ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

যশোরে শেখ হাসিনা আইটি পার্ক

প্রজন্মের স্বপ্ন পূরণের পথে- খুলে যাবে রফতানি আয়ের দ্বার

প্রকাশিত: ০৫:৫১, ২১ জুলাই ২০১৬

প্রজন্মের স্বপ্ন পূরণের পথে- খুলে যাবে রফতানি আয়ের দ্বার

সাজেদ রহমান ॥ দক্ষিণাঞ্চলের ১০ জেলার তরুণ প্রজন্মের স্বপ্ন পূরণ হতে চলেছে। যশোর সফ্টওয়্যার টেকনোলজি পার্ক তাদের স্বপ্ন পূরণ করতে চলেছে। এই আইটি পার্কের মাধ্যমে কর্মসংস্থান হবে এ অঞ্চলের ১৬ হাজার তরুণ-তরুণীর। আর এর মাধ্যমে আগামী ২০২১ সাল নাগাদ পাঁচ বিলিয়ন ডলারের রফতানি আয়ের দ্বার উন্মোচিত হবে। গত ৯ জুন যশোর সফ্টওয়্যার টেকনোলজি পার্কের নাম পরিবর্তন করে ‘শেখ হাসিনা আইটি পার্ক’ নামকরণ করা হয়। সূত্র জানায়, ২০১০ সালের ২৭ ডিসেম্বর যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস উদ্বোধনের সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা দেন উৎপাদনমুখী জনবল সৃষ্টি এবং ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে যশোরে একটি আন্তর্জাতিক মানের আইটি পার্ক স্থাপন করা হবে। এরপর ২০১১ সালের ১৯ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বিজ্ঞান এবং তথ্য ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে প্রধানমন্ত্রীর তৎকালীন একান্ত সচিব-১ নজরুল ইসলাম খান চিঠি পাঠান। দীর্ঘদিনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও যাচাই-বাছাইয়ের পর ২০১৪ সালের ২৫ এপ্রিল যশোর শহরের নাজির শংকরপুর এলাকায় এই পার্কের কাজ আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু করা হয়। বর্তমানে তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের অধীনে প্রায় সাড়ে ৯ একর জমি ও জলাধারের ওপর প্রকল্পের কাজ দ্রুতিগতিতে এগিয়ে চলেছে। ২৮৩ কোটি টাকা ব্যয়ে এই প্রকল্পের অবকাঠামো নির্মাণ কাজ প্রায় শেষের দিকে। প্রকল্পের মূল ভবন ভূমিকম্প প্রতিরোধক কম্পোজিট স্ট্রাকচারে (স্টিল ও কংক্রিট) নির্মিত হচ্ছে। নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুতের জন্য ৩৩ কেভিএ বৈদ্যুতিক সাবস্টেশন স্থাপন করা হবে এবং রাখা হবে দুই হাজার কিলোওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন জেনারেটর। প্রথম দফায় ১৫ তলা ভিত্তির ওপর পাঁচতলা ভবন নির্মিত হচ্ছে। পাঁচ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান প্রকল্পের পাঁচটি অংশে কাজ করছে। গত জুন মাসে এই পার্ক উদ্বোধন করার কথা থাকলেও এর কাজ শেষ না হওয়ায় তা সম্ভব হয়নি। আগামী ডিসেম্বরে এটি উদ্বোধন করা হবে বলে জানিয়েছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। ইতোমধ্যে জাপান ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গসহ বিদেশী বিভিন্ন কোম্পানি শেখ হাসিনা আইটি পার্ক ব্যবহারে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। ৯ জুন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক জাপানের দুটি কোম্পানিসহ বাংলাদেশের ১০টি কোম্পানিকে পার্কের জায়গা বরাদ্দ দেন। