ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সংসদে প্রশ্নোত্তরে প্রধানমন্ত্রী

জঙ্গী হামলায় যারা মদদ দিচ্ছে তাদেরও বিচারের মুখোমুখি করা হবে

প্রকাশিত: ০৫:৪২, ২১ জুলাই ২০১৬

জঙ্গী হামলায় যারা মদদ দিচ্ছে তাদেরও বিচারের মুখোমুখি করা হবে

সংসদ রিপোর্টার ॥ প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেছেন, শুধু হামলাকারী জঙ্গী-সন্ত্রাসী নয়, পর্দার আড়ালে থেকে কারা পরিকল্পনা করছে, মদদ দিচ্ছে, প্রশিক্ষণ ও অস্ত্র দিচ্ছেÑ সে দেশী-বিদেশী যেই-ই হোক না কেন সবাইকে খুঁজে বের করে বিচারের মুখোমুখি করা হবে। যেহেতু এ ব্যাপারে আন্তর্জাতিক সমর্থন আমাদের রয়েছে, তাই সবাইকে খুঁজে বের করা কঠিন হবে না। শুধু সময়ের ব্যাপার মাত্র। সবাইকে ধরে আমরা অবশ্যই দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে পারব। স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে বুধবার জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত ত্রিশ মিনিটের প্রশ্নোত্তর পর্বে সরকারী দলের সংসদ সদস্য গোলাম দস্তগীর গাজী বীরপ্রতীকের সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী জঙ্গী-সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে তার সরকারের কঠোর অবস্থানের কথা পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, এমন কাপুরুষোচিত অমানবিক হামলার ঘটনা ছিল কল্পনাতীত। যারা বাংলাদেশের উন্নয়ন চায় না, ভাল চায় না, স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে নাÑ তারাই এ ধরনের হামলা চালাচ্ছে। তিনি বলেন, এ হামলার পর বিদেশী রাষ্ট্রের প্রত্যেকে নিন্দা জানিয়ে পরিস্থিতি মোকাবেলায় পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় আমাদের পাশে আছে, এসব সন্ত্রাসী হামলা মোকাবেলায় সব ধরনের সহযোগিতারও আশ্বাস দিয়েছেন। এ কারণে হামলার নেপথ্যে দেশী-বিদেশী যেই জড়িত থাকুক না কেন, তাদের খুঁজে বের করা সময়ের ব্যাপার মাত্র। গুলশানে আর্টিজান রেস্তরাঁয় সন্দেহজনক হামলাকারীদের শনাক্ত করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সহযোগিতা করার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে সংসদ নেতা বলেন, হামলাকারী বেশ কয়েকজন মারা গেছে। কয়েকজন সন্দেহভাজনের ভিডিওচিত্র প্রকাশ করা হয়েছে। তাদের মধ্যে কয়েকজনকে ইতোমধ্যে শনাক্তও করা হয়েছে। বাকিদের শনাক্ত করতে সবার সহযোগিতা চাই। কেউ সন্দেহভাজনদের শনাক্ত করতে পারলে সঙ্গে সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে অবহিত করার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি। গুলশান ও শোলাকিয়ায় সন্ত্রাসী হামলা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, বিশ্বমন্দার মধ্যে বর্তমান সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করে। অর্থনৈতিক মন্দা মোকাবেলা করে আমরা বাংলাদেশকে অর্থনৈতিকভাবে দ্রুত উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। সারাবিশ্বের সামনে বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের রোলমডেল। ২০১৪ ও ২০১৫ সালে বিএনপি-জামায়াত জোটের জ্বালাও-পোড়াও, ধ্বংসযজ্ঞ ও শত শত মানুষকে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনা তুলে ধরে বলেন, এসব ঘটনায় বাংলাদেশকে প্রশ্নের মুখোমুখি পড়তে হয়। তিনি বলেন, ওই সব ঘটনা দ্রুত মোকাবেলা করে