ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

ফরিদপুরে স্বেচ্ছাসেবক লীগের জঙ্গীবিরোধী সমাবেশে দুই শতাধিক নেতাকর্মী অসুস্থ

প্রকাশিত: ০৫:৪৮, ২০ জুলাই ২০১৬

ফরিদপুরে স্বেচ্ছাসেবক লীগের জঙ্গীবিরোধী সমাবেশে দুই শতাধিক নেতাকর্মী অসুস্থ

নিজস্ব সংবাদদাতা, ফরিদপুর, ১৯ জুলাই ॥ ফরিদপুরে আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের দুই শতাধিক নেতাকর্মী চোখের পীড়ায় আক্রান্ত হয়েছেন। সোমবার সন্ধ্যা সাতটার পর থেকে আক্রান্ত হওয়ার এ ঘটনা ঘটে। আক্রান্তরা সবাই একটি জনসভায় বক্তা, শ্রোতা হিসেবে অংশ নিয়েছিলেন। সোমবার বিকেলে শহরের থানা রোডে জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের উদ্যোগে সন্ত্রাস ও জঙ্গী বিরোধী এক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় নেতা, স্থানীয় নেতা ও জেলা আওয়ামী লীগসহ সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন। বিকেল চারটায় এ সমাবেশ শুরু হয়। শেষ হয় সন্ধ্যা সাতটার দিকে। সমাবেশ শেষ হওয়ার পর চোখের পীড়ায় আক্রান্ত হন নেতাকর্মীসহ দু’শতাধিক ব্যক্তি। সমাবেশে অংশ নেয়া কয়েক হাজার নেতাকর্মীর মধ্যে মঞ্চ ও মঞ্চের সামনের অংশে থাকা দুই শতাধিক নেতাকর্মী চোখের পীড়ায় অসুস্থ হয়ে ফরিদপুরের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। আক্রান্তরা সকলে চোখ জ্বালা-পোড়া, চোখ লাল হয়ে যাওয়া, চোখ দিয়ে পানি পড়াসহ বিভিন্ন উপসর্গে আক্রান্ত হয়েছেন। প্রত্যেকের চোখ লাল হয়ে ফুলে গেছে। এদের মধ্যে গুরুতর অসুস্থ বেশ কয়েকজন ফরিদপুর জেনারেল হাসপাতাল, মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও জহুরুল হক চক্ষু হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। ফরিদপুর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন শহর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মোঃ সেলিম হাসান। তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় কর্মসূচীর অংশ হিসেবে জঙ্গীবিরোধী সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এতে স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় নেতারাও উপস্থিত ছিলেন। সভা শেষ হয়ে গেলে সবাই যখন সভাস্থল ত্যাগ করার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন ঠিক সেই মুহূর্তে একে অপরের দিকে তাকিয়ে চোখের পাতা চুলকাতে থাকেন। এ সময় মঞ্চের সামনের অংশের প্রায় সবাইকেই চোখ জ্বালা-পোড়া করছে বলতে শোনা যায়। সেলিম হাসান বলেন, তারপর সেখান থেকে দলীয় নেতাকর্মী নিয়ে থানারোডে পার্টি অফিসে বসি। কিন্তু চোখ জ্বালা-পোড়া করায় সেখানেও বেশি সময় থাকতে না পেরে যে যার মতো বাসায় চলে আসি। বাসায় গিয়ে চোখে মুখে পানি নিতেই জ্বালা-পোড়া আরও বেড়ে যায়। তাৎক্ষণিক হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা নিতে হয়। জেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক এ্যাড. অনিমেষ রায় একইভাবে ঘটনা বর্ণনা দিয়ে বলেন, চোখে জ্বালার কারণে বাড়িতে ফিরি। রাতে খাবার জন্য হাতমুখ ধুতে গেলে চোখে পানি দিলেই যন্ত্রণা আরও বেড়ে যায়। পরে রাতেই হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা নিতে হয়েছে। চোখ লাল হয়ে ফুলে গেছে। ভেতরে খুব জ্বালা-পোড়া করছে। জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহ্বায়ক শওকত আলী জাহিদ বলেন, সন্ধ্যায় সমাবেশ শেষ হওয়ার পর রাত থেকেই বিভিন্ন এলাকা থেকে নেতাকর্মীদের অসুস্থ হওয়ার খবর আসতে থাকে। পরে হাসপাতালে গিয়ে নেতাকর্মীদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করি। এই ঘটনায় নেতাকর্মীসহ প্রায় দুইশ ব্যক্তি আক্রান্ত হয়েছেন। তিনি আরও বলেন, স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক শামীম শাহরিয়ার, কেন্দ্রীয় মানব সম্পদ বিষয়ক সম্পাদক মোখলেছুর রহমান, মেহেদী হাসানসহ কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা একইভাবে আক্রান্ত হয়েছেন। ফরিদপুর জেনারেল হাসপাতালের চক্ষু বিশেষজ্ঞ ও সার্জন মোঃ কামরুল হাসান বলেন, শুধু জেনারেল হাসপাতালেই আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীসহ প্রায় দেড় শতাধিক ব্যক্তি চিকিৎসা নিতে এসেছেন। এদের মধ্যে পাঁচজনকে ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে। তিনি বলেন, আক্রান্তরা সকলে টকসিক সমস্যায় আক্রান্ত হয়েছেন। টকসিক কেমিক্যাল কোনভাবে বাতাসে ছড়িয়ে পড়লে এমন ঘটনা ঘটতে পারে। ফরিদপুরের সিভিল সার্জন অরুণ কুমার বিশ্বাস বলেন, টকসিক অথবা ইরিটেন্ট জাতীয় কিছু ছড়ানোর কারণে এ ঘটনা ঘটেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এটি শরীরের নরম অংশে আঘাত করে। তিনি বলেন, তবে আক্রান্তদের মধ্যে যারা কম হয়েছেন তারা আগামী এক/দুই দিন এবং যারা বেশি হয়েছেন তারা তিন/চার দিনের মধ্যে সুস্থ হয়ে উঠবেন। ফরিদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ কামরুজ্জামান বলেন, এটি মানবসৃষ্ট কোন সমস্যা নয়, সমস্যাটা প্রাকৃতিক। আশপাশের নোংরা বা ড্রেনের নির্গত গ্যাস থেকে এ সমস্যর সৃষ্টি হয়ে থাকতে পারে।
×