ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

যুদ্ধাপরাধী বিচার;###;সাক্ষী ইচব আলীর জবানবন্দী

হোসাইন ও মোসলেমের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধা মালেককে হত্যা করা হয়

প্রকাশিত: ০৫:৫৪, ২১ জুলাই ২০১৬

হোসাইন ও মোসলেমের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধা মালেককে হত্যা করা হয়

স্টাফ রিপোর্টার ॥ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত কিশোরগঞ্জ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার দুই রাজাকার সৈয়দ মোঃ হোসাইন ও মোঃ মোসলেম প্রধানের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের সপ্তম সাক্ষী মোঃ ইচব আলী জবানবন্দী প্রদান করেছেন। জবানবন্দী শেষে আসামিপক্ষের আইনজীবী সাক্ষীকে জেরা করেন। পরবর্তী সাক্ষীর জন্য বৃহস্পতিবার দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। সাক্ষী তার জবানবন্দীতে বলেন, রাজাকার সৈয়দ মোঃ হোসাইন ও মোঃ মোসলেম প্রধানের নেতৃত্বে রাজাকাররা মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মালেককে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে নিরস্ত্র অবস্থায় গুলি করে হত্যা করে। এ ছাড়া আব্দুল খালেকের বাড়ির উঠানে ও রহমত আলীর বাড়ির কাছে ২৬ জনের মৃতদেহ দেখতে পাই। যার মধ্যে আমার চাচা ফুল মিয়া, চাচা আবু, চাচি জোবেদা খাতুন ছিল। অন্যদিকে পটুয়াখালীর মোঃ এছহাক সিকদারসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) দাখিলে ৫ সেপ্টেম্বর দিন ধার্য করেছেন ট্রাইব্যুনাল। চেয়ারম্যান বিচারপতি আনোয়ারুল হকের নেতৃত্বে তিন সদস্য বিশিষ্ট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ বুধবার এ আদেশ প্রদান করেছেন। এ সময় প্রসিকিউশন পক্ষে প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ প্রসিকিউটর রেজিয়া সুলতানা চমন উপস্থিত ছিলেন। আসামিপক্ষে ছিলেন এ্যাডভোকেট আব্দুস সোবহান তরফদার। সাক্ষী তার জবানবন্দীতে বলেন, আমার নাম মোঃ ইচব আলী। আমার বর্তমান বয়স আনুমানিক ৬৬ বছর। আমার ঠিকানা-গ্রাম-গুরুই (পূর্বপাড়া), থানা-নিকলী, জেলা-কিশোরগঞ্জ। দ্বিতীয় শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপড়া করার পর আমি আমার বাবার সঙ্গে কৃষি কাজ শুরু করি। বর্তমানেও আমি কৃষি কাজ করি। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় আমি আমাদের গুরুই গ্রামের বাড়িতে বসবাস করতাম। আমাদের গুরুই গ্রামটি নেড়াঝুড়ি হাওড়ের পশ্চিম পাশে অবস্থিত। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হবার পর আমি আমাদের এলাকার বসু বাহিনীতে যোগদান করি। ঐ বসু বাহিনী ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষে যুদ্ধ করে। সাক্ষী তার জবানবন্দীতে বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় রাজাকার আসামি সৈয়দ মোঃ হোসাইন নিকলী থানায় দারোগা হিসেবে কাজ করতেন। নিকলী থানা সদরের রাজাকার কমান্ডার ছিলেন আসামি মোঃ মোসলেম প্রধান। ১৯৭১ সালের ভাদ্র মাসের ২০ তারিখের ৪/৫ দিন পূর্বে আমরা সংবাদ পাই যে, রাজাকার সৈয়দ মোঃ হোসাইন ও মোঃ মোসলেম