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, শ্রমিকরা রাত-দিন অবকাঠামো নির্মাণের কাজ করে যাচ্ছে। এ পার্ককে কেন্দ্র করে ওই এলাকার মানুষের মধ্যে এরইমধ্যে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। একইসঙ্গে উন্নত জীবনের স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে স্থানীয় বাসিন্দাগণ। এলাকার অধিবাসী ও ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশের (আইডিইবি) কেন্দ্রীয় সাবেক সভাপতি এমআর খায়রুল উমাম বলেন, ‘আইটি পার্ক ঘিরে এ অঞ্চলের মানুষ স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে। কারণ, এই পার্ক উদ্বোধন হলে আশপাশের এলাকার মানুষের কর্মসংস্থানের বেশ সুযোগ সৃষ্টি হবে। তাই, আমরা আশাবাদী হয়ে উঠেছি।’ সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পার্কটি চালু হলে আইটি খাতে উদ্যোক্তারা এখানে এসে ব্যবসায় করবেন। এখানে ঠিকানা হবে দেশ-বিদেশের স্বনামধন্য সব সফ্টওয়্যার প্রতিষ্ঠানের। এই পার্কের মাধ্যমে পুরো খুলনা বিভাগের ১০ জেলার অর্থনৈতিক চেহারা পাল্টে যাবে। শেখ হাসিনা আইটি পার্ক প্রকল্পের পরিচালক (পিডি) জাহাঙ্গীর আলম বলেন, কম্পিউটারের সফ্টওয়্যার ডেভেলপমেন্ট, ফ্রি-ল্যান্সিং, কল সেন্টার ও রিসার্চ এ্যান্ড ডেভেলপমেন্টে চার সেক্টরে দেশ-বিদেশের আইটি (তথ্য ও প্রযুক্তি) শিল্প উদ্যোক্তারা বিনিয়োগের সুযোগ পাবেন। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে বিপুল শিক্ষিত বেকার যুবসমাজ রয়েছে। তাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে এ খাতে লাগাতে পারলে গার্মেন্ট শিল্পের মতো আইটি খাতও অর্থনৈতিকভাবে বিশ্বে নেতৃত্ব দিতে পারবে। কেননা আইটি খাতে আমাদের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, এই পার্কে কাজ করতে আসা ১৬ হাজার কর্মীর চোখের স্বাস্থ্য ঠিক রাখার জন্য পার্কের মূল ভবনের সামনে পাঁচ একরের একটি বিশাল জলাধার থাকছে। যেখানে স্বচ্ছ পানিতে ছাড়া হবে দেশী-বিদেশী নানা প্রজাতির মাছসহ জলজ প্রাণী। থাকবে দৃষ্টিনন্দন স্থাপনা। প্রকল্পের নক্শায় এর নাম দেয়া হয়েছে ‘ইকো ট্যুরিজম পার্ক’। এছাড়া মূল ভবনের দক্ষিণ পাশে থাকবে সবুজ বেষ্টনী। যেখানে কর্মীদের পায়ে হাঁটার জন্য আঁকা-বাঁকা পথ থাকবে। নক্শায় এর নাম রাখা হয়েছে ‘গ্রীন জোন’। প্রকল্পের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বিসিএল এ্যাসোসিয়েট্স লিমিটেডের আবাসিক প্রকৌশলী মোর্শেদুল আলম জানান, ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের অধীনে প্রায় সাড়ে ৯ একর জমি ও জলাধারের ওপর প্রকল্পের কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে নেয়া হচ্ছে। ভূমিকম্প প্রতিরোধক পার্কটি চালু হলে আইটি খাতে উদ্যোক্তারা এখানে এসে লাভবান হবেন। গত ৯ জুন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক এখানে এসে মিট দ্য প্রেস অনুষ্ঠানে বলেছেন, দেশে কর্মসংস্থানের অভাবে মেধাবী শিক্ষার্থীরা চলে যেত। এখন দেশেই সেসব মেধাবীর কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ২০২১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীকে সামনে রেখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রূপকল্প ভিশন-২০২১ ঘোষণা করেন। স্বপ্নের সেই ডিজিটাল বাংলাদেশ এখন বাস্তব। প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক আরও বলেন, যশোরে শেখ হাসিনা সফ্টওয়্যার টেকনোলজি পার্ক আজ স্বপ্ন নয় বাস্তব। কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। ইতোমধ্যে ১২টি প্রতিষ্ঠানকে জায়গা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এই পার্কে ১৬ হাজার তরুণ-তরুণীর কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।
×