ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সুমন্ত গুপ্ত

প্রবাসে মঞ্চায়িত ইচ্ছামতির কেচ্ছা

প্রকাশিত: ০৬:৫৫, ২১ জুলাই ২০১৬

প্রবাসে মঞ্চায়িত ইচ্ছামতির কেচ্ছা

স্যাটেলাইট চ্যানেলের বাহারি অনুষ্ঠানমালা, ইন্টারনেট ও বহুমাত্রিক যোগাযোগ এবং সামাজিক মাধ্যমগুলোর প্রতিযোগিতামূলক এক সংক্রামক পরিবেশের মাঝে প্রবাস জীবনে ও দেশীয় সংস্কৃতি বিকাশের লক্ষে ২০০৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের আটলান্টাইয় যাত্রা শুরু করে সেবা বাংলা লাইব্রেরি। শুরু থেকেই নতুন কিছু করার প্রয়াস ছিল তাদের বলছিলেন সেবা বাংলা লাইব্রেরির অন্যতম উদ্যোক্তা মোহাম্মদ হারুন রশীদ। প্রবাস জীবনে শত ব্যস্ততার মাঝে ও সপ্তাহের অন্তত একদিন একত্রিত হন প্রবাসী বাঙালীরা। প্রবাসের মাটিতে বাংলা সংস্কৃতিকে তুলে ধরা ও তরুণপ্রজন্মকে সম্পৃক্ত ও উৎসাহিত করার জন্যই এ প্রয়াস। তারা তাদের ছেলে মেয়েদের যুক্ত করে রাখতে চান বাঙালী কৃষ্টির সঙ্গে। সৃষ্টির আদি যুগ থেকে শুরু করে যুগে যুগে মানুষের জীবনকে ঘিরে সামাজিকভাবে যে বৈষম্য বিদ্যমান, সেই বৈষম্যের কারণে মানুষে মানুষে সৃষ্টি হয়েছে দূরত্ব। এই বৈষম্য মানুষকে কষ্ট দেয়। ম্লান করে দেয় মানবিক সম্পর্কের ললিতকলা। অন্তরে গভীরে ক্ষতের সৃষ্টি করে। সমাজের কাঠামোকে দুর্বল থেকে দুর্বলতর করে তোলে। ব্যাহত করে মানুষে মানুষে মিলনবন্ধন। বিঘিœত করে সম্মিলিত সামাজিক উন্নয়ন প্রক্রিয়া। সেই সব প্রতিকূলতাকে জয় করে সমস্ত বৈষম্যের জড়তাকে পেছনে ফেলে উন্নত প্রগতিশীল জীবনধারার আলোয় জীবন ও সমাজকে ইতিবাচক পরিবর্তনের ছোঁয়ায় ঢেলে সাজাবার জন্য কাজ করছে সেবা বাংলা লাইব্রেরি। নাটক জীবনের কথা বলে। মানুষের কথা বলে। জীবনের সূক্ষ্ম অনুভূতির কথা বলে। সমাজ-সভ্যতার কথা বলে। ইতিহাসের কথা বলে। জীবনের হাসি-আনন্দ, দুঃখ-বেদনার কথা বলে। জীবনের চড়াই-উৎরাই, ভাঙা-গড়ার কথা বলে। নাটক হচ্ছে মানব জীবনের, মানব সমাজের দর্পণ খ-িত চিত্রে সেটা মঞ্চ নাটক হোক, পথ নাটক হোক অথবা টিভি নাটক হোক। বিশ্বযুদ্ধ হতে শুরু করে পৃথিবীর দেশে দেশে নাটক ও সংস্কৃতি একটি বিশাল ভূমিকা রেখে আসছে। ১৯৩৫ সালে যখন বিশ্বযুদ্ধ সমাগত, তখন হিটলার আর জাপানী সমর নায়করা নিচ্ছে ভয়াবহ আক্রমণাত্মক যুদ্ধ প্রস্তুতি। মানব জাতিকে এই ফ্যাসিস্টদের ঘৃণ্য থাবা থেকে রক্ষা করার জন্য ফরাসী সাহিত্যিক রঁম্যারোলা, আরিরাঁববুস এবং রুশসাহিত্যিক ম্যাক্সিম গোর্কি বিশ্বের মানবতাবাদী শিল্পী সাহিত্যিকদের