ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

লিটন আব্বাস

‘তবু বিশ্বসেরা মেসি’

প্রকাশিত: ০৬:১৭, ২০ জুলাই ২০১৬

‘তবু বিশ্বসেরা মেসি’

যন্ত্রণার শেষ নেই লিওনেল মেসির। টানা তিন বছর তিনটি ট্রফি হারিয়ে দিশাহারা ক্ষুদে জাদুকর আর্জেন্টিনার জার্গি গায়ে আর না খেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এরপর থেকে তাঁকে ফেরাতে বিশ্বময় সবাই সোচ্চার। এ নিয়ে চলছে বিভিন্ন প্রচারণাও। এই সময়ে ফুটবলের বর্তমান ও সাবেক তারকা, ফুটবলের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা পাঁচবারের ফিফা সেরা তারকাকে ফেরার অনুরোধ করছেন। সবার কথার সারমর্ম একটাই, আন্তর্জাতিক ট্রফি জিতুক আর না জিতুক, মেসিই বর্তমান বিশ্ব ফুটবলের সেরা তারকা। রেকর্ড সর্বোচ্চ পাঁচবারের ফিফা সেরা ফুটবলার মেসি। ক্লাব দল বার্সিলোনার হয়ে জাদুকরী পারফর্মেন্সের কারণে এমন স্বর্ণসাফল্য পেয়েছেন। কিন্তু জাতীয় দলের জার্সিতে জিততে পারেননি একটিও আন্তর্জাতিক ট্রফি। তাইতো ত্যক্ত-বিরক্ত হয়ে অবসর নিয়েছেন। সেই থেকে আর্জেন্টাইন তারকাকে দুয়ো শুনতে হচ্ছে। কিন্তু বিশ্বের অনেক সাবেক ও বর্তমান তারকারা এই দুঃসময়ে মেসির পাশে আছেন। এই যেমন সাবেক ব্রাজিলিয়ান তারকা রোনাল্ডিনহো বলেছেন, আন্তর্জাতিক ট্রফি ছাড়াই সেরা মেসি। তিনি আরও বলেছেন, মেসি না ফিরলে বরং ফুটবলেরই ক্ষতি। রোনাল্ডিনহো স্বর্ণসময় পেছনে ফেলেছেন অনেক আগেই। তার পায়ের জাদুতে একসময় মোহবিষ্ট ছিল ফুটবলবিশ্ব। ব্রাজিলের ২০০২ সালের বিশ্বকাপ জয়ের অন্যতম কারিগর ছিলেন তিনি। ২০০৪ ও ২০০৫ সালে টানা দুবার ফিফা বর্ষসেরা ফুটবলারের পুরস্কার জিতে নিজেকে নিয়ে গিয়েছিলেন অন্য উচ্চতায়। মেসি যোগ দেয়ার আগে তাঁকে ঘিরেই সাজানো হতো বার্সিলোনার রণকৌশল। এখন নিজের ভূমিকায় মেসিকে দেখে দারুণ খুশি রোনি। মেসি যেভাবে নেইমারকে দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন, তা নিয়েও তিনি আনন্দিত। ২০০৪ সালে বার্সিলোনার যুব দল থেকে মূল দলে যোগ দেয়ার সময় মেসি নেহাতই এক তরুণ ফুটবলার ছিলেন। তবে শুরুতেই তাঁকে ‘ছোট ভাই’য়ের মতো বুকে টেনে নিয়েছিলেন রোনাল্ডিনহো। দুজনের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক মাঠেও প্রতিফলিত হয়ে বার্সাকে পাইয়ে দেয় অনেক সাফল্য। সেসব স্বর্ণসময়ের কথা এখনও মানসপটে উজ্জ্বল ৩৬ বছর বয়সী রোনাল্ডিনহোর। ভারতের চেন্নাইয়ে প্রিমিয়ার ফুটসাল টুর্নামেন্ট খেলতে এসে বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেন তিনি। সাংবাদিকদের রোনাল্ডিনহো বলেন, মেসি যখন বার্সিলোনায় যোগ দিয়েছিল, তখন সে একদম বাচ্চা ছেলে। আমি অবশ্য তখনই তার মধ্যে প্রতিভার স্ফুলিঙ্গ দেখতে পেয়েছিলাম। আমি তার সঙ্গে খেলাটা দারুণ উপভোগ করতাম। শুধু মাঠে নয়, মাঠের বাইরেও আমাদের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। আমি মেসিকে যেমন সাহায্য করেছিলাম, বার্সিলোনায় যোগ দেয়ার পর নেইমারকে মেসি ঠিক তেমনই সাহায্য করেছে। আমি এ নিয়ে উচ্ছ্বসিত। একজন সিনিয়র খেলোয়াড়ের কাছে দল এমনই প্রত্যাশা করে। ১৪ বছর আগে ব্রাজিলের পঞ্চম ও শেষ বিশ্বকাপ জয়ে বিশাল অবদান রাখা রোনাল্ডিনহো রিও অলিম্পিকে নেইমারদের সাফল্যের ব্যাপারে আশাবাদী। অলিম্পিক ফুটবলে এখন পর্যন্ত ব্রাজিল শিরোপা জিততে পারেনি। তবে এবার হবে বিশ্বাস তার। এ প্রসঙ্গে রোনি বলেন, আমাদের দলটা ভারসাম্যপূর্ণ। অতীতের মতো বর্তমান ব্রাজিল দলেও