ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

রামপাল বিদ্যুত কেন্দ্রের কয়লা পরিবহনের জন্য কেনা হবে ৬ মাদার বাল্ক ক্যারিয়ার

শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ১০ ভাগ লভ্যাংশ প্রদানের প্রস্তাব বিএসসির

প্রকাশিত: ০৪:৩১, ২১ জুলাই ২০১৬

শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ১০ ভাগ লভ্যাংশ প্রদানের প্রস্তাব বিএসসির

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস ॥ ২০১৪-১৫ অর্থবছরে শেয়ারহোল্ডারদের জন্য দশ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ প্রদানের প্রস্তাব করেছে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন (বিএসসি)। এই অর্থবছরে বিএসসি মুনাফা করেছে ৫ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। সংস্থাকে আরও লাভজনক করতে নতুন জাহাজ ও অয়েল ট্যাঙ্কার সংগ্রহের উদ্যোগও নেয়া হয়েছে। রামপাল বিদ্যুত কেন্দ্রের কয়লা পরিবহনের জন্য ৬টি মাদার বাল্ক ক্যারিয়ার ও ১০টি লাইটারেজ বাল্ক ক্যারিয়ার কেনার কার্যক্রম হাতে নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। বার্ষিক সাধারণ সভাকে সামনে রেখে বুধবার দুপুরে বিএসসির সভাকক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য অবহিত করা হয়। বিএসসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক কমডোর এম হাবিবুর রহমান ভুঁইয়া তার বক্তব্যে জানান, বিএসসির বহরে বর্তমানে রয়েছে মাত্র তিনটি জাহাজ। এসব জাহাজের গড় বয়স ত্রিশ বছর হওয়ায় সীমাবদ্ধ পরিসরে এগুলো পরিচালনা করা হচ্ছে। তিনি নতুন নতুন জাহাজ সংগ্রহে সরকারের উদ্যোগ ও পদক্ষেপের কথা জানিয়ে বলেন, বিএসসিকে আরও লাভজনক ও শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড় করাতে ব্যাপক পরিকল্পনা রয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ এমন একটি প্রতিষ্ঠানে ১৫ থেকে ৩০টি মাদার ট্যাঙ্কার ও সেলুলার জাহাজ থাকা দরকার। কিন্তু গত ২৬ বছরে কোন জাহাজ কেনা হয়নি। ফলে বিএসসির সক্ষমতা সীমিত হয়ে পড়েছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে বিভিন্ন প্রকল্প নিয়েছে সরকার। উদ্যোগ নেয়া হয়েছে চীন সরকারের ঋণ সহায়তায় তিনটি নতুন প্রোডাক্ট অয়েল ট্যাঙ্কার ও তিনটি নতুন বাল্ক ক্যারিয়ার ক্রয়ের। এ লক্ষ্যে চীনা ন্যাশনালি মেশিনারিক ইমপোর্ট এ্যান্ড এক্সপোর্ট কর্পোরেশনের সঙ্গে জাহাজ নির্মাণের চুক্তিও স্বাক্ষর হয়েছে। একনেক সভায় অনুমোদিত হওয়ার পর বর্তমানে খসড়া ঋণ চুক্তির প্রস্তাব সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোতে যাচাই-বাছাই চলছে। আগামী একমাসের মধ্যে ঋণচুক্তি স্বাক্ষরিত হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করে বিএসসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক জানান, এরপরই জাহাজ নির্মাণ কাজ শুরু হয়ে যাবে। মোট ৬টি জাহাজ সংগৃহীত হচ্ছে, যার প্রত্যেকটির ধারণ ক্ষমতা হবে ৩৯ হাজার মেট্রিক টন। ২০১৮ সালের মধ্যে এগুলো সংযোজিত হলে বিএসসির সক্ষমতা আরও বাড়বে। রামপালে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্রের জন্য বিপুলসংখ্যক কয়লা আমদানি ও পরিবহনের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে শিপিং কর্পোরেশন। এ কেন্দ্র চালু হলে প্রতিমাসে ৪ লাখ মেট্রিক টন কয়লার প্রয়োজন হবে। এ কয়লা বিএসসির জাহাজের মাধ্যমেই পরিবহনের জন্য ইতোমধ্যেই সমঝোতা স্বাক্ষর হয়েছে বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া ফ্রেন্ডশিপ পাওয়ার কোম্পানির সঙ্গে। ফলে কয়লা পরিবহনের জন্য অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ৬টি মাদার বাল্ক ক্যারিয়ার ও ১০টি লাইটারেজ বাল্ক ক্যারিয়ার কেনার কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়েছে বলে জানান বিএসসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক কমডোর এম হাবিবুর রহমান ভুঁইয়া। জাহাজ সংগ্রহের প্রক্রিয়ায় দীর্ঘসূত্রতা প্রসঙ্গে বিএসসির এমডি জানান, দ্রুত প্রয়োজন মেটাতে আগে আমরা দুটি পুরনো জাহাজ কেনার সিদ্ধান্ত নিয়ে অনেক দূর এগিয়েছিলাম। কিন্তু সরকারী পর্যায়ে নতুন জাহাজ কেনার সিদ্ধান্ত হওয়ায় সে প্রক্রিয়া বাতিল করা হয়। অয়েল ট্যাঙ্কারের প্রয়োজনীয়তা প্রসঙ্গে তিনি জানান, ৩০ থেকে ৩৫ হাজার ডিডব্লিউটি সম্পন্ন দুটি ক্রুড অয়েল ট্যাঙ্কার এবং ১ লাখ থেকে ১ লাখ ২৫ হাজার ডিডব্লিউটি সম্পন্ন দুটি মাদার ট্যাঙ্কার ক্রয়ে ইতোমধ্যেই চীনের দুটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। এছাড়া আরপিও’র মাধ্যমে শেয়ার বিক্রির অর্থে ৩৪ হাজার ডিডব্লিউটি সম্পন্ন একটি কেমিক্যাল বা ক্রুড অয়েল ট্যাঙ্কার সংগ্রহের বিষয়টি মূল্যায়নাধীন পর্যায়ে আছে। সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক (টেকনিক্যাল) মোঃ সাঈদ উল্লাহ, সচিব মোঃ আবদুল আউয়াল ও পরিচালনা পর্ষদের সদস্য এবং উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা। আগামী শনিবারের বার্ষিক সাধারণ সভাকে সামনে রেখে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। প্রসঙ্গত, পুরনো লক্কর-ঝক্কর জাহাজ দিয়েই চলছে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশনের কার্যক্রম। প্রায় এক দশক ধরে বহরে নতুন জাহাজ যুক্ত হওয়ার পরিকল্পনা ও উদ্যোগ শোনা গেলেও বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে দেখা দিয়েছে দীর্ঘসূত্রতা। একের পর এক গৃহীত পরিকল্পনা রয়েছে ফাইলবন্দী অবস্থায়। রাষ্ট্রায়ত্ত এ সংস্থাটির সক্ষমতা না থাকায় দেশের পণ্য আমদানি রফতানি খাতে ভাড়া হিসেবে অনেক অর্থ চলে যাচ্ছে বিদেশী শিপিং কোম্পানিগুলোর কাছে। শুধু তাই নয়, এর ফলে বিএসসির আয়ও আশানুরূপ হচ্ছে না। এতে ক্ষুব্ধ সংস্থাটির শেয়ারহোল্ডারগণও।
×