সুশাসনের মাধ্যমে দেশের ভাবমূর্তি যখন উজ্জ্বল করেছি, বিনিয়োগকারীদের মধ্যে যখন আস্থার পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছেÑ তখন আবারও এ হামলার ঘটনা ঘটল। মেট্রোরেলের জাপানী পরামর্শক, ৩৫ বছর ধরে বাংলাদেশে অবস্থান করা গার্মেন্টস ব্যবসায়ী একজন ইতালি নাগরিকসহ কয়েক বিদেশী নাগরিককে হত্যা করা হলো। তবে জড়িতরা কেউ রেহাই পাবে না। তাদের আমরা শাস্তির মুখোমুখি করবই ইনশাআল্লাহ। দারিদ্র্য বিমোচনে অসামান্য অর্জন ॥ সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডাঃ দীপু মনির প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন সত্ত্বেও অনেক দেশই দারিদ্র্য নিরসন ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে মূলধারায় সম্পৃক্তকরণ কাক্সিক্ষত হারে অর্জিত হয় না। কিন্তু আমরা দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের পাশাপাশি দারিদ্র্য নিরসন ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে উন্নয়নের মূলধারায় সম্পৃক্তকরণে সফল হয়েছি। তিনি বলেন, আমাদের রাজনীতি জনগণের কল্যাণে নিবেদিত। তাই আমাদের দেশের সর্বস্তরের মানুষের অকুণ্ঠ সমর্থন, তাদের অক্লান্ত শ্রম-ঘাম, মেধা এবং দেশ গঠনে আমাদের তরুণ প্রজন্মের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের ফলেই এ অর্জন সম্ভব হয়েছে। তিনি বলেন, বর্তমান সরকার সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীকে দারিদ্র্য দূরীকরণের অন্যতম হাতিয়ার হিসেবে মনে করে। সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচীর লক্ষ্য হচ্ছে চরম দারিদ্র্য জনগণের জীবনের ঝুঁকিগুলো মোকাবেলার মাধ্যমে তাদের চরম দারিদ্র্যের বলয় থেকে মুক্ত করা। সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর মাধ্যমে সরকার এ জনগোষ্ঠীকে উন্নয়নের সুফলভোগী করার চেষ্টা করছে। তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের চূড়ান্ত লক্ষ্য হচ্ছে জনগণের আর্থ-সামাজিক মুক্তি এবং ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত সমৃদ্ধ দেশ গড়ে তোলা। এ লক্ষ্যে গৃহীত পদক্ষেপসমূহ ও অর্জিত সাফল্য এ সরকারের ২০০৮ ও ২০১৪ সালের নির্বাচনী ইশতেহারের সঙ্গে সম্পূর্ণ সাযুজ্যপূর্ণ। ২০১৭ সালেই মহাকাশে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট ॥ সরকারী দলের সংসদ সদস্য মনিরুল ইসলামের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকার মহাকাশে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণের কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। আশা করা যায়, ২০১৭ সালের ১৬ ডিসেম্বর মহাকাশে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণ করা সম্ভব হবে। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট সফলভাবে উৎক্ষেপিত হলে নির্দিষ্ট অরবিটার স্লট ১১৯ দশমিক ১ ডিগ্রী পূর্ব দ্রাঘিমাংশে পৌঁছতে প্রায় ২ সপ্তাহের মতো সময় লাগবে। সফল উৎক্ষেপণের পর স্যাটেলাইটের ইন-অরবিট টেস্ট সম্পন্ন করতে আনুমানিক ৩ মাস সময় লাগবে। সম্পূর্ণ টেস্টিং মিশন শেষে ২০১৮ সালের এপ্রিল মাস নাগাদ বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট পূর্ণাঙ্গভাবে বাণিজ্যিক কার্যক্রম করতে পারবে বলে আশা করা যায়। তিনি আরও জানান, বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট সফলভাবে উৎক্ষেপণের পর পর্যায়ক্রমে বঙ্গবন্ধু-২ ও বঙ্গবন্ধু-৩ নামক আরও ২টি স্যাটেলাইট মহাকাশে প্রেরণের পরিকল্পনা আমাদের রয়েছে। বর্তমানে বিদেশী স্যাটেলাইটের ভাড়াবাবদ প্রদেয় বার্ষিক প্রায় ১৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার সাশ্রয়সহ বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের সুযোগ সৃষ্টি হবে। বঙ্গবন্ধু সেতুর সমান্তরালে ডুয়েলগেজ সেতু হবে ॥ জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য ফখরুল ইমামের প্রশ্নের জবাবে সংসদ নেতা জানান, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে বাংলাদেশ রেলওয়েকে আধুনিক, যুগোপযোগী, পরিবেশবান্ধব ও নির্ভরযোগ্য যাত্রী সেবামূলক গণপরিবহন হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে সর্বোচ্চ গুরুত্ব প্রদান করে যাচ্ছে। ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে এ পর্যন্ত সারাদেশে প্রায় ২৩৫ কিলোমিটার নতুন রেললাইন নির্মাণ করা হয়েছে। তবে বিভিন্ন সেকশনে নতুন ট্রেন চালু করার একটি বড় বাধা হলো ডাবল লাইন না থাকা। এ সমস্যা সমাধানে আমরা পর্যায়ক্রমে সকল গুরুত্বপূর্ণ রেলওয়ে সেকশনকে ডাবল লাইনে উন্নীত করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। তিনি জানান, যমুনা নদীর ওপর বিদ্যমান বঙ্গবন্ধু সেতুর সমান্তরালে ডুয়েলগেজ ডাবল ট্রাক সম্পন্ন একটি রেল সেতু নির্মাণের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। এ লক্ষ্যে একটি ডিপিপি প্রণয়ন করা হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য ইতোমধ্যে জাইকার সঙ্গে ঋণচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। তিনি আরও জানান, ঢাকা হতে পদ্মা সেতু হয়ে যশোর পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণের লক্ষ্যে ‘পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্প’ একনেক কর্তৃক অনুমোদিত হয়েছে। এছাড়া পায়রা বন্দরকেও রেলওয়ে নেটওয়ার্কের আওতায় আনা হবে। ১৫ বছরের মধ্যে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা ॥ গোলাম দস্তগীর গাজীর অপর এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আগামী ১৫ বছরের মধ্যে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। এতে এক কোটি মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। তিনি বলেন, বিভিন্ন শিল্প ও সেবা খাতে বিনিয়োগের লক্ষ্যে ইকোনমিক জোনস প্রতিষ্ঠার জন্য বাংলাদেশ ইকোনমিক জোনস এ্যাক্ট ২০১০ প্রণয়ন এবং বাংলাদেশ ইকোনমিক জোনস অর্থরিটি (বেজা) প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ বৃদ্ধির লক্ষ্যে ইতোমধ্যে বিনিয়োগবান্ধব নতুন শিল্পনীতি ঘোষণা করা হয়েছে। সংসদ নেতা জানান, গত ২৮ ফেব্রুয়ারি ১০টি অর্থনৈতিক অঞ্চলের উন্নয়ন কাজের উদ্বোধন করেছি। ইতোমধ্যে ৭৭টি অর্থনৈতিক অঞ্চলের স্থান নির্বাচন করা হয়েছে। সরকার ও ব্যক্তি খাত সম্মিলনে অবকাঠামো খাতসহ অন্যান্য খাতে বিনিয়োগ করার জন্য পাবলিক প্রাইভেট পার্টনার শিপ (পিপিপি) অথরিটি করা হয়েছে। এ সকল খাতে বিনিয়োগ করার জন্য পিপিপি গাইডলাইনস প্রণয়ন করা হয়েছে। এর ফলে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগকারীদের জন্য বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি হবে এবং দেশী-বিদেশী বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগে উৎসাহিত হবেন।
×