অনেক প্রতিভাবান খেলোয়াড় আছে। অতীতের সঙ্গে বর্তমানের একটাই শুধু বড় ধরনের পার্থক্য দেখতে পাচ্ছি। এখন জাতীয় দলের খেলোয়াড়রা খুব কম সময়ই একসঙ্গে খেলার সুযোগ পায়। আর তাই সামর্থ্যরে সেরাটা দেয়া কঠিন হয়ে পড়ে তাদের জন্য। রোনাল্ডিনহোর অনেক কীর্তি আজও আলোকিত হয়ে আছে। ২০০২ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ফ্রিকিক থেকে এক অবিশ্বাস্য গোল করেছিলেন তিনি। গোলরক্ষক ডেভিড সিম্যানের মাথার ওপর দিয়ে জালে ঢোকা গোলটাই শেষ পর্যন্ত জয় এনে দিয়েছিল ব্রাজিলকে। অসাধারণ গোলটি সম্পর্কে স্মৃতিচারণ করে রোনাল্ডিনহো বলেন, ইংল্যান্ড ম্যাচের জন্য আমরা খুব ভালভাবে প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। অনেক ভিডিও দেখে ওদের দুর্বলতাগুলো চিহ্নিত করেছিলাম আমরা। আমি জানতাম যে ফ্রিকিকের সময় সিম্যান একটু এগিয়ে আসতে পছন্দ করে। তার পরে যা হয়েছিল, তা আসলে সহজাত। ফুটবলের সর্বোচ্চ পর্যায়ে প্রতিপক্ষের দুর্বলতা কাজে লাগানোই তো প্রত্যাশিত। মেসির অবসর প্রসঙ্গে রোনালিন্ডহো বলেন, আমার কাছে মেসি অবসর নেয়ায় বিশ্ব ফুটবলের কোন পরিবর্তন হয়নি। এখনও মেসি বিশ্বসেরা ফুটবলার। আন্তর্জাতিক ফুটবলে এখনও তার অনেক কিছু দেয়ার আছে। মেসি না খেললে ফুটবলেরই ক্ষতি। এদিকে আন্তর্জাতিক ফুটবল থেকে মেসির অবসর আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ ফুটবলকে হুমকিতে ফেলে দিতে পারে বলে সতর্ক করে দিয়েছেন দেশটির সাবেক জাতীয় দলের কোচ সিজার লুইস মেনট্টি। ১৯৭৮ সালে আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ শিরোপা জয়ে ভূমিকা রাখা মেনট্টির মতে মেসিবিহীন আর্জেন্টিনা ২০১৮ সালের রাশিয়া বিশ্বকাপের চূড়ান্ত পর্বে খেলার যোগ্যতা অর্জনই করতে পারবে না। তিনি বলেন, দক্ষিণ আমেরিকা থেকে মাত্র ৫টি দল বিশ্বকাপে অংশগ্রহণের সুযোগ পাবে। আর মেসি না ফিরলে আর্জেন্টিনা দলের বাছাইপর্বের বাধা পেরুনোটাই হুমকির মুখে পড়বে। তাতে হয়ত ২০২২ সালের কাতার বিশ্বকাপে অংশগ্রহণের লক্ষ্য নিয়েই আমাদের শুরু করতে হবে। বিশ্বকাপের বাছাইপর্বে দক্ষিণ আমেরিকা অঞ্চলে এ পর্যন্ত ছয়টি ম্যাচ খেলে ১১ পয়েন্ট নিয়ে তৃতীয স্থানে আছে আজেন্টিনা। তাদের চেয়ে ২ পয়েন্ট বেশি নিয়ে তালিকার শীর্ষে আছে উরুগুয়ে। শতবর্ষী কোপা আমেরিকার ফাইনালে চিলির কাছে হারের পর থেকেই অগোচরে আছেন মেসি। তাঁকে ফেরাতে বিভিন্ন কর্মসূচী পালন করে চলেছে আর্জেন্টাইনরা। তবে এসবে আপাতত কোনো ভ্রƒক্ষেপ নেই বার্সিলোনা জাদুকরের। সব হতাশা, কষ্ট, বেদনা হয়ত ভুলেই গেছেন রেকর্ড সর্বোচ্চ পাঁচবারের ফিফা সেরা ফুটবলার। তার নমুনা মিলেছে। মেসি পরিবারের সদস্যদের নিয়ে আনন্দ-বিনোদনে সময় অতিবাহিত করছেন। কাতালানদের হয়ে নতুন মৌসুম শুরুর আগে পরিবার নিয়ে অবকাশ যাপন করেছেন। স্পেনের ভূমধ্যসাগরীয় ইবিজা দ্বীপে আনন্দঘন সময় কাটান মেসি। তার সঙ্গে ছিলেন স্ত্রী এ্যান্টোনেল্লা রোকুজ্জো ও দুই সন্তান। অবকাশে মেসিকে বেশ ফুরফুরে ও নির্ভার দেখা গেছে। দুই ছেলেকে ও বান্ধবীকে নিয়ে ভাল সময়ই কাটিয়েছেন বার্সা তারকা। মেসির ঘনিষ্ঠজনের বরাদ দিয়ে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, আসছে ২০১৬-১৭ মৌসুমে বার্সিলোনার হয়ে ভালভাবে শুরু করার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করছেন মেসি। অর্থাৎ সব ঝক্কি-ঝামেলা পেরিয়ে সতেজ হয়ে মাঠের যুদ্ধে ফেরার অপেক্ষায় আছেন ২৯ বছর বয়সী এই ফুটবলার।
×