ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ প্রতিরোধে ইসলাম

প্রকাশিত: ০৩:৪৪, ২০ জুলাই ২০১৬

সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ প্রতিরোধে ইসলাম

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন ‘সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ প্রতিরোধে ইসলাম’ শীর্ষক একটি ভাষ্য তৈরি করেছে। ভাষ্যটি পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো। আজ পড়ুন এর শেষ কিস্তি] ডাঃ জাকির নায়েক ইসলামের নামে যেসব বিষয়ে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন : * ডাঃ জাকির নায়েক বলেছেন, ‘রাসূল (সা) কো মাংনা হামারা লিয়ে হারাম হ্যায়।’ অর্থাৎ রাসুলুল্লাহ (সা)-কে চাওয়া বা মান্য করা আমাদের জন্যে হারাম। * তিনি রাসূল (সা)-কে রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে উল্লেখ করেন। অথচ রাসূল (সা) পৃথিবীতে এসেছিলেন রাহমাতুল্লিল আলামীন বা জগতসমূহের রহমত হিসেবে। তিনি ভৌগোলিক সীমায় কোন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য আসেননি। পবিত্র কোরান ও হাদিসের কোথাও ইসলামী রাষ্ট্রের কথা উল্লেখ নেই। * ডাঃ জাকির নায়েক বলেন, প্রত্যেক মুসলমানের সন্ত্রাসী হওয়া উচিত। এর মাধ্যমে তিনি মুসলিম সমাজে সন্ত্রাসবাদকে উস্কে দিচ্ছেন। * ডাঃ জাকির নায়েক বলেন, আল্লাহর বাণী যাচাই করতে হবে আধুনিক বিজ্ঞানের মাধ্যমে। এর মাধ্যমে তিনি বিজ্ঞানকে কোরানের উপর স্থান দিয়েছেন। * হযরত ইমাম হোসাইন (রা)-এর হত্যাকারী ইয়াজিদকে তিনি রাহমাতুল্লাহে আলাইহি বলে দোয়া করেন। এর মাধ্যমে তিনি আহলে বাইয়াতের বিরুদ্ধে অবস্থান দেন। * মহানবী (সা)-কে হায়াতুন্নবী (সা) মর্মে আকিদাকে অস্বীকার করেন। * ডাঃ জাকির নায়েক তুলনামূলক ধর্মতত্ত্বের নামে; (ক) ‘আল্লাহকে ব্রাহ্ম, বিষ্ণু নামে ডাকা যাবে মর্মে মত দেন। (খ) হিন্দুদের রামকৃষ্ণ নবী হতে পারেন বলে মত দেন। (গ) হিন্দুদের বেদ আল্লাহর বাণী হতে পারে বলে মত দেন। * ডাঃ জাকির নায়েক ওসামা-বিন-লাদেনের পক্ষ সমর্থন করে ধর্মীয় সন্ত্রাসবাদকে সমর্থন করেন। * রমজান মাসে ফজরের আজান হলেও সেহরি খাওয়া যাবে বলে ফতোয়া দেন। * ডাঃ জাকির নায়েক তাবলীগ জামায়াতের চিল্লার বিরোধিতা করেছেন। উপরে বর্ণিত ভুল ব্যাখ্যার কারণে ডাঃ জাকির নায়েককে বিভিন্ন দেশে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। উপরে বর্ণিত ভুল ব্যাখ্যার কারণে ডাঃ জাকির নায়েকের বিরুদ্ধে- * বিভিন্ন দেশের আলেম-ওলামাগণ ফতোয়া দিয়েছেন। তাকে কাফির, গোমরাহ, পথভ্রষ্টকারী ও মুসলিম উম্মাহর বিভক্তি সৃষ্টিকারী ও ইসলাম ধ্বংসের ষড়যন্ত্রকারী বলে সর্বজন শ্রদ্ধেয় আলেম-ওলামাগণ ফতোয়া দিয়েছেন। * ভারতের এলাহাবাদ হাইকোর্টে তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের, গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি এবং লক্ষেèৗতে পিস টিভির সম্প্রচার বন্ধ করে দেয়া হয়। * গ্লোবাল টেরোরিজম বিস্তারে মদদ দান ও ওসামা-বিন-লাদেনকে সমর্থন করায় ব্রিটেনে তাকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কানাডা সরকার তার ভিসা বাতিল করেছে। * সমগ্র ভারতে পিস টিভির সম্প্রচার বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। * ভারত সরকার তার নামে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন। বর্ণিত অবস্থায় নিম্নোক্ত পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করা জরুরী * বাংলাদেশের পিস টিভির কার্যক্রম অবিলম্বে বন্ধ করা এবং এর সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা। * পিস টিভির সকল প্রকাশনা নিষিদ্ধ করা। * সহজ-সরল ধর্মপ্রাণ মালিক ও পরিচালকদের ধর্ম-বিশ্বাসের সুযোগকে কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে যেসব জামায়াতী, লা-মাযহাবী ও সালাফী কর্মীগণ ইসলামের নামে ভ্রান্ত মতবাদ প্রচার করছে তাদের বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা। দেশের সুশীল সমাজ ও বিশিষ্টজনরা মনে করেন : দেশের সাম্প্রতিক জঙ্গীবাদী কর্মকা-ে উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তানদেরকে ধর্মের অপব্যাখ্যা ও মগজ ধোলাইয়ের মাধ্যমে বিপথগামী করা হচ্ছে। ধর্মান্ধতা বা ধর্ম সম্পর্কে ভালভাবে না জানা এবং না বোঝার কারণেই কোমলমতি শিক্ষার্থীরা জঙ্গীবাদে জড়িয়ে পড়ছে। বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ইংরেজী মাধ্যমের শিক্ষার্থীদের জঙ্গীবাদের দিকে ঝুঁকে পড়ার প্রবণতা লক্ষ্য করা গেছে। সন্তানের প্রতি পিতা-মাতার অমনোযোগিতা কিংবা তাদের কাজকর্মের খোঁজ-খবর না রাখাও এজন্য দায়ী। জঙ্গীবাদের পারিবারিক সম্পর্ক অর্থাৎ ছেলে-মেয়েদের সঙ্গে অভিভাবকদের সম্পর্ক থেকে সন্তানরা পথনির্দেশনা পায় এবং তাদের জীবনে প্রভাব বিস্তার করে। বর্তমানে পরিবারে নৈতিকতা শিক্ষার প্রচলন নেই। সামাজিক মূল্যবোধ সম্পর্কে সচেতন নয়। নৈতিকতা শিক্ষা এবং সামাজিক মূল্যবোধের অভাবে ছেলে-মেয়েরা জঙ্গীবাদের মতো জঘন্যতম কর্মকা-ে যুক্ত হচ্ছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মানবিক ও সামাজিক মূল্যবোধের শিক্ষার অভাব, কারিকুলাম ও সিলেবাস অনুযায়ী পড়ানো হয় না। সুষ্ঠু সংস্কৃতিচর্চা না থাকা এবং ধর্মান্ধতার কারণে জঙ্গীবাদে জড়িয়ে বিপথগামী হচ্ছে শিক্ষার্থীরা। পিতা-মাতা, শিক্ষক ও অভিভাবকদের প্রতি আহ্বান ইসলাম যেভাবে শিক্ষা দিয়েছে পিতা-মাতা, শিক্ষক ও অভিভাবকগণ যদি তাদের সন্তান ও অধীনস্থদের প্রতি অনুরূপ দায়িত্বশীল আচরণ করেন তাহলে তাদের বিপথগামী হওয়ার সম্ভাবনা অনেকাংশে কমে যাবে। কোন পিতা-মাতাই চান না তাদের সন্তান আত্মঘাতী বা সন্ত্রাসী হয়ে উঠুক। কাজেই আমাদের আহ্বান- আসুন, সবাই আমাদের সন্তানদের প্রতি যতœবান হই এবং তারা বিপথগামীদের কবলে পা দিয়ে সন্ত্রাসী কর্মকা-ে জড়িয়ে গেল কিনা এ ব্যাপারে সবসময়ই সতর্কতা অবলম্বন করি। আল্লাহ তায়ালা দেশ, জাতি ও মুসলিম উম্মাহকে মুনাফিকদের চক্রান্ত থেকে হেফাজত করুন। আমীন!
×