ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

পিস মোবাইল আমদানি নিষিদ্ধ, বাজার থেকে তুলে নেয়ার নির্দেশ

প্রকাশিত: ০৫:৪৩, ২০ জুলাই ২০১৬

পিস মোবাইল আমদানি নিষিদ্ধ, বাজার থেকে তুলে নেয়ার নির্দেশ

ফিরোজ মান্না ॥ ভারতের বিতর্কিত ইসলামী বক্তা জাকির নায়েকের পিস টিভি বন্ধের পর এবার তার পিস মোবাইল সেট আমদানিও নিষিদ্ধ করেছে বিটিআরসি। জাকির নায়েকের বক্তব্য প্রচারের জন্য দেশের বাজারে পিস মোবাইল সেটটি এনেছিল বেক্সিমকো গ্রুপ। বিটিআরসি বাজার থেকে পিস মোবাইল সেট তুলে নেয়ার নির্দেশ দিয়েছে। বিটিআরসি চেয়ারম্যান প্রকৌশলী ড. শাহজাহান মাহমুদ বলেন, এ ধরনের মোবাইল হ্যান্ডসেট আমদানির আর অনুমতি দেয়া হবে না। কারণ, জাকির নায়েকের সব ধরনের প্রচার বন্ধের নির্দেশ রয়েছে সরকারের। যারাই এই সেট আমদানি করুক না কেন পিস মোবাইল সেট বাজার থেকে সরিয়ে নিতে হবে। টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) জানিয়েছে, ২০১৪ সালের জানুয়ারি মাসে বাংলাদেশ এক্সপোর্ট-ইমপোর্ট কোম্পানি লিমিটেড (বেক্সিমকো) ৫২৫ পিস মোবাইল ব্র্যান্ডের হ্যান্ডসেট আমদানির অনাপত্তিপত্র পায়। ২০১৪ সালের পর বেক্সিমকো পিস মোবাইল হ্যান্ডসেট আমদানি আর না করলেও সম্প্রতি তাদের লাইসেন্স নবায়ন করে নেন বলে জানান বিটিআরসির এক কর্মকর্তা। এর বাইরে নোহা এন্টারপ্রাইজ নামে আরেকটি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানও পিস নামে হ্যান্ডসেট আমদানি করছে। তবে এই পিস মোবাইলের লোগো আলাদা। এটা জাকির নায়েকের পিস মোবাইলের মতো নয়। নিয়ম অনুযায়ী হ্যান্ডসেট আমদানির আগে বিটিআরসির কাছ থেকে অনুমতি নিতে হয়। এজন্য মোবাইল হ্যান্ডসেটের ইন্টারন্যাশনাল মোবাইল ইক্যুইপমেন্ট আইডেনটিটি (আইএমইআই) নম্বর এবং যে হ্যান্ডসেট আমদানি করা হবে তার নমুনা বিটিআরসিতে জমা দিতে হয়। এসব যাচাই করে বিটিআরসি স্পেকট্রাম বিভাগ মোবাইল আমদানির অনুমতি দেয়। এদিকে পিস মোবাইল হ্যান্ডসেট সম্পর্কে ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, ‘পিস মোবাইল একটি ইসলামিক স্মার্টফোন। ফোনটি মানুষের জন্য নিয়ে এসেছেন ডাঃ জাকির নায়েক, যিনি ইসলাম ও তুলনামূলক ধর্মতত্ত্বের ওপর একজন বিখ্যাত আন্তর্জাতিক বক্তা।’ ওয়েবসাইটে হ্যান্ডসেটটির বিশেষ বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে বলা হয়, এই সেটে ‘পিস টিভি লাইভ (বাংলা, ইংরেজী, উর্দু)’, ‘ইসলামিক এপ্লিকেশন’, ‘নামাজের সময় স্মরণ, আজান’, ‘ইসলামী বই’, ‘কুরআন, সূরা, হিজরী ক্যালেন্ডার, হজ ও উমরাহ্’, ‘ডা. জাকির নায়েকের ভিডিও’, ‘ইসলামিক ওয়ালপেপার’ ও ‘ইসলামিক রিং টোন’ পাওয়া যাবে। দেশে হ্যান্ডসেটটির একমাত্র পরিবেশক হিসেবে রয়েছে বেক্সিমকোর নাম এবং গ্রুপটির কার্যালয় ধানম-ির বেল টাওয়ারকে ঠিকানা হিসেবে দেয়া। বিটিআরসি জানিয়েছে, পিস মোবাইলে রয়েছে, উস্কানিমূলক নানা কনটেন্ট, জঙ্গী প্রচার বিভিন্ন ধরনের এ্যাপসহ মোবাইল হ্যান্ডসেটের দেশে প্রবেশ ঠেকাতে আমদানি অনুমতিতে যাচাই প্রক্রিয়া আরও কঠোর করা হচ্ছে। সরকারের অগোচরে জঙ্গী প্রচার কনটেন্টসহ হ্যান্ডসেট বাজারে পাওয়া গেলে সেগুলো বাজেয়াপ্ত করে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। পিস মোবাইলে বিশেষ এ্যাপের খবর প্রচারের পর অন্য কোম্পানির মোবাইলের মাধ্যমেও এ ধরনের কোন এ্যাপ আসছে কিনা, তা দেখার উদ্যোগ নিয়েছে বিটিআরসি। দেশে বর্তমানে ১০৮ আমদানিকারক ৯১টি ব্র্যান্ডের মোবাইল হ্যান্ডসেট বাংলাদেশে আমদানি করে। বিটিআরসির নিয়ম অনুযায়ী, হ্যান্ডসেটের যন্ত্রপাতি তালিকা অনুযায়ী ঠিক আছে কিনা, বাংলা লেখার প্রযুক্তি ও বেসিক ফোনের ক্ষেত্রে কি প্যাডে বাংলা রয়েছে কিনা- এসব বিষয় যাচাই করে অনাপত্তিপত্র দেয়া হয়। বিটিআরসির চেয়ারম্যান বলেন, হ্যান্ডসেটে বিশেষ কোন কনটেন্ট বা আপত্তিকর এ্যাপ আছে কিনা তা এতদিন ‘কড়াকড়িভাবে’ যাচাই করা হতো না। হ্যান্ডসেটে সাধারণ যে এ্যাপ বা কনটেন্ট থাকে সেগুলোসহ (বিল্টইন) সেখানে বিশেষ কোন এ্যাপ বা কনটেন্ট আছে কিনা- এখন তা ভালমত পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরই সেট আমদানির অনুমতি দেয়া হবে। আপত্তিকর, জঙ্গী প্রচার বা অপপ্রচারমূলক কোন এ্যাপ বা কনটেন্টসহ মোবাইল হ্যান্ডসেট যেন বাজারে বিক্রি না হয় সে বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
×