ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

গ্লাস শীট ও মিরর শীট আমদানিতে পণ্যমূল্যের শুল্কায়ন

সরকার রাজস্ব হারাবে শত কোটি টাকা

প্রকাশিত: ০৪:১২, ২০ জুলাই ২০১৬

সরকার রাজস্ব হারাবে শত কোটি টাকা

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ গ্লাস শীট ও মিরর শীট আমদানিতে ঘোষিত মূল্যের ওপর পণ্যভেদে ৩০ থেকে ২০০ শতাংশ অতিরিক্ত শুল্কায়নের নির্দেশনা বাতিলের দাবি জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, এ অবস্থায় পণ্যছাড় করতে অনেকের পুঁজি খোয়া যাবে। শুধু তাই নয়, মিরর আমদানিকারকগণকে পণ্য বিক্রি করে যে পরিমাণ টাকা শুল্ক দিতে হবে সে পরিমাণ টাকাও ফেরত পাবেন না। ব্যবসায়ীরা যেসব এলসি খুলেছেন না পারছেন বাতিল করতে, না পারছেন ছাড় করতে। এ অবস্থায় একদিকে যেমন ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন অন্যদিকে বিপুল পরিমাণের রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হবে সরকার। সমস্যা নিরসনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন এ খাতের ব্যবসায়ীরা। জানা গেছে, গ্লস শীট ও মিরর শীটের বাজার চাহিদার ৫০ শতাংশ স্থানীয় প্রতিষ্ঠান যোগান দেয়। বাকি প্রায় ৫০ শতাংশ আমদানি করতে হয়। বর্তমানে আমদানিকৃত গ্লাস শীট ও মিরর শীটে অতিরিক্ত শুল্ক, সম্পূরক শুল্ক, রেগুলেটরি শুল্ক ও অন্যান্য শুল্ক মিলে মোট ৯৩ থেকে ১৩৩ শতাংশ শুল্ক বলবৎ রয়েছে। গত ২ জুলাই জাতীয় রাজস্ব বোর্ড একটি এসআরও জারির মাধ্যমে আমদানিকৃত পণ্যের ঘোষিত মূল্যের ওপর পণ্যভেদে ৩০ থেকে ২০০ শতাংশ অতিরিক্ত মূল্য যোগ করে তার ওপর শুল্কায়নের নির্দেশনা দেয়। ফলে প্রতি কেজি মিরর শীট আমদানিতে দশমিক ৬৫ সেন্ট বেশি দিতে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের। সে হিসাবে এক টন মিরর শীট আমদানিতে চার লাখ টাকার কিছু বেশি শুল্ক দিলেও বর্তমানে দিতে হচ্ছে প্রায় সাড়ে ১৭ লাখ টাকা। এ অবস্থায় পণ্যছাড় করতে অনেকের পুঁজি খোয়া যাচ্ছে। শুধু তাই নয়, মিরর আমনাদিতে পণ্য বিক্রি করে যে পরিমাণ টাকা শুল্ক দিতে হবে সে পরিমাণ টাকাও ফেরত পাবেন না ব্যবসায়ীরা। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত ৩০ জুন পর্যন্ত যেসব এলসি খুলেছেন ব্যবসায়ীরা তা না পারছেন বাতিল করতে, না পারছেন ছাড় করতে। ইতোমধ্যে অনেক পণ্য বন্দরে এসে পৌঁছেছে। কিছু পণ্য শিপমেন্টের অপেক্ষায়। প্রসঙ্গত, ওয়ান সাইট এলসি শিপমেন্ট তারিখ বিদ্যমান থাকাবস্থায় বাতিলের কোন সুযোগ নেই। আমদানিকৃত মিরর এবং দেশীয় (নাসির ও পিএইচপি) মিরর গুণগতমানসম্পন্ন এক ও অভিন্ন। তাই বেশি মূল্য দিয়ে কেউ বিদেশী পণ্য ক্রয় করবে না। ফলে পণ্যগুলো ছাড় করানোও যাবে না। আমদানিতে যদি সরকার ১৫০ কোটি টাকার রাজস্ব আয় করে, সেখানে দেশীয় প্রতিষ্ঠান থেকে সর্বোচ্চ আয় হবে ১০-১৫ কোটি টাকা। যদি বর্তমান অবস্থা বলবৎ থাকে তবে অধিকাংশ এবং বিশেষ করে মিরর আমদানি সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হয়ে যাবে। সরকার কম করে হলেও ১০০ কোটি টাকা রাজস্ব হারাবে বলে এ খাতের ব্যবসায়ীরা মনে করছেন। এতে আমদানিকারকগণ দেউলিয়া হয়ে যাবেন। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাংলাদেশ গ্লাস মার্চেন্ট এ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমএ) সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আবু সালেহ সেলিম বলেন, গত বাজেটে আমাদের দাবি ছিল সম্পূরক শুল্ক সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করার। কিন্তু বরাবরই আমাদের দাবি উপেক্ষিত রয়ে গেছে। সম্প্রতি আমদানিকৃত পণ্যের ঘোষিত মূল্যের ওপর ৩০-২০০ শতাংশ অতিরিক্ত মূল্য যোগ করে তার ওপর শুল্কায়নের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এ অবস্থায় পণ্য ছাড় করতে অনেক ব্যবসায়ী তাদের পুঁজি হারাবেন। শুধু তাই নয়, মিরর আমদানিকারকগণকে পণ্য বিক্রি করে যে পরিমাণ টাকা শুল্ক দিতে হবে সে পরিমাণ টাকাও ফেরত পাবেন না। ব্যবসায়ীরা যেসব এলসি খুলেছেন তা না পারছেন বাতিল করতে, না পারছেন ছাড় করতে। এ অবস্থায় একদিকে যেমন ব্যবসায়ীরা ক্ষমিগ্রস্ত হচ্ছেন অন্যদিকে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হবে সরকার। সমস্যা নিরসনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সুদৃষ্টি কামনা করেন ব্যবসায়ীরা।
×