ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সব বাহিনী নিয়ে বিশেষ তদন্ত টিম গঠন করে দিয়েছি ॥ প্রধানমন্ত্রী গুলশান ও শোলাকিয়ায় হামলার ওপর সংসদে আলোচনা, নিন্দা প্রস্তাব গৃহীত

জঙ্গী এবং তাদের মদদদাতাদের খুঁজে বের করবই

প্রকাশিত: ০৯:১৫, ২০ জুলাই ২০১৬

জঙ্গী এবং তাদের মদদদাতাদের খুঁজে বের করবই

সংসদ রিপোর্টার ॥ প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা জঙ্গী-সন্ত্রাসী হামলার সঙ্গে জড়িত এবং এদের মদদদাতা, অস্ত্র-অর্থের যোগানদাতা ও ইন্ধনদাতাদের খুঁজে বের করতে সব বাহিনীকে নিয়ে বিশেষ একটি তদন্ত টিম গঠন করার কথা জানিয়ে বলেছেন, যারা এসব ঘটনা ঘটাচ্ছে তারা দেশ, জাতি ও মানবতার শত্রু। এরা কারা, হোতা কারা, অস্ত্র-অর্থের যোগানদাতাদের আমরা খুঁজে বের করবই। এদের শিকড় পর্যন্ত পৌঁছে সমূলে মূলোৎপাটনে তিনি দেশবাসীর সর্বাত্মক সহযোগিতা কামনা করে বলেন, মানবতারই জয় হবে, অমানবিকদের অবশ্যই পরাজয় ঘটবে। মঙ্গলবার জাতীয় সংসদে গুলশান, শোলাকিয়াসহ পবিত্র নগরী মদিনায়, ফ্রান্সের নিস শহরে জঙ্গী হামলায় দেশী-বিদেশী নাগরিক নিহত হওয়ায় এবং বিশ্বব্যাপী সংঘটিত জঙ্গী ও সন্ত্রাসী ঘটনার নিন্দা জানিয়ে আনীত সাধারণ প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। আলোচনা শেষে সরকারী দলের শেখ ফজলুল করিম সেলিমের আনীত নিন্দা প্রস্তাবটি সরকার ও বিরোধী দলের সমর্থনে সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়। সরকার ও বিরোধী দলের মোট ২৪ জন সংসদ সদস্য প্রস্তাবটির ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নেন। আলোচনায় অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী জঙ্গী-সন্ত্রাসবাদ নির্মূলে তাঁর সরকারের কঠোর অবস্থানের কথা পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, তদন্ত অনেকদূর এগিয়েছে, ইতোমধ্যে অনেক তথ্য আমরা পেয়েছি। তদন্তের স্বার্থে অনেক কিছুই বলা যাচ্ছে না। শুধু হামলাকারীদের দমন করেই আমরা বসে থাকব না। কারা কোমলমতি তরুণদের বিভ্রান্ত করছে সেই মূল হোতাদেরও খুঁজে বের করব। এর শিকড় পর্যন্ত আমরা যাব এবং সমূলে মূলোৎপাটন করব। কারা এসব ঘটনার ইন্ধন দিচ্ছে, পরামর্শ ও মদদ দিচ্ছে, অস্ত্র ও অস্ত্রের যোগান দিচ্ছে- সবাইকে খুঁজে বের করে বিচারের মুখোমুখি করব। সারাদেশে কম্বিং অপারেশন চলছে। কেউ-ই রেহাই পাবে না। শেখ হাসিনা বলেন, শুধু বাংলাদেশেই নয়, সন্ত্রাস এখন সারাবিশ্বেই ছড়িয়ে পড়েছে। কাজেই এটা বাংলাদেশের একার সমস্যা নয়। আশার কথা, সন্ত্রাস-জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে সারাবিশ্বে জনমত সৃষ্টি হয়েছে। সারবিশ্বই এ ব্যাপারে সচেতন। সন্ত্রাস-জঙ্গীবাদ মোকাবেলায় দেশবাসীর সহযোগিতা চেয়ে তিনি বলেন, মানবতার জয় হবেই। নিজ নিজ এলাকায় গিয়ে সন্ত্রাসবিরোধী কাজ করতে সকল সংসদ সদস্যের প্রতি তিনি আহ্বান জানান। প্রধানমন্ত্রী বলেন, গুলশানের হামলার ঘটনার সকল ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করেছি। আমি নিজেও আজ (মঙ্গলবার) কয়েকটি ভিডিও ফুটেজ দেখেছি। সকল বাহিনীর সমন্বয়ে আমি