ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

সব ব্যাংকের নির্বাহীদের সঙ্গে পর্যায়ক্রমে বৈঠক

ব্যাংকিং চ্যানেলে জঙ্গী অর্থ আসছে কিনা খতিয়ে দেখছে বাংলাদেশ ব্যাংক

প্রকাশিত: ০৫:৪২, ২০ জুলাই ২০১৬

ব্যাংকিং চ্যানেলে জঙ্গী অর্থ আসছে কিনা খতিয়ে দেখছে বাংলাদেশ ব্যাংক

রহিম শেখ ॥ জঙ্গী কর্মকা-ে কিভাবে অর্থ লেনদেন হচ্ছে, কারা এর মদদদাতা, ব্যাংকিং চ্যানেলে এসব অর্থ লেনদেন হচ্ছে কি না সে বিষয়ে উদ্বিগ্ন বাংলাদেশ ব্যাংক। তাই জঙ্গী অর্থায়ন ঠেকাতে সব ধরনের লেনদেন খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বিদেশ থেকে দেশে আসা রেমিটেন্স, এলসির অর্থ কোথায় কীভাবে ব্যবহার হচ্ছে এসব বিষয়ে খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। মঙ্গলবার বাংলাদেশ ব্যাংকের সভাকক্ষে ২৮টি ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীর সঙ্গে এ বিষয়ে করণীয় এক বৈঠকে এসব সিদ্ধান্ত হয়। সভায় ব্যাংকগুলোকে জঙ্গী অর্থায়ন প্রতিরোধে সুনির্দিষ্ট কিছু নির্দেশনা দেয়া হয়। এসব নির্দেশনা পরিপালনের জন্য ব্যাংকগুলোকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতে বলা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, গুলশানে হোটেলে ও শোলাকিয়ায় ঈদ জামাতে জঙ্গী হামলার পর ব্যাংকিং চ্যানেলে অর্থ লেনদেনের বিষয়ে সতর্ক পদক্ষেপ নিচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ বিষয়ে দেশে কার্যত ৫৬টি তফসিলি ব্যাংককে সতর্ক করার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। এরই অংশ হিসেবে মঙ্গলবার ২৮টি ব্যাংকের সঙ্গে বৈঠকে বসে বাংলাদেশ ব্যাংক। আজ বুধবার বাকি ২৮ ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীর সঙ্গে বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। সন্ত্রাসবিরোধী আইন অনুযায়ী, প্রতিটি ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহীদের পরিপালনের জন্য সুনির্দিষ্ট গাইডলাইন রয়েছে। এ ক্ষেত্রে ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী, ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ও চেয়ারম্যানের সুনির্দিষ্ট দায়িত্ব রয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শনে এসব গাইডলাইন পালন করার ব্যাপারে ব্যাংকগুলোর বিরুদ্ধে গাফিলতির প্রমাণ পাওয়া গেছে। এর ফলে ব্যাংকগুলোতে সন্ত্রাসী অর্থায়ন বন্ধের পরিবর্তে আরও উসকে দেয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ বিষয়ে কয়েকটি ব্যাংকের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কিছু অভিযোগ পাওয়া গেছে। বৈঠকে ব্যাংকগুলো সন্ত্রাসবিরোধী আইন পরিপালনে কেন অনীহা প্রকাশ করছে এ বিষয়ে ব্যাংকগুলোর কাছে জানতে চাওয়া হয়। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, রেমিটেন্সের নামে দেশে আসা এক থেকে দুই কোটি টাকা পর্যন্ত অর্থের উৎস কোথায় ও দেশে আসার পর এই অর্থ কীভাবে ব্যবহার হচ্ছে- সেটা জানতে সম্প্রতি চিঠি দেয়া হয় বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে। যেসব ব্যাংক এ্যাকাউন্টের মাধ্যমে এসব অর্থ দেশে এসেছে প্রাথমিকভাবে সব গ্রাহককে নজরদারিতে আনা হয়েছে। গ্রাহক সম্পর্কে জানতে ব্যাংকগুলোকে আলাদাভাবে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। রেমিটেন্সের মাধ্যমে অর্থ আনা হয়েছে এমন চিহ্নিত শতাধিক ব্যাংক এ্যাকাউন্টের মাধ্যমে জঙ্গীদের কাছে অর্থ আসতে পারে বলে সন্দেহ করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ ছাড়া বাংলাদেশে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যেসব বিদেশী শিক্ষার্থী আছে তাদের এ্যাকাউন্টের লেনদেন সম্পর্কেও তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। এর মধ্যে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও মাদ্রাসা রয়েছে। এমন শিক্ষার্থীদের একাধিক এ্যাকাউন্টে সন্দেহজনক লেনদেনের প্রমাণ পাওয়া গেছে। সূত্র জানায়, শিক্ষার্থীদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ব্যয়ের অতিরিক্ত অর্থ আসছে বাংলাদেশে। সেসব অর্থ কোথায় কীভাবে ব্যয় করা হচ্ছে তা খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয় বৈঠকে। এ ছাড়া বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে যারা ক্রেডিট পরিবর্তন করে দেশের বাইরে যাচ্ছেন তাদের নেয়া অর্থ সম্পর্কেও তথ্য নেয়া হচ্ছে বলে বৈঠকে জানানো হয়। বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট সূত্রে জানা গেছে, ক্ষুদ্র ব্যবসার নামে বিভিন্ন দেশ থেকে এলসির মাধ্যমে আনা পণ্য দেশের বাজারে বিক্রি করা হচ্ছে। যাদের নামে এসব পণ্য আসছে তারা দেশের বাজারে বিক্রি করে অর্থ সংগ্রহ করছে। যার একটি বড় অংশ জঙ্গী অর্থায়নে ব্যয় করা হচ্ছে। ছোট ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নামে আনা হলেও ওই প্রতিষ্ঠানের ঠিকানায় কিছুই পাওয়া যাচ্ছে না। গত এক বছরে এক কোটি থেকে দুই কোটি টাকা পর্যন্ত এলসির মাধ্যমে পণ্য এসেছে এ রকম একাধিক প্রতিষ্ঠানের নামে। এর মধ্যে বিভিন্ন খেলনা, বস্ত্র, সুগন্ধি স্প্রে, কম্পিউটারের যন্ত্রাংশ রয়েছে। ভুয়া প্রতিষ্ঠানের ঠিকানা ব্যবহার করে কম অর্থ ব্যবহার করায় কারও কোন সন্দেহ হয়নি এতদিন। যারা এসব পণ্য আনছেন তারা ব্যাংকে লেনদেন করছেন খুব সতর্কতার সঙ্গে। সময়মতো তারা এলসির অর্থ পরিশোধ করে দেন। কম মূলধন দেখিয়ে দেশের অভ্যন্তরে এবং বাইরে আন্ডার ইনভয়েস, ওভার ইনভয়েস করে অর্থ লেনদেনের তথ্য জানতে চেয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন নির্বাহী পরিচালক জনকণ্ঠকে বলেন, জঙ্গী অর্থায়নের বিষয়ে আমাদের নজরদারি সব সময় খুবই কঠোর। বাংলাদেশ ব্যাংক বৈদেশিক লেনদেনের ক্ষেত্রে সতর্কতার সঙ্গে কাজ করছে। এরই অংশ হিসেবে এ বৈঠকের আয়োজন করা হয়েছে। সভায় ব্যাংকগুলোকে জঙ্গী অর্থায়ন প্রতিরোধে সুনির্দিষ্ট কিছু নির্দেশনা দেয়া হয়। এসব নির্দেশনা পরিপালনের জন্য ব্যাংকগুলোকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতে বলা হয়েছে। জানা গেছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা পরিপালনের বিষয়ে বছর শেষে ব্যাংকগুলোর ওপর রেটিং করা হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা যে ব্যাংক যথাযথ পরিপালন করেছে ওই ব্যাংকের রেটিং ভাল হয়। জানা গেছে, গত বছরের রেটিংয়ে বেশির ভাগ ব্যাংকই খারাপ করেছে। বৈঠকে ব্যাংকগুলোর রেটিং কেন খারাপ হলো সে বিষয়ে ব্যাংকগুলোর কাছে জানতে চাওয়া হয়। আরও কিভাবে ভাল করা যায়, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা পরিপালনে ব্যাংকগুলোর সমস্যা কোথায় সে বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়।
×