ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

কৃষি ও পল্লীঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা ১৭ হাজার ৫৫০ কোটি টাকা

প্রকাশিত: ০৪:১৩, ২০ জুলাই ২০১৬

কৃষি ও পল্লীঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা ১৭ হাজার ৫৫০ কোটি টাকা

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ চলতি ২০১৬-১৭ অর্থবছরের কৃষি ও পল্লীঋণ নীতিমালা প্রায় চূড়ান্ত করে ফেলেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আগামী ২৮ জুলাই নতুন এ নীতিমালা ঘোষণা করবেন গবর্নর ফজলে কবির। জানা গেছে, এবার কৃষি ও পল্লীঋণ নীতিমালায় খুব বেশি পরিবর্তন আসছে না। তবে অগ্রাধিকার খাত বিবেচনায় বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর এ খাতে ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা বাড়ছে। এবার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হচ্ছে ১৭ হাজার ৫৫০ কোটি টাকা, যা গেলবারের তুলনায় এক হাজার ১৫০ কোটি টাকা বেশি। এছাড়া এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে আওতায় কৃষিঋণ বিতরণে গ্রাহক থেকে সার্ভিসচার্জ আদায়ের বিষয়টি নতুনভাবে অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে। পেয়ারা চাষে সারাবছর ঋণ দেয়ার বিষয়টি গুরুত্ব পাবে। পাশাপাশি ফসল চাষের ন্যায় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতেও ঋণ নিয়মাচার ও ঋণের পরিমাণ নির্ধারণ করে দেয়া হবে। এছাড়া আগের মতোই টার্গেট পূরণে ব্যর্থ ব্যাংকের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান থাকছে নতুন নীতিমালায়ও। এদিকে, গত জুনে কৃষিঋণের সুদের উর্ধসীমা ১ শতাংশ কমিয়ে ১০ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে, যা ১ জুলাই থেকে কার্যকর হয়েছে। নতুন নীতিমালায় সুদ কমানোর বিষয়টিও অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের কৃষিঋণ ও আর্থিক সেবাভুক্তি বিভাগের নির্বাহী পরিচালক শুভঙ্কর সাহা বলেন, এবার কৃষিঋণের লক্ষ্যমাত্রা বাড়ছে। লক্ষ্যমাত্রা বৃদ্ধির সঙ্গে সেটি অর্জনের প্রচেষ্টা নেয়া হবে নতুন নীতিমালায়। ব্যাংকগুলোকে টার্গেট দিয়েই আমরা বসে থাকব না। তারা যাতে টার্গেট অনুযায়ী ঋণ বিতরণ করে সেজন্য আমাদের নজরদারি অব্যাহত থাকবে। জানা গেছে, যেসব ব্যাংক এজেন্ট ব্যাংকিং নেটওয়ার্ক চালু করেছে, তারা প্রচলিত শাখার পাশাপাশি তাদের নন-ব্যাংক এজেন্টের মাধ্যমেও কৃষিঋণ বিতরণ করতে পারবে। এক্ষেত্রে নন-ব্যাংক এজেন্টের সুদের অতিরিক্ত দশমিক ৫ শতাংশ সার্ভিসচার্জ আদায়ের সুযোগ দেয়ার চিন্তাভাবনা চলছে। বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, গ্রাম ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে শাখা না থাকায় অনেক ব্যাংক এমএফআই লিঙ্কেজে কৃষিঋণ বিতরণ করে। এক্ষেত্রে কৃষককে বর্তমানে ২৫ শতাংশ সুদ গুনতে হয়। কিন্তু কৃষক নন-ব্যাংক এজেন্টের থেকে এ ঋণ নিলে সার্ভিসচার্জসহ সুদ দাঁড়াবে সাড়ে ১০ শতাংশ। এমএফআই লিঙ্কেজে ব্যাংকের কৃষিঋণ বিতরণ নির্ভরশীলতা কমাতে এ ধরনের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে, যা কৃষি ও কৃষকের জন্য ইতিবাচক হবে। কৃষি ও পল্লীঋণের বিদ্যমান নীতিমালা অনুযায়ী, দেশের সব বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে মোট ঋণের ন্যূনতম আড়াই শতাংশ কৃষি ও পল্লী খাতে বিতরণ করতে হবে। নতুন ব্যাংকগুলোর জন্য এ হার ৫ শতাংশ। যারা এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সক্ষম হবে না তাদের অর্থবছর শেষে লক্ষ্যমাত্রার অনর্জিত অংশ বাংলাদেশ ব্যাংকে বাধ্যতামূলক জমা করতে হয়। এ অংশের ওপর বাংলাদেশ ব্যাংক কোন সুদ প্রদান করে না। নতুন নীতিমালায়ও এ বিষয়টি অপরিবর্তিত রাখা হচ্ছে। অগ্রাধিকার খাত হলেও সমাপ্ত ২০১৫-১৬ অর্থবছরের শুরুর দিকে কৃষিঋণ বিতরণে কাক্সিক্ষত গতি আসেনি। তবে ধীরে ধীরে কৃষিঋণ বিতরণ বাড়তে থাকে। তারপরও আগেরবারের একই সময়ের চেয়ে সমাপ্ত অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে কৃষিঋণ বিতরণ কমে গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৫-১৬ অর্থবছরের জুলাই-মে এই ১১ মাসে কৃষি খাতে ব্যাংকগুলো ঋণ বিতরণ করেছে ১৫ হাজার ৪৪১ কোটি টাকা, যা মোট লক্ষ্যমাত্রার ৯৪ দশমিক ১৫ শতাংশ। আগের অর্থবছরের একই সময়ে কৃষিঋণ বিতরণ হয়েছিল ১৫ হাজার ৯৭৮ কোটি টাকা, যা মোট লক্ষ্যমাত্রার ৯৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ ছিল। এ হিসাবে চলতি অর্থবছরের ১১ মাসে কৃষিঋণ বিতরণ কমেছে প্রায় ৩ শতাংশ। তবে কৃষিঋণ বিতরণ আগের বছরের চেয়ে কমলেও অর্থবছর শেষে তা শতভাগ ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা।
×