একটা বিশেষ তদন্ত টিম করে দিয়েছি। এই ঘটনাকে আমরা সহজভাবে নেইনি। সন্ত্রাসী-জঙ্গীদের সম্পূর্ণভাবে নিপাত করবই। কারা অর্থ, অস্ত্র ও পরামর্শ দিচ্ছে তা খুঁজে বের করার পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। সারাদেশে কম্বিং অপারেশন চলছে, যে কোনভাবে এদের পাকড়াও করবই। সকলের মিলিত শক্তিই দেশকে জঙ্গীবাদমুক্ত করতে পারে। শেখ হাসিনা বলেন, সন্ত্রাসীরা দেশ, জাতি ও মানবতার শত্রু। ইসলাম শান্তির ধর্ম। মানুষ খুন করা ইসলামে নেই। এই প্রসঙ্গে মহানবীর (স.) কয়েকটি হাদিস উদ্ধৃত করে তিনি বলেন, মহানবী (স.) আমাদের শান্তির বাণী শুনিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, যাদের কোন অপূর্ণতা নেই, নামী-দামী প্রতিষ্ঠানে ইংলিশ মিডিয়ামে লেখাপড়া করেছে তারাই এখন বেহেশতের হুর-পরী পেতে এসব ঘটনা ঘটাচ্ছে। ইসলামকে যারা বিশ্বের কাছে হেয়, কলুষিত ও অমর্যাদা করছে, আল্লাহই তাদের বিচার করবেন। নিজের জীবন উৎসর্গ করে দেশের অনেক মানুষের জীবন রক্ষার জন্য আত্মোৎসর্গকারী পুলিশ সদস্যদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, গুলশানে ঘটনা ঘটার সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা সাহসের সঙ্গে হামলাকারীদের মোকাবেলা ও ঘেরাও করেছিল বলেই তারা পালিয়ে যেতে পারেনি। গুলশানের পরে আশঙ্কা ছিল দেশের সর্ববৃহৎ ঈদের জামায়াত শোলাকিয়ায় কিছু ঘটাতে পারে। সেজন্য আগে থেকেই আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীকে সতর্ক রাখা হয়েছিল। ফলে হামলাকারীরা ঈদগাহ মাঠের এক মাইল দূরে পুলিশ চৌকিতে হামলা চালায়। সাহসী পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা গুলি করে মূল হামলাকারীকে হত্যা করতে সক্ষম হয়। প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারাবির নামাজ আদায় করা বাদ রেখে বেহেশতে গিয়ে হুর-পরী পাবার আশায় তারা মানুষ হত্যায় মেতে উঠে। সম্পদশালী, বিত্তবানদের সন্তান যারা নামী-দামী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছে- তারাই যদি ধর্মান্ধতায় ভোগে, এর থেকে দুর্ভাগ্যজনক আর কিছু হতে পারে না। অভিভাবকদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, নিজেদের সন্তানদের প্রতি আরও নজর দিন, ঘনিষ্ঠ হোন। যাতে তারা বিপথে না যায়। পবিত্র কোরান-হাদিসের বিভিন্ন উদ্ধৃতি তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ইসলাম শান্তির ধর্ম। এখানে ধর্মান্ধতা কিংবা বিভ্রান্তে ভোগা কোন মুসলমানের কাজ নয়। মানুষ হত্যা করে এরা বেহেশত দুরের কথা, জাহান্নামের আগুনে পুড়বে। মুষ্টিমেয় কিছু মানুষ সন্ত্রাসী কর্মকা-ের মাধ্যমে সারাবিশ্বের কাছে ইসলাম ধর্মকে হেয়প্রতিপন্ন করছে, প্রশ্নবোধক করছে। যারা পবিত্র ধর্মকে কলুষিত করছে, আল্লাহই তাদের বিচার করবেন। দেশের সকল শ্রেণী-পেশার মানুষকে নিয়ে সারাদেশে সন্ত্রাসবিরোধী কমিটি গঠনের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এতে অভূতপূর্ব সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সারাদেশের ৬৪ জেলার মানুষের সঙ্গে আমি কথা বলেছি। সারাদেশে কমিটি গঠনের মাধ্যমে গণসচেতনতা সৃষ্টির পাশাপাশি জঙ্গী-সন্ত্রাসীদের খুঁজে বের করা হবে। বাংলাদেশে কোন জঙ্গী-সন্ত্রাসীদের ঠাঁই হবে না। এদের সমূলে মূলোৎপাটন করে বাংলাদেশকে আমরা শান্তির দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করবই ইনশাল্লাহ। খালেদা জিয়া কী সরকার উৎখাত করতে চেয়েছিলেন ॥ গুলশান, শোলাকিয়াসহ পবিত্র নগরী মদিনা ও ফ্রান্সের নিস শহরে সন্ত্রাসী জঙ্গী হামলায় দেশী-বিদেশী নাগরিক নিহত হওয়ায় এবং বিশ্বব্যাপী সংঘটিত জঙ্গী ও সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় নিন্দা প্রস্তাবের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নেন ২৪ সংসদ সদস্য। তারা এসব জঙ্গী-সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় বিএনপি-জামায়াতকে দায়ী করে প্রশ্ন তুলেছেন যে, খালেদা জিয়া কী জঙ্গীদের নিয়ে রক্তাক্ত অভ্যুত্থান ঘটিয়ে সরকার উৎখাত করতে চেয়েছিলেন? গুলশান-শোলাকিয়াসহ বিভিন্নস্থানে জঙ্গী-সন্ত্রাসী হামলার সঙ্গে খালেদা জিয়া পরোক্ষভাবে জড়িত কিনা, তা খুঁজে বের করার জন্যও গোয়েন্দা সংস্থার প্রতি আহ্বান জানিয়ে তারা বলেন, জঙ্গী-সন্ত্রাসী কয়েকটি হামলা চালিয়ে সরকার পতন ঘটানো যাবে না। মানবশক্তির কাছে এই দানবীয় অশুভ শক্তির পরাজয় অবশ্যম্ভাবী। বিএনপি-জামায়াত জঙ্গীর দল, তাই এদের সঙ্গে কোনদিন ঐক্য হবে না, হতে পারে না। অগ্নিসন্ত্রাসকারী, জ্বালাও-পোড়াওকারীদের বাদ দিয়ে প্রগতি, মানবতা ও শান্তির পক্ষের সকল রাজনৈতিক দলের মধ্যে দ্রুত জাতীয় সংলাপ করারও আহ্বানও জানিয়েছেন কেউ কেউ। স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে মঙ্গলবার জাতীয় সংসদে কার্যপ্রণালী বিধির ১৪৭ বিধি অনুযায়ী সাধারণ আলোচনার প্রস্তাব আনেন সরকারী দলের শেখ ফজলুল করিম সেলিম। আলোচনায় অংশ নেন বিরোধী দলের নেতা বেগম রওশন এরশাদ, প্রবীণ পার্লামেন্টারিয়ান সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ এম মাহমুদ আলী, নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, আওয়ামী লীগের জাহাঙ্গীর কবির নানক, ডা. দীপু মনি, আবদুল মান্নান, লে. কর্নেল (অব) ফারুক খান, আবদুল মতিন খসরু, হুইপ শহীদুজ্জামান সরকার, আফম বাহাউদ্দিন নাছিম, ড. হাছান মাহমুদ, ফজিলাতুন নেসা বাপ্পি, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও বিমানমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, জাসদ সভাপতি ও তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, মইন উদ্দীন খান বাদল, বিএনএফের আবুল কালাম আজাদ, তরিকত ফেডারেশনের নজিবুল বশর মাইজভা-ারী, স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য তাহজীব আলম সিদ্দিকী, জাতীয় পার্টির জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু, কাজী ফিরোজ রশীদ। আলোচনা শেষে স্পীকার ভোটে দিলে সর্বসম্মতভাবে কণ্ঠভোটে নিন্দা প্রস্তাবটি গৃহীত হয়। আলোচনায় অংশ নিয়ে হামলার ঘটনার তীব্র নিন্দা জানানোর পাশাপাশি জাতীয় ঐক্যের আহ্বান জানিয়ে বিরোধী দলের নেতা বেগম রওশদ এরশাদ বলেন, সম্মিলিতভাবে এই পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হবে। সন্ত্রাস-জঙ্গীবাদ দেশ, জাতি, মানবতা ও উন্নয়নের শত্রু। আর গুলশানের ঘটনা একদিনে হয়নি, দীর্ঘদিনের পুঞ্জীভূত ক্ষোভের বহির্প্রকাশ। আমরা তরুণদের ব্যাপকভিত্তিক কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পারিনি। কিছু ব্যক্তি এসব বেকার তরুণকে বিভ্রান্ত করে নিজেদের কাজে ব্যবহার করছে। দেশের ৫ কোটি ছেলের কোন কাজ নেই। এই বেকারত্বের সুযোগ নিয়েই তাদের বিপথে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ব্যাপক কর্মসংস্থানের সৃষ্টি এবং সন্ত্রাস-জঙ্গীবাদ শক্ত হাতে দমনের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, তরুণদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে না পারলে এত ফ্লাইওভার, ট্যানেল, মেট্্েরারেল করে কি লাভ। এত বিদেশীকে হত্যার পর বিদেশীরা সব চলে যাচ্ছে। বিদেশীদের আস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে। পুলিশ বাহিনীকে ঢেলে সাজাতে হবে, আধুনিক অস্ত্র ও প্রশিক্ষণ দিতে হবে। সকলে মিলেমিশে জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে হবে এবং জঙ্গী-সন্ত্রাস মোকাবেলা করতে হবে। সরকারী দলের সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেন, এসব জঙ্গী-সন্ত্রাসী হামলার আসল কারণ মৃত্যুদ-াদেশপ্রাপ্ত যুদ্ধাপরাধী মীর কাশেম আলী। দিনে যার হাজার হাজার কোটি টাকা আয়। এই টাকা দিয়েই এসব করা হচ্ছে। এ্যান্টি-টেররিজম এ্যাক্টকে কার্যকর করতে হবে। দু’একটা হামলা করে সরকারকে উৎখাত করা যাবে না। আর জঙ্গী-সন্ত্রাসী থাকা দলের সঙ্গে কোন ঐক্য হতে পারে না। ঐক্য চাইলে খালেদা জিয়াকে জামায়াত-শিবির বাদ দিতে হবে। কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশে কিছু হলেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র হেদায়েত করে, এটা আইএস করছে। খোদ আমেরিকা, ফ্রান্সসহ নানা দেশে হামলা কে করছে? তাদের দেশের পুলিশ একের পর এক পটল তুলছে। নিজের দেশে আইএস রেখে অন্য দেশে খবর দালালি করছে। হামলার পর খালেদা জিয়া বললেন, এটা নাকি রক্তাক্ত অভ্যুত্থান! সারারাত স্বপ্ন দেখেছেন এই ঘটনার পর কেউ এসে তাকে ক্ষমতায় বসাবেন। কিন্তু তার সেই স্বপ্ন পূরণ হয়নি। স্বপ্নভঙ্গের খালেদা জিয়া ঐক্যের কথা বললেন। কিন্তু হায়েনাদের সঙ্গে হরিণের ঐক্য যেমন হয় না তেমনি তাদের সঙ্গে ঐক্য হতে পারে না। প্রস্তাব উত্থাপন করে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম বলেন, এই হামলার সময় লন্ডনে থাকা তারেক জিয়া পাকিস্তান, বাংলাদেশসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে ফোন করে কথা বলেছেন। আর খালেদা জিয়া ঘটনার নিন্দা না করে বলেছেন, সরকার নাকি ব্যর্থ হয়েছে! পরোক্ষভাবে খালেদা জিয়া এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত কিনা, বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য গোয়েন্দা সংস্থার প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, সব সন্ত্রাসী বা জঙ্গী হামলা একই সূত্রে গাঁথা। এরা একাত্তরের পরাজিত শক্তি পাকিস্তানের