ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

বরিশালে ধর্ষণ কাণ্ডে প্রহসনের সালিশ

প্রকাশিত: ০৪:০০, ২০ জুলাই ২০১৬

বরিশালে ধর্ষণ কাণ্ডে প্রহসনের সালিশ

স্টাফ রিপোর্টার, বরিশাল ॥ স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণের ঘটনায় আদালতে মামলা দায়েরের পরও স্থানীয় ইউপি সদস্যর চাপের মুখে প্রহসনের সালিশ বৈঠকের বিষয়টি এলাকায় ব্যাপক তোলপাড় শুরু করছে। ওই বৈঠকে ধর্ষিতার কাছ থেকে জোরপূর্বক সাদা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর আদায় করে তার ইজ্জতের মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা। ঘটনাটি জেলার আগৈলঝাড়া উপজেলার নাঘিরপাড় গ্রামের। পুরো টাকা আগামী শুক্রবারের মধ্যে ধর্ষিতার পরিবারকে পরিশোধ করার জন্য সময় নির্ধারণ করা হয়। সালিশ বৈঠকে উপস্থিত নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ব্যক্তি জানান, নাঘিরপাড় স্কুলের দশম শ্রেণীর এক ছাত্রীকে ধর্ষণের ঘটনায় সম্প্রতি আদালতে মামলা দায়ের করা হয়। এরপরও বাগধা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও উপজেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি আমিনুল ইসলাম বাবুল ভাট্টি ধর্ষকের পক্ষালম্বন করে শনিবার স্থানীয় কালী মন্দিরে কৌশলে ধর্ষিতার পরিবারকে সালিশ বৈঠকে হাজির করেন। বৈঠকে চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম বাবুল ভাট্টির সভাপতিত্বে ধর্ষণের সালিশ বৈঠকে সাত সদস্যের সালিশ বোর্ড গঠন করা হয়। সূত্রে আরও জানা গেছে, সালিশ বৈঠকের শুরুতেই চেয়ারম্যান হতদরিদ্র ধর্ষিতার বাবা ও ধর্ষিতাকে বিভিন্ন ধরনের হুমকি-ধমকি দিয়ে তাদের মঙ্গলের জন্য এ সালিশ বৈঠকের আয়োজন করা হয়েছে জানিয়ে ৩শ’ টাকার সাদা স্ট্যাম্পে ধর্ষিতা, তার বাবা, ধর্ষক দুলাল ম-ল, তার বাবা আমরী ম-ল ও স্থানীয় নিত্যানন্দ হালদারের স্বাক্ষর আদায় করেন। পরবর্তীতে চেয়ারম্যানসহ সালিশ বোর্ডের ওই সাত সদস্য আলাদাভাবে আলোচনা করে ধর্ষকের দেড় লাখ টাকা জরিমানা ধার্য করেন। পরবর্তীতে ২০ হাজার টাকা কমিয়ে ধর্ষিতার ইজ্জতের মূল্য নির্ধারণ করেন ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা। তাৎক্ষণিক জরিমানার ৩০ হাজার টাকা ধর্ষক পরিবার পরিশোধ করলেও ওই টাকা ধর্ষিতার পরিবারের হাতে না দিয়ে আওয়ামী লীগ নেতা এআর ফারুক বখতিয়ারের কাছে জমা রাখা হয়। বাকি ১ লাখ টাকা আগামী শুক্রবারের মধ্যে দেয়ার কথা রয়েছে। এ টাকার মধ্যে থানা পুলিশ ম্যানেজের কথাও জানানো হয় বৈঠকে। ধর্ষিতার স্বজনরা অভিযোগ করেন, অর্থের অভাবে মামলা চালানো তাদের জন্য অত্যন্ত কষ্টকর। এ সুযোগে প্রভাবশালীরা জোরপূর্বক প্রহসনের সালিশ বৈঠক করে উল্লেখিত রায় ঘোষণা করেছেন। উল্লেখ্য, উপজেলার নাঘিরপাড় গ্রামে দশম শ্রেণীতে পড়ুয়া এক ছাত্রীকে গত ৫ জুলাই জোরপূর্বক ধর্ষণ করে একই গ্রামের আমরী ম-লের পুত্র দুলাল ম-ল। এ ব্যাপারে থানার ওসি মনিরুল ইসলাম জানান, মঙ্গলবার তিনি আদালতের আদেশের কপি হাতে পেয়েছেন। মামলা রেকর্ডের প্রক্রিয়া চলছে। বাগধা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম বাবুল ভাট্টি জানান, থানার ওসির সঙ্গে কথা বলে এলাকার শান্তির জন্য গণ্যমান্যদের নিয়ে সালিশ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে।
×