ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

রুমেল খান

ফুটবলার গড়ার কারিগর

প্রকাশিত: ০৬:১৭, ২০ জুলাই ২০১৬

ফুটবলার গড়ার কারিগর

জীবনটাই তার সংগ্রামময়। বাবা নেই। মা ও ছোট বোনকে নিয়ে তার ছোট পরিবার। স্বপ্ন ছিল নিজে ফুটবলার হবেন। অভাবের সংসার। বয়স যখন ১৮, তখন ফুটবলার হওয়ার তালিম শুরু করলেন। কিন্তু দুঃখ যার সাথী, তার কপালে কি সুখ সয়! কিছুদিন চেষ্টার পর পরিবারের পিছুটানের কারণে থেমে যায় তার প্রচেষ্টা। না থেমেও উপায় নেই। মা-বোনের মুখে তো আহার তুলে দেয়ার দায়িত্বটা তার কাঁধেই। সেজন্যই যোগ দেন স্থানীয় একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অফিস সহকারী হিসেবে। মনের মধ্যে একটা চাপা কষ্ট ছিল। নিজে ফুটবলার হতে পারলেন না। পারলেন না বিমানে চড়ে আকাশপথ পাড়ি দিয়ে ভিনদেশে খেলতে যেতে। তবে মনে মনে একটা পণ ঠিকই করে ফেললেন মামুন মিয়া। যে ভাবা, সেই কাজ। স্থানীয় সতীর্থ আমির ফয়সালকে নিয়ে গড়ে তুললেন ‘কেরানীগঞ্জ ফুটবল একাডেমি’। ২০১১ সালে এটির গোড়াপত্তন করেন। সামান্য চাকরি করেন। বেতন যৎসামান্য। তারপরও থেমে নেই তার ফুটবলার তৈরির কার্যক্রম। যে বেতন পান তার এক ভাগ একাডেমির কাজে ব্যয় করেন। আর এক ভাগ দিয়ে পরিবার-পরিজনের ভরণ-পোষণের ব্যবস্থা করেন। এভাবেই চলছে তার সংগ্রাম। এ প্রসঙ্গে ২৭ বছর বয়সী মামুন বলেন, ‘আমার স্বপ্ন ছিল নিজে ভালমানের ফুটবলার হব, জাতীয় দলের হয়ে খেলব, বিমানে চড়ে বিদেশে যাব খেলতে। নিজে যখন পারলাম না, তখন চেষ্টা করতে লাগলাম কি করে আমার স্বপ্নটা অন্যের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা যায়। সে লক্ষ্যেই একাডেমিটি গড়া।’ মামুনের সে আশা পূরণ হয়েছে। ইতোমধ্যেই তার একাডেমির এক খেলোয়াড় বিমানে চড়ে মিয়ানমার খেলে এসেছে। একাডেমির শুরুতেই মামুন পেয়ে যান ৫০ খেলোয়াড়। ঢাকার কেরানীগঞ্জের ব্রাহ্মণগাঁও হাইস্কুল মাঠেই গড়ে তুলেছেন এই একাডেমি। বর্তমানে একাডেমিতে ৭০ খেলোয়াড় আছে। নিয়মিত অনুশীলন করে ৪০-৪৫ ফুটবলার। সম্পূর্ণ বিনা খরচে এই একাডেমিতে ফুটবল প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। মামুন একা নিজেই কোচিং করান। মামুন ৪৫নং উত্তর পানগাঁও প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চাকরি করেন। ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা শারমিন নিশাতের ফুটবলপ্রেম সত্যিই উল্লেখ করার মতো। তিনি মামুনকে যথেষ্ট সহযোগিতা ও সাহস যুগিয়ে যাচ্ছেন। এছাড়াও স্থানীয়দের মধ্যে পারভেজ হোসেন, আমির ফয়সাল, বর্তমানে উক্ত ইউপির রাসেল মেম্বার, উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন, উপজেলা নির্বাহী অফিসার এবিএম ফকরুজ্জামান, ডাঃ আলতাফ হোসেন ও আফ্রিকা প্রবাসী মতিউর রহমান বাবু এই একাডেমির জন্য অর্থের যোগান দিয়ে থাকেন। মামুনের একাডেমি থেকে ফুটবলের তালিম নিয়ে বেশ কজন খেলোয়াড় নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার পথে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্যদের মধ্যে হচ্ছে- সৌরভ সরকার, রোমান হোসেন জিদান, ইব্রাহিম, মেহেদী হাসান শান্ত। সৌরভ সরকার অনুর্ধ ১৩ বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের হয়ে মিয়ানমার সফর করে। বর্তমানে সে সাভার বিকেএসপিতে স্কলারশিপ পেয়ে ওখানে প্রশিক্ষণরত। এছাড়াও মামুনের একাডেমির খেলোয়াড়রা বিগত প্রায় ৩/৪ বছর ধরে ঢাকা পাইওনিয়ার লীগের বিভিন্ন দলের হয়ে খেলে যাচ্ছে। যেহেতু মামুনের একাডেমিতে কোন খেলোয়াড়কে কোন টাকা-পয়সা দিতে হয় না, তাই একাডেমির আর্থিক অবস্থা তেমন ভাল নয়। মাঝে মাঝে যা কিছু অনুদান বা ব্যক্তি পর্যায় থেকে কিছু সাহায্য পাওয়া যায়, তাই দিয়েই কোন রকমে চলছে একাডেমিটি। খেলোয়াড়দের জন্য মাত্র ৮-৯ ফুটবল রয়েছে। নেই পর্যাপ্ত অন্য প্র্যাকটিস সরঞ্জামও। মামুনের আশা- যদি কোন সংস্থা বা ব্যক্তি বিশেষ মামুনের একাডেমির দিকে হাত বাড়ায়, তাহলে সুন্দরভাবে তার একাডেমিটি পরিচালিত হবে এবং তার মাধ্যমে নতুন নতুন খেলোয়াড় জাতীয় পর্যায়ে নিজেকে মেলে ধরতে পারবে। তার এই সুনীল স্বপ্ন কি পূরণ হবে?
×