ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

জিকা- ভয় পাচ্ছেন না সিদ্দিক

প্রকাশিত: ০৬:৪২, ২১ জুলাই ২০১৬

জিকা- ভয় পাচ্ছেন না সিদ্দিক

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশের গলফের একমাত্র বিজ্ঞাপন সিদ্দিকুর রহমান। অথচ যাত্রাটা শুরু করেছিলেন গলফ কোর্সের ‘বল বয়’ হিসেবে। ২০১০ সালে প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে ‘এশিয়ান ট্যুর’ এর অন্তর্গত প্রতিযোগিতা ‘ব্রুনাই ওপেন’ জিতে প্রথমবারের মতো পাদপ্রদীপের আলোয় উঠে আসেন তিনি। এরপর আর পেছনের দিকে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। বাংলাদেশের প্রথম গলফার হিসেবে বিশ্বকাপে খেলার পর এবার ‘গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ’ অলিম্পিকেও সরাসরি খেলার অবিস্মরণীয় কীর্তি গড়লেন তিনি। অথচ যখন গলফে খেলা শুরু করেন তখন অলিম্পিক কী তাই বুঝতেন না সিদ্দিকুর রহমান। এ প্রসঙ্গে এক সাক্ষাতকারে তিনি বলেন, ‘আমি যখন খেলতে শুরু করি তখন অলিম্পিক সম্পর্কে কিছুই জানতাম না।’ আর অলিম্পিকে খেলার কথা তো স্বপ্নেই ভাবেননি তখন সিদ্দিকুর, ‘আমি কখনই ভাবিনি অলিম্পিকে খেলব। মরিশাসে টুর্নামেন্টে ভাল করার পরই আমার ভেতরে আত্মবিশ্বাস এসেছে অলিম্পিকের কথা তখনই আমার মাথায় ঢোকে।’ তবে এজন্য কৃতিত্ব দিলেন মালয়েশিয়া থেকে আসা ক্যাডিকে। তিনি বলেন, ‘তিনিই আমাকে প্রথম জানালেন যে মরিশাসে ভাল করতে পারলেই ইতিহাস গড়তে পারবে। এরপর থেকেই আমি অনেক বেশি সতর্ক হই।’ সিদ্দিকুর ছিলেন দরিদ্র পরিবারের সন্তান। মাত্র ১০ বছর বয়সে কুর্মিটোলা গলফ ক্লাবে (কেজিসি) চাকরি শুরু করেছিলেন তিনি। কিন্তু বল বয় হিসেবে যাত্রা শুরু করলেও তখন থেকেই গলফ খেলার দারুণ নেশা হয়ে যায় তার। সেখানে প্রতি সোমবার বল বয়দের গলফ খেলার সুযোগ তৈরি করে দিত কর্তৃপক্ষ। আর সেই সুযোগটাকেই কাজে লাগাতেন সিদ্দিকুর রহমান। আর বল বয় হিসেবে থাকার সময় তার স্বপ্নই ছিল শুধু একজন খেলোয়াড় হওয়ার। এ প্রসঙ্গে ৩১ বছর বয়সী এই গলফ তারকা বলেন, ‘বালক হিসেবে আমার স্বপ্ন ছিল শুধুই একজন খেলোয়াড় হওয়া। কারণ বল বয়ের চেয়ে একজন খেলোয়াড় হওয়াটা অনেক ভাল। আমি যখন খেলা শুরু করি তখন ভাবলাম ভারতে প্রফেশনাল ট্যুরে চাকরি করতে পারলে দারুণ হবে- যা আমার জীবনকেই বদলে দিতে পারে।’ এরপর তো শুধুই ইতিহাস। প্রথম এশিয়ান ট্যুরজয়ী বাংলাদেশী গলফার হিসেবে রাতারাতি আন্তর্জাতিক পরিচিতি তৈরি করে ফেলেন। সেই সঙ্গে বাংলাদেশের গলফ খেলাটিকেও যেন বদলে ফেলেন তিনি। বাংলাদেশের গলফ মানেই যেন সিদ্দিকুর রহমান। বাংলাদেশ অলিম্পিকে প্রথম অংশগ্রহণ করে ১৯৮৪ সালে লস এ্যাঞ্জেলেস অলিম্পিকে। দেশের হয়ে পতাকা বহন করেন এ্যাথলেট সাইদুর রহমান ডন। ১০০ মিটার স্প্রিন্টে অংশ নিয়ে হিটেই বাদ পড়ে যান তিনি। এরপর প্রতি আসরেই অলিম্পিকে বাংলাদেশের প্রতিনিধি ছিল। কিন্তু চূড়ান্ত পর্বে কেউই খেলতে পারেননি। ‘ওয়াইল্ড কার্ড’ নিয়ে খেলার সুযোগ পেলেও হিটেই বাদ। তবে সিদ্দিকুর এবার সরাসরি খেলার সুযোগ পেয়েই নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করলেন। এতে বাংলার টাইগার উডস হিসেবে খ্যাত সিদ্দিকুরও গর্বিত। তিনি বলেন, ‘অলিম্পিকে খেলার সুযোগ পাওয়ার অনুভূতিটা সত্যিই অন্যরকম। আমি গর্ববোধ করছি। আমাদের দেশে গলফ একটা নতুন ইভেন্ট। পরিচিতি খুব বেশি নয়। বলতে গেলে আমাকে দিয়েই শুরু। আমাদের জাতীয় দল দিয়ে শুরু। গলফের সাফল্য এসেছে হাতে গোনা কয়েক বছরে। অল্প সময়ে আমরা অনেক অর্জন করেছি। অলিম্পিকে খেলার সুযোগ পাওয়াটা আমার জীবনে সবচেয়ে বড় অর্জন।’ দুটি এশিয়ান ট্যুরের শিরোপা জিতেছেন। ২০১০ সালে ব্রুনাই ওপেনে এবং ২০১৩ সালে হিরো ইন্ডিয়া ওপেন। পেশাদার গলফার হওয়ার পর এ পর্যন্ত ১২৭ টুর্নামেন্ট খেলেছেন তিনি। গফলের অনেক গভীরে যাওয়ার সুযোগ হয়েছে তার। সেই সব অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগাতে মানসিক প্রস্তুতিও নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন সিদ্দিকুর রহমান। যারা খেলবেন তাদের অনেকের সম্পর্কে জানা আছে তার। কে কোন স্টাইলে খেলেন। কার কি অভিজ্ঞতা রয়েছে। সবই সিদ্দিকুরের জানা আছে। অলিম্পিক গেমসের বড় আসরে যতটুকু সম্ভব বাংলাদেশের পতাকা নিয়ে যেতে চান তিনি। তবে দীর্ঘ সময় পর অলিম্পিকে গলফ ফিরলেও জিকা ভাইরাস আতঙ্কে এবার খেলছেন না অনেক গলফ তারকাই। যাদের মধ্যে রয়েছেন জেসন ডে, ডাস্টিন জনসন, জর্ডান স্পিথ এবং ররি ম্যাকলরয়। কিন্তু জিকা আতঙ্ক উপেক্ষা করে প্রথমবারের মতো পাওয়া সরাসরি খেলার সুযোগ মিস করতে চান না সিদ্দিকুর রহমান। বরং নিজের সেরাটা দিয়ে দেশকে গর্বিত করতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ বাংলার টাইগার উডস! তিনি বলেন, ‘খুব ভালভাবেই নিজেকে প্রস্তুত করে গড়ে তুলছি। আমার সেরাটা দেয়াই আমার মূল লক্ষ্য।’ সৃষ্টিকর্তার উপর ভরসা রেখেই ২ আগস্ট রিওর উদ্দেশে বিমানে উঠবেন সিদ্দিকুর রহমান।
×