ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

গ্যাসের দাম বাড়লে হুমকিতে পড়বে অর্থনীতি

প্রকাশিত: ০৪:২৭, ২২ জুলাই ২০১৬

গ্যাসের দাম বাড়লে হুমকিতে পড়বে অর্থনীতি

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ গ্যাসের দাম বাড়লে দেশের অর্থনীতি মারাত্মক হুমকিতে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই)। বৃহস্পতিবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ শঙ্কা প্রকাশ করে ঢাকার ব্যবসায়ীদের এ সংগঠন। বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে, স্বল্প সময়ের ব্যবধানে আবারও গ্যাসের দাম বাড়ানোর পরিকল্পনা সম্পর্কিত বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণ ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের ধারাকে সমুন্নত রাখার লক্ষ্যে এ সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার দাবি জানাচ্ছে ডিসিসিআই। ডিসিসিআই মনে করে, গ্যাসের দাম বাড়ানোর এ সিদ্ধান্ত ব্যবসা-বাণিজ্যে নানামুখী নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। এর ফলে ব্যবসার ব্যয় বাড়বে এবং রফতানি বাধাগ্রস্ত হবে। গ্যাসের দাম বাড়ার কারণে মূল্যস্ফীতি ডাবল ডিজিটে উন্নীত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে, যা আমাদের অর্থনীতির জন্য মারাত্মক হুমকির কারণ হতে পারে। ডিসিসিআই মনে করে, ব্যবসা-বাণিজ্য ও অর্থনীতির নানামুখী কর্মকা- মেটানোর জন্য শিল্প-কারখানাগুলোতে পর্যাপ্ত পরিমাণে গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করা যায়নি। তদুপরি সার্বিকভাবে এ মূল্য বৃদ্ধির ফলে ব্যবসায় ব্যয় আরও বাড়বে। বিকল্প হিসেবে ডিসিসিআই মনে করে, সরকার বিশ্ববাজারে তেলের হ্রাসকৃত মূল্যের সুযোগ গ্রহণ করে তেল আমদানি করে জ্বালানির অতিরিক্ত চাহিদা মেটাতে পারে বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়। এতে আরও বলা হয়, গত বছরের সেপ্টেম্বরে গ্যাসের দাম গড়ে ২৬ দশমিক ২৯ শতাংশ বাড়ানো হয়েছিল। সম্প্রতি গ্যাস খাতের কোম্পানিগুলো গড়ে ৮৮ শতাংশ দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে। এর মধ্যে সর্বোচ্চ দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব রয়েছে গৃহস্থালি কাজে ব্যবহৃত গ্যাসের ১৪০ শতাংশ। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৩০ শতাংশ দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে ক্যাপটিভ বিদ্যুতকেন্দ্রে ব্যবহৃত গ্যাসের। বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, শিল্পে ব্যবহৃত গ্যাসের দাম ৬২ শতাংশ বৃদ্ধির প্রস্তাব রয়েছে। এ খাতে ব্যবহৃত গ্যাসের দাম ৬ টাকা ৭৪ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ১০ টাকা ৯৫ পয়সা প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ছাড়াও সার উৎপাদনে ব্যবহৃত গ্যাসের দাম ২ টাকা ৫৮ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৪ টাকা ৪১ পয়সা প্রস্তাব করা হয়েছে। এ হিসাবে, সার উৎপাদনে ব্যবহৃত গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব এসেছে ৭১ শতাংশ, যার ফলে কৃষি খাতের পণ্য উৎপাদনে ব্যয় বৃদ্ধির আশঙ্কা রয়েছে। বাংলাদেশের অর্থনীতির ধারাকে গতিশীল রাখার জন্য সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগ (এফডিআই) আকর্ষণ করার ক্ষেত্রে মূল্য বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে এবং ভবিষ্যতে বিদেশী বিনিয়োগকারীদের এ দেশে বিনিয়োগে নিরুৎসাহিত করবে বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে। ক্যাপটিভ বিদ্যুত ব্যবহারের ফলে টেক্সটাইল, তৈরি পোশাকসহ অন্যান্য খাতগুলো ইতোমধ্যে প্রচ- চাপের মধ্যে রয়েছে। এ পরিস্থিতিতে গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির কারণে বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধি পেলে এ খাতগুলোর অগ্রগতির ধারা ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। গ্যাসের মূল্য আবার বাড়ানো হলে তৈরি পোশাক খাত এবং অন্যান্য আমদানি বিকল্প রফতানিনির্ভর শিল্প পণ্যের উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় তাদের প্রতিযোগী সক্ষমতা হ্রাস পাবে এবং আন্তর্জাতিক বাজারে টিকে থাকার সম্ভাবনা কমবে। বাণিজ্যিক পরিবহন খাতে এর প্রভাব পড়ার কারণে ব্যবসায় ব্যয় বৃদ্ধি ও পণ্য সরবরাহ শৃঙ্খলে (সাপ্লাই চেইন) ব্যয় বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে, যার প্রভাব সাধারণ ভোক্তাশ্রেণীর ওপর গিয়ে পড়বে। এ ধরনের মূল্য বৃদ্ধি অনৈতিকভাবে অপব্যবহারের সম্ভাবনা সৃষ্টি করতে সহায়তা করে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে। গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির ফলে বর্তমান সরকার ঘোষিত ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হওয়া এবং ঢাকা চেম্বার প্রণীত ২০৩০ সালের মধ্যে ৩০তম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশে পরিণত হওয়া লক্ষ্যমাত্রা বাধাগ্রস্ত হবে, যা কাম্য নয়। তাই দেশের অর্থনীতির বৃহত্তর স্বার্থে ঢাকা চেম্বার গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির এ সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার জোর দাবি জানাচ্ছে।
×