ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

কোহিনূর শম্পা

ক্রীড়াঙ্গনের সুখী দম্পতি

প্রকাশিত: ০৬:১৮, ২০ জুলাই ২০১৬

ক্রীড়াঙ্গনের সুখী দম্পতি

দুই জগতের দুই তারকা। একজন ফুটবলে আর অন্যজন টেনিসে। তারপরও গত দুই বছর ধরেই পাদপ্রদীপের আলোয় বাস্তিয়ান শোয়েইনস্টেইগার ও আনা ইভানোভিচ। দুজনেই যে একে অন্যের প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছিলেন! অবশেষে সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে বিয়ের পিঁড়িতে বসলেন ফুটবল ও টেনিসের জনপ্রিয় দুই তারকা। গত সপ্তাহে ভেনিস সিটি হলে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সেরে নেন তারা। বিয়ের অনুষ্ঠানে সার্বিয়ার আনা ইভানোভিচের বাবা-মা উপস্থিত ছিলেন। আর জার্মান অধিনায়ক শোয়েনস্টেইগারের পক্ষ থেকে বিয়েতে ছিলেন তার বাবা ও বড় ভাই। তবে জাতীয় দল কিংবা শোয়েনস্টেইগারের বর্তমান ক্লাব ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের কোন ক্লাব সতীর্থের উপস্থিতি ছিল কি না সে ব্যাপারে কিছু জানা যায়নি। অন্যদিকে কোন টেনিস তারকার উপস্থিতির কথাও জানা যায়নি। দুই তারকা দুই দেশ কিংবা ভিন্ন দুই জগতের হলেও মনের টানে মিলে গেছেন একই বিন্দুতে। গত দুই বছর ধরেই বিভিন্নভাবে ফুটে উঠেছে তাদের প্রেমের রসায়ন! তবে, ঘটনার প্রথম সূত্রপাত ছিল ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে। হাতে-হাত রেখে নিউইয়র্কের রাস্তায় আনা ইভানোভিচ আর বাস্তিয়ান শোয়েইনস্টেইগারকে হাঁটতে দেখা যায় তাদের। সেই ছবি প্রকাশ্যে আসার পর থেকেই তাদের সম্পর্ক নিয়ে গুঞ্জনের ডালপালা মেলতে শুরু। এরপর বড় চমকটা উপহার দেন শোয়েইনস্টেইগার নিজেই। ইভানোভিচের জন্মদিনে হাজির হয়ে যান তিনি। ঘটনা অবশ্য এখানেই শেষ নয়। ইভানোভিচের বাড়িতে বেড়ানোর পর, সঙ্গিনীকে নিয়েই জার্মানিতে ফিরেন শোয়েইনস্টেইগার। এরপর নিয়মিতই বিভিন্ন অনুষ্ঠানে দেখা গেছে তাদের। ইভানোভিচের ম্যাচ দেখতে গ্যালারিতে যাওয়াটাকে তো একেবারে নিয়মিতই করে ফেলেন জার্মান তারকা। আর শোয়েইনস্টেইগার যখন ইনজুরিতে ভোগেন তখন তার সেবায় সার্বক্ষণিক পাশে ছিলেন ইভানোভিচ। তবে জানিয়ে রাখা ভাল যে, তাদের কিন্তু এটাই প্রথম প্রেম নয়। এর আগে ইভান পাউনিকের সঙ্গে সম্পর্ক ছিল আনা ইভানোভিচের। কিন্তু ২০১৩ সালের শেষ দিকে সেই সম্পর্কের ইতি টানেন বিশ্ব টেনিসের অন্যতম সেরা তারকা। আর জার্মান মডেল সারা ব্র্যান্ডনার সঙ্গে প্রেমে মজেছিলেন সাবেক বেয়ার্ন মিউনিখের তারকা ফুটবলার বাস্তিয়ান শোয়েইনস্টেইগারও। সারা ব্র্যান্ডনার সঙ্গে শোয়েইনস্টেইগারের প্রথম দেখা ২০০৭ সালে মিউনিখে শপিং করতে গিয়ে। তবে তা এখন শুধুই অতীত। ইভানোভিচকে নিয়েই এখন স্বপ্নের পৃথিবী গড়তে চান জার্মান ফুটবলের সেরা তারকা শোয়েইনস্টেইগার। গত এক দশক ধরেই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে অবস্থান করছেন আনা ইভানোভিচ। তবে স্বপ্নের মেলবন্ধন খুঁজে পান ২০০৮ সালে। সে বছরই প্রথম কোন গ্র্যান্ডসøাম টুর্নামেন্টের ফাইনালে উঠেন তিনি। কিন্তু দুর্ভাগ্য তার। সেবার অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের ফাইনালের টিকেট নিশ্চিত করলেও স্বপ্নভঙ্গ হয় সার্বিয়ান তারকার। রাশিয়ার মারিয়া শারাপোভার কাছে হেরে যান তিনি। তারপরও হাল ছাড়েননি ইভা। ফ্রেঞ্চ ওপেনে আবারও