ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

চ্যারিটি বিগিনস্ এ্যাট হোম;###;অরূপরতন চৌধুরী

সমাজ ভাবনা ॥ এবারের বিষয় ॥ কেমন আছে আপনার সন্তান?

প্রকাশিত: ০৪:১৪, ২১ জুলাই ২০১৬

সমাজ ভাবনা ॥ এবারের বিষয় ॥ কেমন আছে আপনার সন্তান?

ইংরেজীতে একটি কথা আছে তা হলো- ‘পযধৎরঃু নবমরহং ধঃ যড়সব’ অর্থাৎ বাড়ি থেকেই আসল বিদ্যাশিক্ষা শুরু হয়। কিন্তু আমরা কি তা করতে পারছি? আজকাল বেশিরভাগ পরিবারের সন্তান বড় হয় বাড়ির বুয়াদের কাছে। ফলে সন্তান যে আদর্শ শিক্ষাটা পেয়ে বড় হওয়ার কথা তারা তা পাচ্ছে না। কারণ টাকা উপার্জনের জন্য বাবা থাকেন চাকরি বা ব্যবসার কাজে, আর মায়েরাও থাকেন চাকরি বা সামাজিক কর্মকা-ে ব্যস্ত। সন্তানকে একটি নামকরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি করিয়ে তারা নিশ্চিন্ত থাকেন। কারণ, তারা মনে করেন একটা নামকরা স্কুল বা কলেজে ছেলেমেয়েকে ভর্তি করে দিতে পারলেই হলো। আমার কথা বলি ৬০ এর দশকের কথা, আমি তখন স্কুলের ছাত্র মা চাকরি করতেন, নিজে পড়াশোনা করতেন, নিজে সংসার করতেন, হাঁড়ি-পাতিল পরিষ্কার করা থেকে রান্না পর্যন্ত শেষ করে আমাদের নিয়ে পড়াতে বসতেন মা। স্কুল থেকে ফিরে ক্লাসের হোম ওয়ার্কটা পর্যন্ত দেখাতে হতো মা-বাবাকে, বিকেলে খেলতে গেলে সন্ধ্যার আগে ঘরে ফিরে পড়তে বসতে হতো, নতুবা পিটুনি। বন্ধু কে? কোথায় যাচ্ছি? দেরিতে ফিরলাম কেন? সময়মতো ঘুম থেকে উঠছি কিনা বা ঘুমাতে যাচ্ছি কিনা সবই তো বাবা-মা দেখভাল করতেন। আবার তারা নিজেরাও সংসারের জন্য আয় করতে চাকরি করতেন, নিজেকে শিক্ষার সর্বোচ্চ ডিগ্রী নেয়ার তীব্র আকাক্সক্ষাকে শত কষ্ট হলেও চেষ্টা করে অর্জন করেছেন। এ প্রসঙ্গে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের উদ্ধৃতি থেকে বলছি ‘তৃণলতা সহজেই তৃণলতা, পশুপাখি সহজেই পশুপাখি, কিন্তু মানুষ সহজেই মানুষ নয়, তার জন্য তাকে নিরন্তর সাধনা করতে হয়।’ আজকাল আমাদের পরিবারের সন্তানদের বিপথগামী হওয়ার পেছনে মূল কারণটাই হচ্ছে তাদের আমরা প্রাথমিক শিক্ষাটা অর্থাৎ গৃহশিক্ষাটা দিতে পারছি না। তার কারণ অনেকগুলো অর্থনৈতিক, সামাজিক, আন্তর্জাতিক, পারিবারিক ইত্যাদি। সংসারে বাবা-মাকেও আদর্শবান হতে হবে। শিক্ষককে হতে হবে শিক্ষাগুরু। আমাদের সন্তানদের মানবিক মূল্যবোধের অভাবটার কারণেই আজ সমাজে এতকিছু ঘটনা ঘটছে। এই সুযোগে আমাদের কোমলমতি এই সন্তানদের একদল লোক বা গোষ্ঠী তাদের মগোজধোলাই করছে। মানবিক মূল্যবোধের পরিবর্তে তারা সন্তানদের ভুল তথ্য দিয়ে বশীভূত করছে। তাদের মাদকাসক্তির মতো কঠিন নেশায় বুঁদ হয়ে মরে যেতে বাধ্য করছে। শুধু তাই নয়, তাদের জীবনের মূল্যবোধকে অপব্যাখ্যা দিয়ে জীবন উৎসর্গ করতেও বাধ্য করছে। ফলে তারা হচ্ছে লক্ষ্যভ্রষ্ট, আদর্শভ্রষ্ট। কথায় বলে ‘শাসন করা তারই সাজে, সোহাগ করে যে।’ বাবা-মা সন্তানকে যেমন শাসন করবেন তেমনি আদরও করবেন। সন্তানের সঙ্গে বাবা-মার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক যেদিন নিশ্চিত হবে সেদিন থেকেই সন্তানের চলাফেরা আচার-আচারণ বাবা-মার কাছে পরিষ্কার ধরা পড়বে এবং শুরুতেই তার ভুল পথ থেকে তাকে রক্ষা করতে পারবেন। আসুন, আমরা আজ সন্তানের জন্য সবাই একটু সময় বের করি, তাদের সঙ্গে সম্পর্ক আরও শক্ত করি, তাদের অভাব, অভিযোগ মনোযোগ দিয়ে শুনি আর নিজের সাধ্য এবং সীমাবদ্ধতাকেও তাদের কাছে বলি। সন্তানদের পড়াশোনার সঙ্গে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সকল কর্মকা-কেও সম্পৃক্ত করি, তবেই তারা রক্ষা পাবে অপশক্তি থেকে। ঢাকা থেকে
×