ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের আলোচনায় সৈয়দ আশরাফ

মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ ও সতর্ক থাকতে হবে

প্রকাশিত: ০৫:৪৮, ২০ জুলাই ২০১৬

মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ ও সতর্ক থাকতে হবে

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম পঁচাত্তরের মতো মর্মান্তিক ঘটনার আর যেন পুনরাবৃত্তি না ঘটে সে ব্যাপারে সজাগ থাকতে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, পঁচাত্তরে আমরা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হারিয়েছি। সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি যেন আর না ঘটে। এ ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। ৭৫-এর ১৫ আগস্টের মতো ঘটনা এ দেশে যেন আর না ঘটে সেজন্য মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সকল শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, আমি খোলাখুলি বলতে চাইছি না, কিন্তু কি বোঝাতে চাইছি তা বুঝতে পারছেন বলে বিশ্বাস করি। রাজনীতিতে নীরবতা রয়েছে। ভয় এখানেই। মনে রাখবেন, গাছের পাতা যখন নড়ে না, ঝড়ের ভয় ঠিক তখনই। তখন বুঝতে হবে একটা কিছু হতে পারে। আর এ কারণেই অধিক সতর্কতার সময় এসেছে। সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। আপনাদের সব সময় মনে মনে একটা প্রস্তুতি রাখা দরকার। মঙ্গলবার রাজধানীর ইনস্টিটিউট অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স মিলনায়তনে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিল আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখতে গিয়ে এ আহ্বান জানান। জঙ্গীবাদ, সন্ত্রাস, গুপ্তহত্যা ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করার চেষ্টার প্রতিবাদে ওই আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। মুক্তিযোদ্ধা সংসদের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব) হেলাল মোর্শেদ খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পীকার এ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বি মিয়া, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। আলোচনা সভায় দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা মুক্তিযোদ্ধারা বক্তব্য দেন। আলোচনা সভা শেষে মিছিলসহ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের শিখা চিরন্তনে গিয়ে শপথ নেন মুক্তিযোদ্ধারা। এর আগে সকালে মুক্তিযোদ্ধা সংসদের জাতীয় নির্বাহী কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। কাউন্সিলে সংসদদের গঠনতন্ত্রের বিভিন্ন ধারা-উপধারা পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনের প্রস্তাবের মধ্যে রয়েছে সংসদের কমিটির মেয়াদ তিন বছরের পরিবর্তে পাঁচ বছর করা। সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম আরও বলেন, বলা হয় বাঙালী জাতি বীরের জাতি। বীরের জাতি হয়েও কিন্তু আমরা জাতির পিতাকে রক্ষা করতে পারিনি। পৃথিবীতে অনেক রাজনৈতিক হত্যাকা-ই ঘটেছে। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর গোটা পরিবারকে যেভাবে হত্যা করা হয়েছে, তা পৃথিবীর অন্য কোথাও ঘটেনি। শুধু তাই নয়, একটি দলকে ধ্বংস করার চেষ্টাও চলে। মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য সরকারের নেয়া নানা উদ্যোগের কথা তুলে ধরে মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, এ বছর থেকেই মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা ১০ হাজার টাকা করা হয়েছে। এ বছর থেকেই মুক্তিযোদ্ধারা দুটি উৎসব বোনাস পাবেন, যার পরিমাণ ২০ হাজার টাকা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইতোমধ্যে এ বিষয়ে অনুমোদন দিয়েছেন। তিনি বলেন, শীঘ্রই মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা যাচাই-বাছাই করে সবাইকে চূড়ান্ত সনদ ও পরিচয়পত্র দেয়া হবে। পাশাপাশি যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকাও যাচাই-বাছাই করার কথা তুলে ধরেন মন্ত্রী। নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদবিরোধী যে জাতীয় ঐক্য গড়ে উঠেছে, রণাঙ্গনের বীর মুক্তিযোদ্ধারা সেটাকে আরও সুদৃঢ় করবে। জাতীয় কনভেনশন করে সব শ্রেণী-পেশার মানুষকে নিয়ে গড়ে ওঠা এই ঐক্যকে সামনে এগিয়ে নেয়া হবে। জঙ্গীবাদের বিষবৃক্ষ রোপণ করেছেন জিয়া-খালেদা ॥ আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া জাতীয় ঐক্যের কথা বলে জাতির সঙ্গে বেইমানি করেছেন। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান ও বেগম খালেদা জিয়াই এদেশে জঙ্গীবাদের বিষবৃক্ষ রোপণ করেছেন। এখন জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে জাতীয় ঐক্যের কথা বলে জাতির সঙ্গে বেইমানি করছেন। মঙ্গলবার জাতীয় প্রেসক্লাবের তৃতীয় তলায় বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা পরিষদ আয়োজিত ‘জঙ্গীবাদ ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে জনগণের করণীয়’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন। সংগঠনের উপদেষ্টা কাউন্সিলর হাসিবুর রহমান মানিকের সভাপতিত্বে¡ সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এ্যাডভোকেট শামসুল হক টুকু, জাতিসংঘের সাবেক স্থায়ী প্রতিনিধি ড. এ কে এম আবদুল মোমেন, আওয়ামী লীগের উপ-কমিটির সহ-সম্পাদক এ্যাডভোকেট বলরাম পোদ্দার, এম এ করিম, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক অরুণ সরকার রানা প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। হাছান মাহমুদ বলেন, জামায়াত-শিবির, রাজাকার, আল-বদর সেদিন হানাদার পাকিস্তানী মিলিটারিদের সঙ্গে মিলে গণহত্যা, নারী ধর্ষণ, বুদ্ধিজীবী হত্যার মতো জঘন্য-বর্বর ঘটনার জন্য দায়ী। একাত্তরের সেসব দুর্বৃত্তদেরই নেতৃত্ব দিচ্ছেন খালেদা জিয়া। তার সঙ্গে কিসের সংলাপ? কিসের ঐক্য? মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে রাজাকারের ঐক্য হতে পারে না, হবেও না।
×