ফাইনালে জায়গা করে নেন। এবার আর স্বপ্নের পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি প্রতিপক্ষ। ফাইনালে দিনারা সাফিনাকে হারিয়ে প্রথমবারের মতো স্বপ্নের গ্র্যান্ডসøাম জয়ের স্বাদ পান তিনি। টেনিস কোর্টে অসাধারণ পারফর্মেন্স উপহার দেয়ার সৌজন্যে সে বছরই বিশ্ব টেনিস র‌্যাঙ্কিংয়ের এক নম্বর স্থানটি দখল করে নেন ইভানোভিচ। এরপর কেটে গেছে দীর্ঘ আট বছর। কিন্তু এই সময়ের মধ্যে আর কখনোই মেজর কোন টুর্নামেন্ট জিততে পারেননি তিনি। তবে কখনই হতাশায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়েননি ১৫টি ডব্লিউটিএ শিরোপা জেতা এই টেনিস তারকা। সবসময়ই কোর্টে থাকার চেষ্টা করেছেন তিনি। প্রতিপক্ষের বিপক্ষে সর্বদা নিজের সেরাটা দেয়ার চেষ্টা করেছেন ইভানোভিচ। কিন্তু কোর্টের লড়াইয়ে বার বারই ব্যর্থ হয়েছেন ২৮ বছর বয়সী এই তারকা খেলোয়াড়। ইতোমধ্যেই চলতি মৌসুমের তিন গ্র্যান্ডসøাম টুর্নামেন্ট শেষ। কিন্তু নতুন মৌসুমে নতুন উদ্যমে শুরুর প্রত্যয় ব্যক্ত করলেও নিষ্প্রভ রয়ে গেলেন ইভানোভিচ। তবে তার সামনে এখনও বাকি ইউএস ওপেন। বিয়ের পর নিশ্চই জ্বলে উঠবেন তিনি। ইভানোভিচের ভক্তরাও চান মৌসুমের শেষ গ্র্যান্ডসøাম টুর্নামেন্ট ইউএস ওপেনে জ্বলে উঠুক। ইভানোভিচ টেনিস কোর্টে নিষ্প্রভ থাকলেও মাঠে ঠিকই আলো ছড়িয়েছেন বাস্তিয়ান শোয়েইস্টেইগার। ২০১৪ সালে ব্রাজিল বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন হওয়া জার্মান দলের অন্যতম গুরুত্বপুর্ণ সদস্য যে এই তারকা ফুটবলার। সদ্য সমাপ্ত ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপেও অসাধারণ পারফর্মেন্স উপহার দিয়েছে জার্মানি। যেখানে অধিনায়কের ভূমিকায় ছিলেন শোয়েইনস্টেইগার। কিন্তু তার নেতৃত্বে ইউরোর সেমিফাইনালেই থেমে যায় ব্রাজিল বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়নরা। টুর্নামেন্টের শেষ চারে স্বাগতিক ফ্রান্সের কাছে হেরে ইউরো থেকে বিদায় নেয় শোয়েইনস্টেইগারের জার্মানি। আগামী মাস থেকেই শুরু হবে ক্লাব ফুটবলের লড়াই। তাই ইউরোর পর এই সময়টাকেই শোয়েইনস্টেইগার বেছে নিলেন দীর্ঘ দুই বছরের প্রেমের সম্পর্কের ইতি টেনে ভালবাসার বান্ধবীকে নিয়ে ঘর বাধার। গত বছরের জুলাইয়ে স্বদেশী ক্লাব বেয়ার্ন মিউনিখ ছেড়ে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে যোগ দেন তিনি। শোয়েইনস্টেইগার জার্মানির প্রথম কোন খেলোয়াড় হিসেবে ইংলিশ প্রিমিয়ার লীগের সবচেয়ে সফল ক্লাব ম্যানইউতে যোগ দেন। তবে ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে নিজেকে সেভাবে মেলে ধরতে পারেননি তিনি। এবার সেই ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নিয়ে ক্যারিয়ারের গোধূলিবেলায় নতুন করে জ্বলে উঠতে চাইবেন শোয়েইনস্টেইগার। আর প্রেরণা হিসেবে তো কাজ করবেন ইভানোভিচ। শুধু তাই নয়, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের নতুন কোচ জোশে মরিনহোও এবার বেশ সতর্ক। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের অভিজ্ঞ খেলোয়াড়দের একজন শোয়েইনস্টেইগার। সাবেক বেয়ার্ন তারকার এই অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগাতে প্রস্তুত স্পেশাল ওয়ানও। কেননা চেলসি থেকে বরখাস্ত হওয়া মরিনহোর জন্য শোয়েইনস্টেইগারের ম্যানইউকে লীগ শিরোপা জেতানোটাই যে এখন বড় চ্যালেঞ্জ।
×