ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

রাজপথে সমাবেশে গণতন্ত্রের বদলে ইসলামী স্লোগান

তুরস্কে রাজনৈতিক ইসলামের জয়!

প্রকাশিত: ০৩:৩৯, ২০ জুলাই ২০১৬

তুরস্কে রাজনৈতিক ইসলামের জয়!

প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান সামরিক বাহিনীর বিরোধী অংশের অভ্যুত্থান চেষ্টা ব্যর্থ করে দেয়ার পর শনিবার রাতে ইস্তানবুলে তার বাসভবনের বাইরে একটি বাসের ছাদে দাঁড়িয়ে তার অনুসারীদের উদ্দেশে বলেন, ‘আমরা কেবল মাথা নোয়াব আল্লাহর কাছেই।’ এ অনানুষ্ঠানিক সমাবেশ তার পূর্বের দিনগুলোর কথা স্মরণ করিয়ে দেয় যখন এ জনপ্রিয় ইসলামীপন্থী নেতা প্রায়ই বক্তৃতা দিতেন বাসের ছাদ থেকে। সাম্প্রতিক দশকগুলোতে তুরস্কে কী ধরনের পরিবর্তন এসেছে তা সহজেই অনুধাবন করা যায় তার এ ইসলাম সম্পৃক্ত ভাষায়। তুরস্কে ব্যর্থ সামরিক অভ্যুত্থানে জয় সূচিত হয়েছে রাজনৈতিক ইসলামের। ইন্তানবুলের রাস্তাগুলোয় জনতা নেতার সমর্থনে সরবÑ গণতন্ত্রের জন্য নয়। দেশের ধর্মনিরপেক্ষ ঐতিহ্যের এক সময়ের অভিভাবক সামরিক বাহিনীর সদস্যদের গ্রেফতার করে কারাগারে নেয়া হচ্ছে এবং প্রশাসনে অনুমেয় অন্য বৈরীদের মধ্যে চালানো হচ্ছে শুদ্ধি অভিযান। তুর্কি কর্মকর্তারা বলেছেন, সোমবার প্রায় ৯ হাজার পুলিশ কর্মকর্তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। এ সামরিক বাহিনীই গত শতকে তিনটি অভ্যুত্থান ঘটাতে সফল হয়েছে। ইসলামপন্থীরা ইতোমধ্যে, রাস্তায় সরব হয়েছে। এরদোগান তাই রবিবার বলেছেন, তারা এ অবস্থানে থাকবেন। এ সপ্তাহান্তে সহিংসতায় নিহত এক ব্যক্তির দাফন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের জন্য ইস্তানবুলের ফাতিহ মসজিদে সমবেত জনতার উদ্দেশে তিনি বলেন, এ সপ্তাহটা গুরুত্বপূর্ণ। আমরা এ গণস্কয়ার ছেড়ে যাব না। এটা ১২ ঘণ্টার কোন ব্যাপার নয়। অভ্যুত্থান চেষ্টা চরমভাবে দমন করা হয়েছে বলেই মনে হচ্ছে। প্রায় ৬ হাজার সামরিক সদস্যকে কারাবন্দী করা হয়েছে। সহিংসতায় কমপক্ষে নিহত ২শ’ ৬৫ জনের মধ্যে অধিকাংশেরই দাফন অনুষ্ঠান রবিবার সম্পন্ন হয়েছে। কর্তৃপক্ষ এখন ভাবছে। অভ্যুত্থানের স্থায়ী পরিণতি কী হবে তা নিয়ে। এরদোগান অভ্যুত্থান ব্যর্থ করে দিয়েছেন। এখন সবচেয়ে যে জরুরী প্রশ্নটি দেখা দিয়েছে তা হচ্ছে, তিনি কি আরও শক্তিসম্পন্ন নেতা হিসেবে আর্বিভূত হলেন অথবা দুর্বল নেতা হিসেবে যিনি তার বিরোধীদের সঙ্গে অবশ্য খাপ খাইয়ে নেবেন? হ্যাঁ ব্যর্থ অভ্যুত্থানের কয়েকদিন পর এটা এখন স্পষ্ট যে, এরদোগান ও তার ধর্মীয় রক্ষণশীল অনুসারীদের জন্য অন্য সবকিছুর চেয়ে এটা রাজনৈতিক ইসলামের বিজয়। ধর্মনিরপেক্ষ ও উদারসংস্কৃতিমুক্ত তুর্কিরা সাধারণভাবে বিরোধিতা করেছেন অভ্যুত্থানের। এরদোগানের সমর্থকরা অভ্যুত্থান চেষ্টায়রত সৈন্যদের ঠেকাতে শনিবার রাস্তা ও ইস্তানবুলের প্রধান বিমানবন্দর নেমে আসে। তারা ধর্মীয় স্লোগান দেয় এবং এরদোগানের সমর্থনে চিৎকার করে, কিন্তু গণতন্ত্রের জন্য নয়। শনিবার এরদোগানের ভাষণের পর তার হাজার হাজার সমর্থক ইস্তানবুলে ইসতিকলাল স্ট্রিটে নেমে আসে। নারীরা রাস্তায় নেমে আসে হিজাব পরে। একটি ট্রাকে এরদোগান সম্পর্কে গান বাজতে থাকে। মোটর গাড়ির চালকরা ভেঁপু বাজাতে থাকে এবং পতাকা নাড়ে। এরদোগানের ইতিহাস আভাস দেয়, তার বিরুদ্ধে সর্বশেষ কিছু ঘটার সম্ভাবনা কম। প্রতিবারই তিনি তার ক্ষমতায় চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছেন। তিন বছর আগে রাস্তায় বিক্ষোভ থেকে শুরু করে এক দুর্নীতি তদন্তের প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন। তিনি তার বৈরীদের প্রতিহত করেছেন এবং হয়ে উঠেছেন আরও বড় স্বৈরতান্ত্রিক শাসক। -নিউইয়র্ক টাইমস
×