এজেন্ট। ঘটনার পর খালেদা জিয়া বলেন, রক্তাক্ত অভ্যুত্থান হয়েছে। তবে কী খালেদা জিয়া জঙ্গীদের নিয়ে রক্তাক্ত অভ্যুত্থান ঘটিয়ে সরকার উৎখাত করতে চেয়েছিলেন? তিনি বলেন, একাত্তরের স্টাইলে এখনও বিএনপি-জামায়াত সারাদেশে গণহত্যা চালিয়ে যাচ্ছে। এরা জঙ্গী সংগঠন। এদের সঙ্গে কোনদিন কোন ঐক্য হতে পারে না। তাই যতই ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত করা হোক না কেন, বাংলাদেশের মাটিতে কোন জঙ্গী-সন্ত্রাসীর ঠাঁই হবে না। এদের নির্মূল করা হবেই, হবে। বিমানমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন বলেন, প্রথমে সাম্প্রদায়িক আবহ এবং আন্তর্জাতিকিকীরণের লক্ষ্যে পরিকল্পিভাবে প্রথমে বিভিন্ন ধর্মের মানুষকে হত্যা এবং পরে গুলশানের ঘটনা ঘটানো হলো। গুলশানের ঘটনার পর যখন পুরো দেশ স্তম্ভিত, ঠিক তখন বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া সরকারের পদত্যাগ ও নতুন নির্বাচনের দাবি জানালেন। এতেই স্পষ্ট হয়, কারা এসব কর্মকা- ঘটাচ্ছে। সন্ত্রাস-জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে গোটা জাতি আজ ঐক্যবদ্ধ হয়েছে, জঙ্গীবাদী দলগুলোর সঙ্গে কোন ঐক্যের প্রয়োজন নেই। তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু সব জঙ্গী-সন্ত্রাসী হামলার জন্য বিএনপি-জামায়াতকে দায়ী করে বলেন, বর্বরতার কাছে আমরা কোনদিনই মাথা নত করব না, জীবনের চাকা থামাতে পারবে না। গুলশান ও শোলাকিয়ার হামলা কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। বিএনপি-জামায়াত চক্র ও খালেদা জিয়া অস্বাভাবিক সরকার আনতে দীর্ঘদিন ধরেই ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। অতীতের সকল ঘটনার সঙ্গে গুলশানের ঘটনাও একইসূত্রে গাঁথা। আগুনযুদ্ধে পরাজিত হয়েই প্রথমে গুপ্তহত্যা এবং পরে বিদেশী হত্যার ঘৃণ্য পথ তারা বেছে নিয়েছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ এম মাহমুদ আলী বলেন, গুলশানের হামলায় দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ হয়নি। বরং এই জঘন্য হামলার পর সারাবিশ্বের নেতারা নিন্দা জানিয়ে বর্তমান সরকারকে সব ধরনের সহযোগিতার প্রস্তাব দিয়েছেন। হত্যার শিকার ইতালি ও জাপানের সরকারও বাংলাদেশে তাদের সব ধরনের সহযোগিতা অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছে। নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান বলেন, নামাজ আদায় না করে যারা মানুষ হত্যা করে তারা কোনদিনই মুসলমান হতে পারে না। ইসলামে সন্ত্রাস-জঙ্গীবাদ-হত্যা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। এসব জঙ্গী-সন্ত্রাসীকে সহযোগিতা ও ব্যবহার করে বিএনপি-জামায়াতের সরকার উৎখাতের স্বপ্ন কোনদিনই পূরণ হবে না। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, এসব জঙ্গী হামলা একসূত্রে গাঁথা। একই নেতার নেতৃত্বে-নির্দেশনায় এসব হত্যাকা- চালিয়ে যাচ্ছে। জামায়াত-শিবিরের মতাদর্শে বিভিন্ন জঙ্গী সংগঠনের নামে একের পর এক হামলা চালাচ্ছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সম্পন্ন করে আমরা যখন দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি তখনই এসব হামলার ঘটনা ঘটছে। সব হত্যাকা-ের রহস্য উদঘাটন করেছি; কারা করছে, কাদের নির্দেশে ও মদদে এসব ঘটনা ঘটছে তাদের প্রায় সবাইকে চিহ্নিত করেছি। এরা কেউই রেহাই পাবে না। আবদুল মান্নান বলেন, যে দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক গভীর সেই দেশের নাগরিকদেরই হত্যা করা হয়েছে। ধর্ম বা আদর্শ নয়, হামলাকারীদের মূল উদ্দেশ্যই ছিল বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ ও অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করা। একমাত্র শেখ হাসিনাই পারবেন এসব সন্ত্রাস-জঙ্গী দমন করতে, অন্য কেউ নন। জাতীয় পার্টির জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে এই প্রথম মর্মন্তুদ ঘটনা ঘটানো হয়েছে। সন্ত্রাস প্রগতি, উন্নয়ন, মানবতা ও শান্তির শত্রু। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে সম্মিলিতভাবেই এদের নির্মূল করতে হবে। এই ঘটনায় জাতীয় ঐক্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। অগ্নিসন্ত্রাসকারী, জ্বালাও পোড়াওকারীদের বাদ দিয়ে যারা শান্তি ও প্রগতির পক্ষে তাদের নিয়ে জাতীয় সংলাপে বসার জন্য তিনি সরকারের কাছে জোর দাবি জানান। জাসদের মইন উদ্দীন খান বাদল বলেন, সন্ত্রাসবাদের পেছনে সা¤্রাজ্যবাদী পশ্চিমাদের ব্যর্থতা দায়ী। ইসলামের নামে যারা এসব হামলা করছে, আসলে এরা ইসলামেরই শত্রু। মাত্র ৭ মিনিটেই আমাদের নিরাপত্তা বাহিনী জঙ্গীদের খতম করে অনেক জিম্মিকে উদ্ধার করেছে। পৃথিবীর আক্রান্ত বড় বড় শক্তিধর দেশও সেই নজির সৃষ্টি করতে পারেনি। তরিকত ফেডারেশনের নজিবুল বশর মাইজভা-ারী বলেন, হুজি, আনসারুল্লাহ বাংলাটিম, জেএমবিসহ নানা নামে বিএনপি-জামায়াত জোট আইএস ও মোসাদের মাধ্যমে জঙ্গী-সন্ত্রাস চালিয়ে সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্র করছে। এরা কোনদিন মুসলমান হতে পারে না, ইসলামের চরম শত্রু। বিএনএফের আবুল কালাম আজাদ বলেন, আমার নির্বাচনী এলাকা গুলশানে এই ভয়াবহ হামলার ঘটনা ঘটেছে। প্রচলিত পদ্ধতিতে জঙ্গী-সন্ত্রাসী দমন হবে না। সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্র থেকেই এই হামলা ঘটেছে কিনা, তা খুঁজে বের করতে একটি সংসদীয় তদন্ত কমিটি গঠনের দাবি জানান তিনি। আওয়ামী লীগের জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, খালেদা জিয়া-তারেক জিয়ার অগ্নিসন্ত্রাস ও মানুষকে পুড়িয়ে হত্যার মহোৎসব দেশবাসী দেখেছে। এরই ধারাবাহিকতায় এরাই গুলশান ও শোকালিয়ায় হামলার ঘটনা ঘটিয়েছে। ডা. দীপু মনি বলেন, পৃথিবীর সকল দেশই কোন না কোনভাবেই জঙ্গী হামলায় আক্রান্ত হয়েছে। তবে গুলশানের হামলার ঘটনাই প্রথম নয়, ২১ আগস্ট ভয়াল গ্রেনেড হামলাসহ বহু হামলা ঘটেছে। ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য বিএনপির মদদে জামায়াত জঙ্গী-সন্ত্রাসী হামলার পৃষ্ঠপোষকতা, অর্থায়ন ও মদদ দিচ্ছে। সরকার ও জনগণের ঐক্য হয়ে গেছে। জঙ্গী-সন্ত্রাসীদের কারখানা, পৃষ্ঠপোষক ও ব্যবহারকারীদের সঙ্গে ঐক্যের কোন প্রশ্নই ওঠে না।
×