ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বিপথ ও বিপদ

প্রকাশিত: ০৪:১৫, ২১ জুলাই ২০১৬

বিপথ ও বিপদ

সন্তান হলো পিতা-মাতার শ্রেষ্ঠ স্বপ্ন, শ্রেষ্ঠ প্রাপ্তি ও শ্রেষ্ঠ সাধনা। নারীর কাছে সন্তান প্রসব করা হলো একটি অতি তৃপ্তিকর কষ্ট কিন্তু তার চেয়েও বেশি তিক্তকর কষ্ট হলো যখন তার সন্তান নীতি-নৈতিকতার পথ থেকে সরে পড়ে, জঙ্গী হয়ে যায়। পরিবার হলো সন্তান গঠনের জন্য উত্তম একটি পরিবেশ, যেখানে সন্তানরা শেখে ন্যায়-অন্যায়, ভাল-মন্দ, উচিত-অনুচিত ইত্যাদি। শুধু তাই নয়, পিতা মাতার সুনির্দিষ্ট পথ পরিচালনা অত্যাবশ্যকীয়। বর্তমানে আমাদের সম্মুখে যে প্রজন্ম, উপস্থাপিত হচ্ছে তা সত্যিকার অর্থে আগামীকালের জন্য হুমকিস্বরূপ। আগে বিজ্ঞ বিশেষজ্ঞরা ধারণা করতেন দরিদ্র পরিবারের সন্তানেরা সাধারণত টাকা-পয়সার অভাবে খারাপ কাজে লিপ্ত হয়। অর্থাৎ কথায় যাকে বলে ‘অভাবে স্বভাব নষ্ট’। কিন্তু সম্প্রতি ঘটে যাওয়া গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গী হামলা বিশেষজ্ঞদের চিন্তা-চেতনার বাঁক ঘুরিয়ে দিয়েছে। গুলশান ও কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় যে সব জঙ্গী হামলা করেছে এরা কোন ভিন্ন গ্রহের বাসিন্দা নয়। এরা আমাদেরই কারও না কারও পরিবারের সন্তান। শুধু তাই নয়, এদের মধ্যে কেউ কেউ উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত। কেউ পড়াশোনা করছে নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি থেকে, কেউবা বিদেশে ইংলিশ মিডিয়ামে। বর্তমান প্রজন্মের এ রকম বিপথগামী হওয়ার অন্যতম একটি কারণ হলো : আমাদের গৃহীত বস্তুবাদী জীবন ব্যবস্থা। মানুষ আজ ছোটে বস্তুর পেছনে, টাকার জন্য খাচ্ছে ঘুষ আর সুদ এবং সন্তানদের সেই সবই শিক্ষা দিচ্ছে। এক কথায় সন্তান গঠনের মূলনীতি হয়ে দাঁড়িয়েছেÑ ক্যারিয়ার মানেই অর্থ উপার্জন, ব্যবসা, বিদেশে সেটেল হওয়া ইত্যাদি। আর এসব অর্জনের লক্ষ্যে আমাদের এ প্রজন্ম হয়ে পড়েছে স্বার্থপর এবং অন্ধ ও বধির বিবেকসম্পন্ন একটি সমাজ। আজ বিশ্বের কাছে ধর্ম একটি প্রধান ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে। ধর্মের অপব্যাখ্যা দিয়ে জঙ্গীবাদীরা আমাদের সন্তানদের নিয়ে মগজ ধোলাই করছে। এমনভাবে মগজ ধোলাই করছে যে, ছেলেটি ছোটবেলায় তেলাপোকা মারতে ভয় পেত আজ সে মানুষ জবাই করছে। এটা কোন ধর্মেরই মূল নীতি হতে পারে না। সব ধর্মেই বর্ণিত রয়েছে মানবতার ধর্ম। গোটা দেশ আজ শঙ্কিত। প্রতিনিয়তই আমাদের সন্তানেরা নিখোঁজ হয়ে যাচ্ছে। শান্তিকামী মানুষের কাছে এখন বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে ‘জঙ্গীবাদ’। আর এ জঙ্গীবাদে আক্রান্ত হচ্ছে দেশের সন্তানেরা। ফলে ধ্বংস হচ্ছে আমাদের নগর এবং সর্বোপরি নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে সভ্যতা আর ভূলুণ্ঠিত হচ্ছে মানবতা। শিক্ষা ও জীবন ব্যবস্থায় এক ধরনের ভারসাম্যহীনতা ও দৈন্যই আমাদের সন্তানদের বিপথে নিয়েছে। ভিন্ন গ্রহের কোন শক্তি তাদের পিশাচ বানায়নি। সঠিক শিক্ষা না দেয়ার ফলে কুশিক্ষাই তাদের আপন হাতিয়ারে পরিণত করে। নিজের সন্তানকে এ মরণ ফাঁদ থেকে বাঁচানোর একটা উপায়-যতটুকু সময় পাওয়া যায় এখন থেকে ধর্মের সঠিক শিক্ষাকে, ইসলামের প্রকৃত আকিদা কোরানে জেহাদ সংক্রান্ত যে আয়াতগুলো আছে সেগুলোর সঠিক ব্যাখ্যা ও উপযুক্ত প্রমাণসহ সন্তানকে বোঝাতে সহায়তা করা। এভাবেই সৃষ্টি হবে জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে জাতীয় ঐক্য। এখনও সময় আছে নিজের ঘর সামলানোর। এখনও সন্তানকে ফিরিয়ে আনা যায় সুপথে। অপধর্মের বিষফল থেকে সন্তানকে রক্ষা করে, সন্তানকে দেয়া যায় সুশিক্ষা ও সুনীতির শান্তির স্পর্শ। সন্তানের সামনে আদর্শ স্থাপন করে তাকে দেয়া যায় সুস্থ মূল্যবোধের শিক্ষা। তা হলেই সন্তান বিপথগামী হবে না, জঙ্গী হবে না। নটর ডেম কলেজ, ঢাকা থেকে
×