ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন

রিপাবলিকান দলের চূড়ান্ত মনোনয়ন পেলেন ট্রাম্প

প্রকাশিত: ০৫:৪৫, ২১ জুলাই ২০১৬

রিপাবলিকান দলের চূড়ান্ত মনোনয়ন পেলেন ট্রাম্প

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ যুক্তরাষ্ট্রের আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান দলের আনুষ্ঠানিক মনোনয়ন পেয়েছেন ধনকুবের ডোনাল্ড ট্রাম্প। মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের ক্লিভল্যান্ডে রিপাবলিকান দলের জাতীয় কনভেনশনে ট্রাম্পকে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে চূড়ান্ত মনোনয়ন দেয়া হয়। সব জল্পনাকল্পনার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে মনোনয়ন নিশ্চিত হলো ট্রাম্পের। ১৩ মাসের মনোনয়নযুদ্ধ শেষে ট্রাম্পকে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করল রিপাবলিকানরা। আজ বৃহস্পতিবার ট্রাম্প মনোনয়ন গ্রহণ করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। এছাড়া জাতীয় কনভেনশনে প্রতিনিধিরা কণ্ঠভোটে মাইক পেন্সকে ট্রাম্পের রানিং মেট হিসেবে মনোনয়ন দিয়েছেন। খবর বিবিসি ও এএফপির। মনোনয়ন নিশ্চিত হওয়ার পর ভিডিও লিংকের মাধ্যমে ট্রাম্প রিপাবলিকান ডেলিগেটদের উদ্দেশে বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, এই মনোনয়ন একটি সম্মান। এখন ডেমোক্র্যাটিক দলের প্রার্থীকে হারানোর পালা। তিনি ডেলিগেটদের উদ্দেশে আরও বলেন, এটা একটা আন্দোলনও। ট্রাম্পের ছেলে ডোনাল্ড ট্রাম্প জুনিয়র নিউইয়র্কে রিপাবলিকান দলের সমর্থকদের উদ্দেশে বলেন, তার বাবা রিপাবলিকান কনভেনশনে প্রতিনিধিদের উপস্থিতি ভোটে প্রার্থিতা নিশ্চিত করেছেন। তিন ভাইবোনকে পাশে নিয়ে ট্রাম্প জুনিয়র বলেন, ‘প্রতিনিধিদের ভোটে সবার ওপরে থাকা ডোনাল্ড ট্রাম্পের নাম ঘোষণা করতে পেরে আমি গর্বিত। অভিনন্দন বাবা, আমরা তোমাকে ভালবাসি।’ ট্রাম্পের ছোট মেয়ে টিফানি ট্রাম্প তার স্কুলের প্রতিবেদন কার্ডে বাবার লেখা নোট নিয়ে স্মৃতিচারণ করেন এবং বন্ধুদের সঙ্গে তার বাবাকে পরিচয় করিয়ে দেবার সময় তিনি কেমন উত্তেজিত ছিলেন তাও উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, তার বাবা ‘জন্মগতভাবে একজন সাহসী ব্যক্তি’। তিনি সব সময় তাকে কঠোর কাজ করতে উৎসাহ জুগিয়েছেন। নবেম্বরের নির্বাচনে হিলারি ক্লিনটনের বিরুদ্ধে লড়বেন আবাসন ব্যবসায়ী ট্রাম্প। এখনও চূড়ান্ত মনোনয়ন না পাওয়া হিলারি আগামী সোমবার থেকে শুরু হওয়া ডেমোক্র্যাটিক ন্যাশনাল কনভেনশনে প্রার্থিতা নিশ্চিত করবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। ট্রাম্পের প্রার্থিতা নিশ্চিত হওয়ার পর টুইটারে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন সাবেক ফার্স্ট লেডি হিলারি। প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, মাত্রই