ডাকলেন এবং তাদের নিয়ে ১৯৩৫ সালের ২১ জুন প্যারিসে মহাসম্মেলন করলেন। ওই বিশাল মহাসম্মেলনে ইন্টারন্যাশনাল এ্যাসোসিয়েশন অব রাইটার্স ফর দ্য ডিফেন্স অব কালচার এগেইনস্ট ফ্যাসিজম সংগঠন গঠন করলেন। পরবর্তীতে এই সংগঠনটি বিশ্বযুদ্ধের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে বিশ্ব বিবেককে নাড়া দিয়েছিল। নাটক আমাদের সাংস্কৃতিক মূলধারার অন্যতম বাহন। তারই ধারাবাহিকতায় যুক্তরাষ্ট্রের আটলান্টার বার্কমার হাইস্কুল মিলনায়তনে মঞ্চস্থ হলো নাটক ‘ইচ্ছামতির কিচ্ছা। প্রবাসী নাট্যকার শামিমুল ইসলাম শামিমের রচনা ও নির্দেশনায় নাটকটিতে বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেন শামিম, আকমল, তৃষা, লুবনা, দিলু, মোহসীন, ভাস্কর, মারুফ, সুমন, পরিমল, সাগর, প্রতুষা প্রমুখ। নাট্যকার শামিমুল ইসলাম শামিম বলেন দেশের প্রেক্ষাপটে টিভি নাটকের পাশাপাশি মঞ্চ নাটক ও পথ নাটক মঞ্চায়িত হয়ে আসছে বহু বছর ধরে। মহিলা সমিতি থেকে শুরু করে শিল্পকলা একাডেমি, শহীদ মিনার, জাতীয় নাট্যমঞ্চসহ বিভিন্ন জায়গায় মঞ্চ নাটক ও পথ নাটক উপস্থাপিত হয়ে আসছে। অনেক নাট্যগোষ্ঠী বাংলাদেশের জাতীয় পর্যায়ে সুস্থ সংস্কৃতির বাহক হিসেবে মঞ্চ ও পথ নাটক করে আসছে। আর বিনোদনের পরিবর্তনশীল ধারার প্রেক্ষাপটেও এর আবেদন এখনও অক্ষুণœ। আর দেশের সীমানা ছাড়িয়ে আমাদের সাংস্কৃতিক চর্চা এখন ছড়িয়ে পড়েছে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে। প্রবাসের মাটিতে বসবাসকারী বাংলাদেশীদের অধ্যুষিত প্রতিটি এলাকায় গড়ে উঠেছে এক একটি ক্ষুদ্র বাংলাদেশ। প্রবাসী বাংলাদেশীরা জাতীয় দিবসগুলোতে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে থাকে বাংলাদেশি কৃষ্টি, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে ধরে রাখার জন্য। এছাড়া সারা বছর ধরে চলতে থাকে সঙ্গীতানুষ্ঠান, নৃত্যানুষ্ঠান, পথ মেলা, জনপ্রিয় শিল্পীদের সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা ইত্যাদি। জীবিকার টানে প্রবাসী হলেও তাদের অন্তরের গভীরে এখনো প্রাণের বাংলাদেশ, বাংলাদেশের সবুজ প্রান্তর, রাখালি বাঁশির সুর, গ্রামের আঁকা-বাঁকা মেঠো পথ, নদীতে পাল তুলে ভেসে যাওয়া নৌকা, মাঝির বইঠার টানে পানির ছলাৎ ছলাৎ শব্দ... ইচ্ছামতির কিচ্ছায় মূলত যারা ধর্ম নিয়ে ব্যবসা করে, ধর্মের দোহাই দিয়ে সাধারণ মানুষকে ঠকায় ইচ্ছামতির কিচ্ছায় তা ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করা হয়েছে ।
×