প্রধানের নেতৃত্বে রাজাকাররা আমাদের গুরুই গ্রাম আক্রমণ করবে। এর পর ১৯৭১ সালের ভাদ্র মাসের ২০ তারিখ সকাল আনুমানিক ৭টার দিকে এই দুই আসামিসহ তাদের সঙ্গীয় রাজাকাররা দুটি নৌকা ও একটি লঞ্চযোগে আমাদের বাড়ির পূর্ব পাশে ঘাটে আসে। এই সংবাদ পেয়ে আমরা বসু বাহিনীর সদস্যরা তাদের প্রতিহত করার জন্য গোলাগুলি শুরু করি। ১৫/২০ মিনিট গোলাগুলি হওয়ার পর আসামিরা ও রাজাকাররা পিছু হটে তাদের নৌকা ও লঞ্চযোগে আনুমানিক এক মাইল দূরে নেড়াঝুড়ি হাওড়ে গিয়ে অবস্থান নেয়। এর পর আসামিরা ও রাজাকাররা ঐ দিন বেলা ১১টায় আমাদের গুরুই গ্রামের পূর্ব পাড়ায় আক্রমণ চালায়। প্রসিকিউশনের সাক্ষী তার জবানবন্দীতে বলেন, আাসামিদ্বয়ের নেতৃত্বে রাজাকারা মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মালেককে নিরস্ত্র অবস্থায় তার বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে নিকলী থানা সদরে গুলি করে হত্যা করে। আমি সাগর দীঘির কচুরি পানায় আত্মগোপন করি। এ সময় দেখতে পাই আসামিদ্বয়সহ আরও কয়েকজন রাজাকার খালেকের বাড়ির উঠানে ৮/১০ জনকে গুলি করে। রাজাকাররা চলে গেলে আমিসহ আরও কয়েকজন আব্দুল খালেকের বাড়ির উঠানে যাই সেখানে ১০ জনের লাশ দেখতে পাই। যার মধ্যে আমার চাচা ফুল মিয়া, চাচা আবু, চাচি জোবেদা খাতুন এবং আমার প্রতিবেশী লাল হোসেন, সুরুজ আলী, ইছব আলীরাও ছিল। এ ছাড়া রহমত আলী বাড়ির বটতলায় আরও ১৬ জনের লাশ দেখতে পাই। যাদের মধ্যে আফতাব উদ্দিন, রুসমত আলী, মুনতাজ, শরফত আলী ও সুন্দর আলী ছিল। পটুয়াখালীর ৫ রাজাকার ॥ মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় পটুয়াখালীর মোঃ এছহাক সিকদারসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) দাখিলে ৫ সেপ্টেম্বর দিন ধার্য করেছেন ট্রাইব্যুনাল। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন প্রসিকিউটর রেজিয়া সুলতানা চমন। মামলায় মোঃ এছহাক সিকদার ছাড়া অন্য আসামিরা হলেন- মোঃ আব্দুল গনি, মোঃ আউয়াল, মোঃ আব্দুস সাত্তার প্যাদা এবং সোলায়মান মৃধা। বুধবার প্রসিকিউশনপক্ষের এক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি আনোয়ারুল হকের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এ আদেশ দেন। এ সময় ট্রাইব্যুনালে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন রেজিয়া সুলতানা চমন। উপস্থিত ছিলেন, প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুম। এর আগে পূর্ব নির্ধারিত দিন অনুযায়ী বুধবার আসামিদের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) দাখিলের কথা থাকলেও প্রসিকিউশন দুই মাসের সময় আবেদন করেন। শুনানি শেষে আদালত ৫ সেপ্টেম্বর পরবর্তী তারিখ ঠিক করে আদেশ দেন। এ সময় ট্রাইব্যুনালে আসামির কাঠগড়ায় পাঁচজনকে উপস্থিত রাখা হয়েছিল। গত ২৯ জুন পটুয়াখালী সদর থানায় পুলিশের গাড়িতে আগুন এবং কর্তব্যে বাধা দেয়ার অভিযোগে তাদের গ্রেফতার এবং পরে ট্রাইব্যুনালে হস্তান্তর করা হয়। আসামিদের বিরুদ্ধে একাত্তরে অগ্নিসংযোগ, হত্যা, নির্যাতন ও ধর্ষণসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ রয়েছে।
×