ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ

প্রকাশিত: ০৩:৪৪, ২০ জুলাই ২০১৬

অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ

রাজধানীর প্রতিটি আবাসিক এলাকায় গড়ে উঠেছে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান। এ নিয়ে বিস্তর অভিযোগ উঠেছে। পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো আপত্তি তুলেছে। এলাকাবাসীর ভোগান্তি চরমে উঠেছে। তারপরও বড় ধরনের ইতিবাচক পরিবর্তন সাধিত হয়নি। অবশ্য কর্তৃপক্ষ উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন মাঝেমধ্যে। তাদের সেসব উদ্যোগের আন্তরিকতা নিয়ে প্রশ্ন উঠলেও কিছু কিছু সাফল্য যে এসেছে সে বিষয়ে সন্দেহ নেই। বিশেষ করে ঢাকার নির্বাচিত মেয়র এসে এ ধরনের অবৈধ ও রীতিবহির্ভূত স্থাপনার বিরুদ্ধে বারবার আঙ্গুল তুলেছেন। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ তথা রাজউকের নির্দিষ্ট বিধিমালা রয়েছে। সেসব বিধি প্রণয়ন করা হয়েছে মহানগরীর উন্নয়নের স্বার্থেই। বলাবাহুল্য, ব্যাপকহারে সেসব বিধিমালার লঙ্ঘন ঘটেছে বলেই ঢাকা আজ পরিণত হয়েছে ইট-কাঠ-পাথরের জঙ্গলে। রাজধানীর চার পাশের চার নদী বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, বালু ও শীতলক্ষ্যার তীরে গড়ে ওঠা হাজার হাজার অবৈধ স্থাপনার কথা সংসদেই উচ্চারিত হয়েছে বারবার। ভূমিদস্যু ও নদী হন্তারকরা আইন-আদালতের তোয়াক্কা করে না। অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) জরিপ পর্যালোচনায় বিভিন্ন সময়ে উঠে এসেছে দেশের উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করার বিষয়টি। ঢাকা শহরে বহু প্রাইভেট ক্লিনিক ও হাসপাতালও নির্মাণ করা হয়েছে নাগরিকদের স্বাস্থ্যঝুঁকির বিষয়টি সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে। এতে মারাত্মক পরিবেশ দূষণ ঘটেছে। রাজধানীতে আবাসিক আর বাণিজ্যিক এলাকা যখন একাকার হতে শুরু হলো তখন কি রাজউক দীর্ঘ শীতনিদ্রায় গিয়েছিল? রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) আওতাধীন যথাযথ অনুমোদন ছাড়াই নিয়মবহির্ভূতভাবে গড়ে তোলা সকল অবৈধ স্থাপনার একটি তালিকা করেছে প্রতিষ্ঠানটি। তালিকা অনুযায়ী রাজধানীর প্রায় সকল এলাকায় গড়ে ওঠা স্থাপনার সংখ্যা এক হাজার ৬শ’ ২৫টি। এসব ধারাবাহিকভাবে উচ্ছেদের পরিকল্পনা গৃহীত হয়েছে। রাজউক এর আগেও বহুবার এ জাতীয় উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করেছে। তাতে কিছু সাফল্যও এসেছে। তবে বাস্তবতা হলো এ ধরনের অভিযান পরিচালনা করা কঠিন কাজ। প্রভাবশালীরা এতে বাধা হয়ে দাঁড়ান। এমনকি রাজনৈতিক প্রভাব খাটানোরও উদাহরণ রয়েছে অনেক। রাজধানীর উন্নয়নের প্রয়োজনে যে কোন ধরনের জোরালো অভিযান পরিচালনা করতে গেলে এ ধরনের প্রতিবন্ধকতা নতুন কিছু নয়। তবে এবারের পরিস্থিতি সম্পূর্ণ ভিন্ন। গুলশানে সন্ত্রাসী হামলার পর বিদেশীদের নিরাপত্তার বিষয়টি বড় হয়ে উঠেছে। ফলে সরকার দ্রুত এই পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। প্রথমে কূটনৈতিক এলাকাখ্যাত গুলশান-বনানী-বারিধারা থেকে ৫৫২টি অবৈধ প্রতিষ্ঠান উচ্ছেদ করবে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। এ লক্ষ্যে ভবন মালিকদের চিঠি দেয়া হচ্ছে। এ এলাকা থেকে অবৈধ ভবন সরিয়ে নেয়ার জন্য ৩০ প্রতিষ্ঠানের মালিককে নোটিস দেয়া হয়েছে। দ্রুততম সময়ে প্রতিষ্ঠানগুলো সরিয়ে না নিলে পানি, বিদ্যুৎ, গ্যাস ও টেলিফোন সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হবে বলেও জানানো হয়েছে। গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী সরকারের অবস্থান পরিষ্কার করেছেন। ‘গুলশান-বনানী-বারিধারাসহ রাজধানীর অন্যান্য এলাকা থেকে অবৈধ প্রতিষ্ঠান অপসারণে কঠোর অবস্থানে থাকবে সরকার। এক্ষেত্রে ক্ষমতাবানদের প্রভাব তোয়াক্কা করা হবে না।’ মন্ত্রীর এ বক্তব্য মহানগরবাসীর মধ্যে আশাবাদ জাগিয়েছে। বলাবাহুল্য, এটি শুধু ঢাকার বসবাসযোগ্যতা, পরিবেশ সুরক্ষা কিংবা নান্দনিক সৌন্দর্যের বিষয় নয়, এর সঙ্গে মানুষের নিরাপত্তার দিকটিও যুক্ত। তাই প্রশাসনকে সহায়তা করা সকল দেশপ্রেমিক নাগরিকেরই দায়িত্ব ও কর্তব্য।
×