০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। মাত্র দুই সপ্তাহের ব্যবধানে কেজি প্রতি ১৫-২০ টাকা করে বেড়ে ৭০ টাকা ছাড়িয়ে গেছে। চলতি বছরের জানুয়ারিতে প্রতি মণ চিনির পাইকারি মূল্য ছিল ১ হাজার ২০০ টাকা। গত কয়েকদিন ধরে পাইকারি বাজারে ২ হাজার ৩৮০ টাকা থেকে ২ হাজার ৪৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যটি। আর খুচরা বাজারে প্রতি মণ চিনি ২ হাজার ৪৯০ টাকা থেকে ২ হাজার ৫৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। চিনির দাম বাড়ার কারণ অনুসন্ধানে জানা গেল, ঈদের সরকারি ছুটি শেষ হলেও দেশের ৬ বেসরকারি চিনি পরিশোধন মিলের মধ্যে ৫টি এখনও চালু হয়নি। অন্যদিকে পর্যাপ্ত মজুদ থাকলেও পণ্য সরবরাহে বাংলাদেশ খাদ্য ও চিনি শিল্প কর্পোরেশনের (বিএফএসআইসি) অনীহা দেখা যাচ্ছে। চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের বিভিন্ন আড়তে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঈদের আগে গত ৫ জুলাই পর্যন্ত মিল মালিকরা চিনি সরবরাহ করেন। ঈদের ছুটির পর দেশের ৬টি বেসরকারি চিনি পরিশোধন মিলের মধ্যে কেবল মেঘনা গ্রুপের ইউনাইটেড সুগার মিলস লিমিটেড দৈনিক দু-আড়াই হাজার টন চিনি সরবরাহ করছে। অন্য ৫টি মিল এখনও চালু হয়নি। আগামী শনিবারের আগে এসব মিলের উৎপাদন শুরুর সম্ভাবনা নেই। দেশে প্রতিদিন প্রায় সাড়ে চার হাজার টন চিনির চাহিদা থাকলেও দৈনিক সরবরাহ অর্ধেকেরও কম। সরবরাহ সংকটের অজুহাতে পাইকারি বাজারে চিনির দাম বাড়াচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। এর প্রভাব পড়ছে খুচরা বাজারে। ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে সাধারণ ভোক্তারা। বাজার বিশ্লেষকরা জানান, ঈদের আগে প্রশাসনের চাপে পাইকারি বাজারে ন্যায্যমূল্যে পণ্য বিক্রির কার্যক্রম থাকলেও বর্তমানে এ রকম বাধ্যবাধকতা নেই। ফলে বর্ধিত দামে চিনি কিনে বেশি দামেই বিক্রি করছেন খুচরা ব্যবসায়ীরা। এদিকে পরিশোধন মিল চালু না হলেও চিনির সরবরাহ আদেশে (এসও) বিরতি দিচ্ছে না পাইকারি বাজারের ব্যবসায়ীরা। অতিরিক্ত মুনাফার লোভে খাতুনগঞ্জের অধিকাংশ ব্যবসায়ী চিনির এসও নিচ্ছেন। অন্যদিকে চাক্তাই ও আছাদগঞ্জের সব গুদামে চিনির পর্যাপ্ত মজুদ থাকলেও চড়া দাম না পেলে তা বিক্রি করছেন না মজুতদাররা। গত সোমবারও পাইকারি বাজারে চিনির এসও লেনদেন হয়েছে মণপ্রতি ২ হাজার ৪০০ টাকা থেকে ২ হাজার ৪৫০ টাকায়। চিনি সরবরাহ না থাকলেও পাইকারি বাজারে এসও ছেড়ে অর্থ সংগ্রহের বিষয়টিকে বাজার অস্থির হওয়ার অন্যতম কারণ বলে দাবি করেছেন বাজার বিশ্লেষকরা। তারা জানান, চিনির দাম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে চিনি সংশ্লিষ্ট পণ্যের দামও বাড়ছে। এমনকি প্রতিকাপ চায়ের দামও বাড়ানো হচ্ছে।
×