ডোনাল্ড ট্রাম্পকে প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করেছে রিপাবলিকান পার্টি। ওভাল অফিসে তার পা পড়বে না, এমনটা নিশ্চিত করাই এখন আমাদের দায়িত্ব। এদিকে জাতীয় সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে বক্তারা ডেমোক্র্যাাট দলের সম্ভাব্য প্রার্থী হিলারি ক্লিনটনের বিরুদ্ধে আক্রমণাত্মক বক্তব্য রেখেছেন। নিউজার্সির গবর্নর ও সাবেক প্রসিকিউটর ক্রিস ক্রিস্টি হিলারির ‘ছদ্ম বিচার’র আয়োজন করেন। এ সময় উপস্থিত ডেলিগেটরা ‘তাকে আটক কর’ বলে সেøাগন দেন। প্রতিনিধি পরিষদের স্পীকার পল রায়ান ঘোষণা করেন, ক্লিনটন যুগের অবসান হয়েছে আগেই। ওবামা যুগও শেষ পর্যায়ে। ২০১৬ সাল হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের এগিয়ে যাওয়ার বছর। ক্রিস্টি ও অন্য বক্তারা পররাষ্ট্রমন্ত্রী থাকার সময় একটি ব্যক্তিগত ই-মেইল এ্যাকাউন্ট ব্যবহারের জন্য হিলারির সমালোচনা করেন। এফবিআই তদন্তে বলা হয়েছে, হিলারি ‘চরম দায়িত্বজ্ঞানহীন’ ছিলেন। তবে তার কর্মকা- অপরাধের পর্যায়ে পড়ে না। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দৌড়ে ব্যবসায়ী ডোনাল্ড ট্রাম্পকে প্রথমে কেউ পাত্তা দেয়নি। তাকে নিয়ে অনেকে হাস্যরসও করেছেন। তার বিরোধিতায় মুখর ছিলেন দলীয় নেতারা। সেই ট্রাম্পই শেষ পর্যন্ত আসন্ন মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান দলের মনোনয়ন পেলেন। ট্রাম্পের প্রার্থিতা নিশ্চিত হওয়ার বিষয়টিকে মার্কিন রাজনীতির জন্য একটি স্মরণীয় ঘটনা হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। কারণ, যাকে এক সময় উপহাস করা হতো তিনিই এখন হোয়াইট হাউসে যাওয়ার জন্য লড়বেন। ট্রাম্পের মনোনয়ন পাওয়ার লড়াইটা মোটেও সহজ ছিল না। তাকে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হয়েছে। বাছাইপর্বে এক ডজনের বেশি প্রতিদ্বন্দ্বীকে মোকাবেলা করতে হয়েছে। বাছাইপর্বে প্রয়োজনীয় সংখ্যক ডেলিগেট পাওয়ার পরও তার মনোনয়ন পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা ছিল। তাকে নিজ দলের ভেতরেই তীব্র বিরোধিতার মুখে পড়তে হয়েছে। তাকে বাদ দেয়ার জন্য শেষ মুহূর্তেও নানা তোড়জোড় চলে। বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যের প্রাইমারি ও ককাসে ট্রাম্প সব মিলিয়ে এক হাজার ৭২৫ রিপাবলিকান প্রতিনিধির সমর্থন পেয়েছেন। প্রার্থিতা নিশ্চিত করতে তার প্রয়োজন ছিল এক হাজার ২৩৭ জনের সমর্থন। ট্রাম্পের মূল প্রতিদ্বন্দ্বী মার্কিন সিনেটর টেড ক্রুজ পেয়েছিলেন ৪৭৫ প্রতিনিধির সমর্থন, ওহাইও অঙ্গরাজ্যের গবর্নর কাসিচ পেয়েছিলেন ১২০ জনের সমর্থন আর ফ্লোরিডার সিনেটর মার্কো রুবিও’র পক্ষে ছিলেন ১১৪ জন। মনোনয়ন যুদ্ধের সময়ই ট্রাম্প ছাড়া সবাই সরে দাঁড়ালে ট্রাম্পের প্রার্থিতা প্রায় নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল।
×