ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ঢাকা ছাড়া অন্যত্র জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার হ্রাস

প্রকাশিত: ০৫:৪১, ২০ জুলাই ২০১৬

ঢাকা ছাড়া অন্যত্র জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার হ্রাস

স্টাফ রিপোর্টার ॥ চলতি বছরে ঢাকা ছাড়া দেশের সব ক’টি বিভাগে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার হ্রাস পেয়েছে। ঢাকা বিভাগের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার উর্ধগামী। গত কয়েক বছরে দেশের মোট দেশের জনসংখ্যা বেড়ে বর্তমানে ১৬ কোটি ১০ লাখ হয়েছে। এর মধ্যে এক-তৃতীয়াংশই কিশোর-কিশোরী ও তরুণ-তরুণী। তাই জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার কমাতে কিশোর-কিশোরীদের প্রতি বিশেষ মনোযোগ দেয়া হচ্ছে। বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস পালনকে সামনে রেখে মঙ্গলবার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী জাহিদ মালেক এ তথ্য জানান। বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে প্রতিবছর ১১ জুলাই বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস পালন করে বাংলাদেশ। এবার পবিত্র রমজান ও ঈদ-উল-ফিতর উপলক্ষে ১১ জুলাইয়ের পরিবর্তে ২১ জুলাই বাংলাদেশে জনসংখ্যা দিবস পালনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। জনসংখ্যা দিবসের এবারের প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘কিশোরীদের জন্য বিনিয়োগ, আগামী প্রজন্মের সুরক্ষা’। সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্যসচিব সৈয়দ মঞ্জুরুল ইসলাম, পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতরের মহাপরিচালক ওয়াহিদ হোসেন ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক আবুল কালাম আজাদ প্রমুখ। ২১ জুলাই ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে বেলা ১১টায় দিবসের উদ্বোধনী ও আলোচনা সভার আয়োজন করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন। সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী জানান, দেশের জনসংখ্যা এখন ১৬১ মিলিয়ন (১৬ কোটি ১০ লাখ)। জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার এখনও ২ দশমিক ৩। এ হার ২-এ নামিয়ে আনার চেষ্টা চলছে। মোট জনসংখ্যার ৩১ শতাংশ তরুণ প্রজন্ম। প্রতিমন্ত্রী বলেন, দেশে সাড়ে চার কোটি কিশোর-কিশোরী ও তরুণ-তরুণী রয়েছে। জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে সরকার এখন কিশোর-কিশোরীদের স্বাস্থ্যের দিকে বিশেষ নজর দিচ্ছে। আমরা মনে করি, যদি তাদের স্বাস্থ্যের দিকে মনোযোগ দেয়া যায়, তাহলে দেশের জনসংখ্যা আর বাড়বে না। সরকার মেয়েদের সব ক্ষেত্রে চাকরির সুযোগ সৃষ্টি করেছে। শিক্ষায় অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে। সরকারের লক্ষ্য হচ্ছে, সমাজে শিক্ষিত মা তৈরি হলে একদিকে মা ও শিশু মৃত্যুর হার কমে আসবে, অন্যদিকে জনসংখ্যাও বাড়বে না। কিশোর-কিশোরীর স্বাস্থ্যের দিকে নজর দিতে দেশের ১০০টি সেবাকেন্দ্রে কিশোরবান্ধব স্বাস্থ্যকেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে বলে তিনি জানান। বহু বছর ধরে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার একই জায়গায় আটকে আছে। আগের মতো বাড়ি বাড়ি গিয়ে পরিবার পরিকল্পনার কোন সেবা দেয়া হয় না। এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ২ দশমিক ৩ থেকে ২-এ নামিয়ে আনার লক্ষ্যে চেষ্টা চলছে। তিনি বলেন, বাড়ি বাড়ি গিয়ে পরিবার পরিকল্পনার সেবা দেয়া বন্ধ করা হয়নি। আগের চেয়ে এখন যোগাযোগব্যবস্থা অনেক ভাল হওয়ায় লোকজন নিজেরাই সেবাকেন্দ্রে চলে আসেন। বাড়ি বাড়ি যাওয়ার ততটা প্রয়োজন হয় না। এরপরও প্রয়োজন হলে বাড়ি বাড়ি যাওয়া আরও বাড়ানো হবে। উঠতি বয়সী সন্তানের দিকে বিশেষ খেয়াল রাখার জন্য মা-বাবার প্রতি আহ্বান জানিয়ে স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, গুলশানে হলি আর্টিজান রেস্তরঁাঁয় হামলার ঘটনায় আমরা দেখতে পেয়েছি, বিপথগামী তরুণেরা এতে জড়িত ছিল। মা-বাবাকে সতর্ক থাকতে হবে তাদের সন্তান কোথায় যায়, কার সঙ্গে মেলা মেশা করে। পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতরের মহাপরিচালক ওয়াহিদ হোসেন বলেন, আমাদের জন্য খুবই একটি এ্যালার্মিং জায়গা হচ্ছে ঢাকা বিভাগ। আমরা ঢাকা নিয়ে এক ধরনের নিশ্চিন্ত ছিলাম। এ বছর সাতটি বিভাগের মধ্যে ছয়টি বিভাগে ২০১১ সালের তুলনায় ২০১৪ সালে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার কমেছে। একমাত্র ঢাকা বিভাগে এটা কমেনি, বরং খানিকটা বেড়েছে। মহাপরিচালক বলেন, আমাদের অনেকেরই চিন্তা ঢাকা মানে ঢাকা শহর। ঢাকা বিভাগ যখন ভাবি তখন কিন্তু প্রচুর দুর্গম এলাকা আছে। ঢাকা বিভাগের মধ্যে হাওড় এলাকা আছে প্রচুর। চরাঞ্চল আছে। এ জায়গাগুলো টার্গেট করে নতুন কর্মসূচী নিচ্ছি। আমি প্রায় নিশ্চিতভাবে বলতে পারি, ২০১৭ সালের জরিপে এটার কিছু প্রতিফলন ঘটবে। ঢাকার অবস্থা এত খারাপ থাকবে না। ঢাকার বস্তি এলাকা পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতরের আওতাভুক্ত এরিয়া নয় জানিয়ে পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতরের মহাপরিচালক বলেন, এটা স্থানীয় সরকারের কাজ। আমরা স্থানীয় সরকারের সঙ্গে অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ বাড়ানোর চেষ্টা করছি। কীভাবে সেবাটা আরেকটু বেশি পৌঁছে দেয়া যায়।
×