ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সাত বছরের সাফল্য তুলে ধরতে ঢাকায় শুরু হচ্ছে উন্নয়ন মেলা

প্রকাশিত: ০৫:৪৩, ২১ জুলাই ২০১৬

সাত বছরের সাফল্য তুলে ধরতে ঢাকায় শুরু হচ্ছে উন্নয়ন মেলা

এম শাহজাহান ॥ সরকারের সাত বছরের সাফল্য তুলে ধরতে এবার ঢাকায় শুরু হচ্ছে উন্নয়ন মেলা। এই মেলায় ৫৬ মন্ত্রণালয়-বিভাগ পৃথকভাবে তাদের উন্নয়ন কর্মকা- তুলে ধরবে। আগামী ২৮ থেকে ২৯ জুলাই দুদিনব্যাপী অনুষ্ঠিতব্য ‘উন্নয়ন মেলা-২০১৬’ উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বঙ্গবন্ধু নভোথিয়েটারে এ মেলার আয়োজন করেছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একসেস টু ইনফরমেশন (এটুআই) প্রোগ্রাম। রূপকল্প-২১ অনুযায়ী মধ্যম আয়ের দেশে রূপান্তর এবং ২০৪১ সালে বিশ্বসভায় একটি উন্নত দেশের মর্যাদায় অভিষিক্ত হবে বাংলাদেশÑ এই স্বপ্নপূরণে সরকারের উদ্যোগ ও করণীয়গুলো মেলার মাধ্যমে তুলে ধরা হবে। মূলত বর্তমান সরকারের অর্থনৈতিক ও সামাজিক অর্জন বিষয়ক কার্যক্রমকে জনগণের মাঝে তুলে ধরার লক্ষ্যেই এই মেলার আয়োজন করা হয়েছে। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের। এদিকে এক সময়কার ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ খ্যাত বাংলাদেশ ইতোমধ্যে নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে। বর্তমান সরকার উন্নত বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার ব্রত নিয়ে একটি শক্তিশালী অর্থনৈতিক ভিক্তি গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকারের নানামুখী উদ্যোগের ফলে বাংলাদেশের মানুষের আর্থ সামাজিক বিকাশ ও জীবনমান উন্নয়নের যে অগ্রগতি হয়েছে তা সারা বিশ্বের কাছে এক বিস্ময়। ইতোমধ্যে ২০২১ সালের মধ্যে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত মধ্যম আয়ের বাংলাদেশ বিনির্মাণে বর্তমান সরকার বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর আর্থ সামাজিক অবস্থার উন্নয়নের জন্য একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প যা ইতোমধ্যে পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকে রূপান্তর করা হয়েছে। ছিন্নমূল ও গৃহহীনে আশ্রয় দানের লক্ষ্যে আশ্রায়ণ প্রকল্প, আধুনিক পাঠক্রম ও জনগণের দোরগোড়ায় ‘ই’ সেবা নিশ্চিত করতে ডিজিটাল বাংলাদেশ, শিক্ষা বৃত্তি ও বই বিতরণের উদ্দেশ্যে শিক্ষা সহায়তা, নারীর ক্ষমতায়ন, ঘরে ঘরে বিদ্যুত, তৃণমূল পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে কমিউনিটি ক্লিনিক ও মানসিক স্বাস্থ্য, অসহায় নাগরিকদের সহায়তায় সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচী গ্রহণ করা হয়েছে। এসব কর্মসূচীতে সরকার দেশের মানুষের জীবন মান উন্নয়নে ব্যাপকভাবে কাজ করছে। এতে বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতির বিভিন্ন সূচক বিশেষ করে মাথাপিছু আয় ও খাদ্য উৎপাদন বেড়েছে, মাতৃমৃত্যুর হার কমে গেছে, বৈদেশিক রেমিটেন্স বৃদ্ধি পেয়েছে, গড় আয়ুষ্কাল বৃদ্ধি পেয়েছে এবং শিশু মৃত্যুহার কমে গেছে। তাই সরকারের উন্নয়ন অগ্রযাত্রা জনগণকে অবহিত করতে এবং এ উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতেই এ উন্নয়ন মেলা। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মাহবুব আহমেদ জনকণ্ঠকে বলেন, সরকারের সাফল্য তুলে ধরা এবং আগামী দিনে দেশকে কিভাবে এগিয়ে নেয়া হবে তা উন্নয়ন মেলার মাধ্যমে জনগণ জানতে পারবেন। এই মেলায় বিভিন্ন মন্ত্রণালয়-বিভাগ নিজস্ব অর্জন ও উন্নয়নের খতিয়ান তুলে ধরবে। এজন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকেও মেলায় একটি স্টল নেয়া হচ্ছে। এই স্টলের মাধ্যমে বিগত সাত বছরে দেশের অর্থনৈতিক ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে কি করা হয়েছে তা তুলে ধরা হবে। তিনি বলেন, একই সঙ্গে আগামী দিনগুলোতে নতুন যেসব কর্মসূচী আসবে তারও একটি ধারণা দেয়া হবে উন্নয়ন মেলার মাধ্যমে। জানা গেছে, জঙ্গীবাদ-বিএনপি-জামায়াতের অপরাজনীতি এবং নানা প্রতিবন্ধকতার মুখেও বর্তমান সরকার উন্নয়নের পথে হাঁটছে। আগামী ২০২১ সালে এ উন্নয়ন কর্মকা-ের প্রাথমিক ধাপ শেষ হবে। কিন্তু ২৬ বছরের উন্নয়ন পরিকল্পনা নিয়ে এগুচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সরকার দেশে যে উন্নয়নযজ্ঞ চালাচ্ছে, দেশের সিংহভাগ মানুষ তা জানে না। তাদের সরকারের যুগান্তকারী পদক্ষেপগুলো জানাতে হবে। সংশ্লিষ্টদের মতে, ২০৪১ সাল পর্যন্ত শেখ হাসিনার যে টার্গেট তা পূরণ করতে হলে জনগণের সহযোগিতা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। আর সরকারের উন্নয়নের কর্মকা- জানতে পারলে জনগণ নিজ থেকে সরকারকে সহযোগিতা করতে এগিয়ে আসবে। জানা গেছে, রূপকল্প-২১ স্বপ্নপূরণের যাত্রাপথে মাঝামাঝি অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। গত ২০১১-১৫ মেয়াদী ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার অসমাপ্ত কার্যক্রম এবং জাতিসংঘ ঘোষিত ১৭টি অভিষ্ট এবং ১৬৯টি লক্ষ্য সংবলিত এসডিজিকে অন্তর্ভুক্ত করে ২০১৬-২০ মেয়াদী সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা প্রণীত হয়েছেÑ যার বাস্তবায়ন কার্যক্রম ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। এ পরিকল্পনার লক্ষ্যসমূহ অর্জনের জন্য মধ্যমেয়াদে যেসব বিষয়ে অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে তা হলো বিনিয়োগ বৃদ্ধি, দক্ষতা উন্নয়ন, প্রবৃদ্ধি সঞ্চালক বৃহৎ অবকাঠামো প্রকল্প গ্রহণ, মানব সম্পদ উন্নয়ন, কর্মসৃজন, দক্ষ উৎপদানশীলতা, সামাজিক নিরাপত্তার আওতা বৃদ্ধি, পরিকল্পিত নগরায়ন এবং টেকসই পরিবেশবান্ধব নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ। এসব বিষয় উন্নয়ন মেলার মাধ্যমে জনগণের সামনে তুলে ধরা হবে। জানা গেছে, উন্নয়ন মেলা সফল করতে আগামী ২৫ জুলাই মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সভাকক্ষে আন্তঃমন্ত্রণালয় ডাকা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের মুখ্যসচিব আবুল কালাম আজাদ ওই সভায় সভাপতিত্ব করবেন। সভায় উন্নয়ন মেলা সফল করতে সব মন্ত্রণালয়-বিভাগকে নির্দেশ দেয়া হতে পারে।
×