ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

তারেক-মামুনের অর্থ পাচার মামলার রায় আজ

প্রকাশিত: ০৫:৪৭, ২১ জুলাই ২০১৬

তারেক-মামুনের অর্থ পাচার মামলার রায় আজ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ অর্থ পাচার মামলায় বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও তার বন্ধু গিয়াসউদ্দিন আল মামুনের মামলায় হাইকোর্টের রায় জানা যাবে আজ বৃহস্পতিবার। বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি আমির হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের দ্বৈত বেঞ্চ বৃহস্পতিবার এ রায় ঘোষণা করবেন। বিচারিক আদালতে তারেক রহমানের খালাসের রায়ের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আপীল ও দ-াদেশের বিরুদ্ধে মামুনের করা আপীলের ওপর শুনানি শেষে ১৬ জুন একই বেঞ্চ মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ (সিএভি) রেখেছিলেন। বুধবার প্রকাশিত হাইকোর্টের দৈনন্দিন কার্যতালিকায় বৃহস্পতিবারের তারিখে ৪ নম্বরে মামলাটি রায়ের জন্য রাখা হয়েছে। ঘুষ হিসেবে আদায়ের পর ২০ কোটি টাকা বিদেশে পাচারের অভিযোগে ২০০৯ সালের ২৬ অক্টোবর ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট থানায় এ মামলা করে দুদক। বিচার শেষে ঢাকার তৃতীয় বিশেষ জজ মোঃ মোতাহার হোসেন ২০১৩ সালের ১৭ নবেম্বর বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমানকে বেকসুর খালাস দেন। আর তার বন্ধু ও ব্যবসার অংশীদার গিয়াসউদ্দিন আল মামুনকে দেয়া হয় সাত বছরের কারাদ-; সঙ্গে ৪০ কোটি টাকা জরিমানা। মামলাটি দায়ের থেকে শুরু করে পুরো বিচার প্রক্রিয়াই অনুপস্থিত ছিলেন তারেক। গত আট বছর ধরে তিনি যুক্তরাজ্যে রয়েছেন। আর মামুন জরুরী অবস্থায় গ্রেফতার হওয়ার পর থেকেই কারাগারে। তারেকের খালাসের রায়ের বিরুদ্ধে দুদক ২০১৩ সালের ৫ ডিসেম্বর আপীলের আবেদন করে। শুনানি শেষে ২০১৪ সালের ১৯ জানুয়ারি হাইকোর্ট দুদকের আপীল গ্রহণ করে আসামি তারেককে আত্মসমর্পণ করতে নির্দেশ দেয়। লন্ডনপ্রবাসী তারেক না ফেরায় তার বিরুদ্ধে সমন জারি করে তা তার লন্ডনের ঠিকানায় পাঠানো হয়। কিন্তু তাতেও খালেদা জিয়ার বড় ছেলের সাড়া মেলেনি। দুদকের করা ওই আপীলের সঙ্গে সাজার রায়ের বিরুদ্ধে মামুনের করা আপীলও শুনানির জন্য তালিকায় আসে। এরপর হাইকোর্টে ৪ মে আপীলের ওপর শুনানি শুরু হয়ে শেষ হয় ১৬ জুন। আদালতে গিয়াস উদ্দিন আল মামুনের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন সিনিয়র আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী ও ব্যারিস্টার কায়সার কামাল। দুদকের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী খুরশীদ আলম খান। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, সঙ্গে ছিলেন ডেপুটি এ্যাটর্নি জেনারেল শেখ এ কে এম মনিরুজ্জামান কবির ও সহকারী এ্যাটর্নি জেনারেল শহীদুল ইসলাম খান। তারেক রহমান ‘পলাতক’ থাকায় তার পক্ষে আপীলে কোন আইনজীবী ছিলেন না বলে খুরশীদ আলম খান জানান। ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট থানায় ২০০৯ সালের ২৬ অক্টোবর দায়ের করা এ মামলায় তারেক-মামুনের বিচার শুরু হয় ২০১১ সালের ৬ জুলাই। এ মামলায় অভিযোগ করা হয়, টঙ্গীতে প্রস্তাবিত ৮০ মেগাওয়াট ক্ষমতার একটি বিদ্যুতকেন্দ্র স্থাপনের কাজ নির্মাণ কনস্ট্রাকশনস নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে পাইয়ে দেয়ার আশ্বাস দিয়ে ২০ কোটি ৪১ লাখ ২৫ হাজার টাকা ঘুষ নেন মামুন। ২০০৩ থেকে ২০০৭ সালের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে ‘বিভিন্ন পন্থায়’ ২০ কোটি ৪১ লাখ ২৫ হাজার ৮৪৩ টাকা সিঙ্গাপুরের সিটি ব্যাংকে মামুনের এ্যাকাউন্টে পাচার করা হয়, যার মধ্যে ৩ কোটি ৭৮ লাখ টাকা তারেক খরচ করেন বলে অভিযোগপত্রে বলা হয়। জজ আদালতের রায়ে বলা হয়, ওই টাকা খরচ করার কথা তারেক রহমান অস্বীকার করেননি। ২০০৭ সালে দুদকে দাখিল করা তারেকের হিসাব বিবরণীতে তার উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু তিনি যে মানি লন্ডারিং আইনে অপরাধ করেছেন তা প্রমাণ হয়নি। এদিকে দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান জনকণ্ঠকে বলেছেন মানি লন্ডারিং মামলায় রায় ঘোষণার পর বিচারক দেশ থেকে পালিয়ে যান। তার বিরুদ্ধেও তদন্ত চলছে। তারেক রহমান এখন লন্ডনে অবস্থান করছেন এবং তার অনুপস্থিতিতেই মামলাটির বিচার কার্যক্রম চলে আসছিল। বিচারিক আদালতের রায়ের পর সে বছরের ৫ ডিসেম্বর উচ্চ আদালতে আপীল দায়ের করে দুদক। ২০১৪ সালের ১৯ জানুয়ারি এ আপীল শুনানির জন্য গ্রহণ করে তারেক রহমানকে বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণের আদেশ দেন বিচারপতি নিজামুল হক ও বিচারপতি মোঃ জাহাঙ্গীর হোসেনের হাইকোর্ট বেঞ্চ। মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন-২০০২ এর ২ (ঠ), (অ), (আ) ও ১৩ ধারায় ঢাকার তৃতীয় বিশেষ জজ আদালতের বিচারক মোঃ মোতাহার হোসেন দুদকের দায়ের করা মামলার রায়টি দিয়েছিলেন। রায়ে বিচারক বলেন, মামলার প্রধান সাক্ষী নির্মাণ কন্সট্রাকশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক খাদিজা ইসলাম মামুনকে দেয়া টাকা কনসালটেন্সি ফি হিসাবে দিয়েছেন বলে সাক্ষ্য দিয়েছেন, মামুনও আত্মপক্ষ সমর্থন করতে গিয়ে ওই টাকা নেয়ার কথা স্বীকার করেন। কিন্তু ওই পরিমাণ টাকা ফি হিসাবে নেয়ার মতো কনসালটেন্সি ফার্ম মামুনের ছিল না। ওই টাকা অনৈতিকভাবে চাপ দিয়ে নেয়া হয়েছিল বলে প্রমাণিত হয়েছে।
×