ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সুমন্ত গুপ্ত

ধূমকেতুর মতো আমার জন্ম

প্রকাশিত: ০৭:১৬, ১৯ জুলাই ২০১৬

ধূমকেতুর মতো আমার জন্ম

গ্র্যাজুয়েশন অর্থ কি চার বছরের পথচলা শেষ? না, শেষের শুরু? প্রতিদিন ক্লাসে যাওয়ার দৌড়াদড়ি, নানা দেশের নানা মতের বন্ধুর সঙ্গে আড্ডা। পড়াশোনা, গবেষণা, ঘুরে বেড়ানো, জানাশোনার চেষ্টায় জাদুঘর-লাইব্রেরি এখানে-সেখানে , এলিয়ট হাউসের ডাইনিং, বারান্দায় বৃষ্টি, তুষার আর রৌদ্রঝলক দিনগুলো সব কিছু স্মৃতির পাতায় জড়িয়ে আছে বলছিলেন এবারের ৩৬৫তম সমাবর্তনে অংশ নেয়া কৃষ্ণাঙ্গ শিক্ষার্থী ডোনোভান লিভিংস্টোন। গত ২৫ মে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে তার অসাধারণ কাব্যিক ব্যঞ্জনাপূর্ণ বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে আলোড়ন তুলেছে। এ পযন্ত ২০ মিলিয়ন মানুষ তার সমাপনী বক্তব্য ফেসবুকের মাধ্যমে দেখেছেন। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব এ্যাডুকেশনে দেয়া বক্তব্যে কৃষ্ণাঙ্গ শিক্ষার্থী ডোনোভান লিভিংস্টোন ‘লিফট-অফ’ নামের একটি কবিতার মাধ্যমে শিক্ষা সম্পর্কে তার দৃষ্টিভঙ্গি ও শিক্ষাব্যবস্থার বৈষম্য তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘শিক্ষা বৈষম্য দূর করে। কিন্তু ঊনবিংশ শতাব্দীতে কালো মানুষেরা শিক্ষার কথা বললে তাদের পিটিয়ে মারা হতো তাদের প্রতিনিয়ত চেষ্টা করা হতো শিক্ষা থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে, তাদের কে দেখা হতো ঘৃণার চোখে। বর্তমানেও শিক্ষায় বৈষম্য রয়েছে, সাদা কালোর মাঝে বিভেদ স্পষ্টত বিদ্যমান। বক্তব্যজুড়ে লিভিংস্টোন মার্কিন ইতিহাসে বর্ণ ও জাতিগত সম্পর্ক, ভিন্নতা ও অন্তর্ভুক্তি, শিক্ষার মাধ্যমে বিশ্বকে পরিবর্তন করা, মানুষের সুপ্ত প্রতিভাসহ নানা বিষয়ের ওপর আলোকপাত করেন। তার এই বক্তব্য অনুপ্রাণিত হয়ে হিলারি ক্লিনটন এবং জাস্টিং জাস্টিন টিম্বারল্যাকের মতো ব্যক্তিবর্গসহ অসংখ্য মানুষ ডোনোভান লিভিংস্টোন ভাষণ সামাজিক মাধ্যমে শেয়ার করেন। সমাবর্তন ভাষণ মূলত বর্তমান বিশ্বের ঘটনা বলির ওপর প্রদান করতে হয়। অনেকেই মনে করেন ডোনোভান লিভিংস্টোন বক্তব্য যারা শুনেছেন তারা খুব সৌভাগ্যবান কারণ হার্ভাড বিশ্ববিদ্যালয় ইতিহাসে এই প্রথম কেউ কবিতার মাধ্যমে তার অভিব্যক্তি তুলে ধরেন। প্রথাগত বক্তৃতার পরিবর্তে কবিতার মাধ্যমে কৃষ্ণাঙ্গ শিক্ষার্থী ডোনোভান লিভিংস্টোন তার অভিব্যক্তি তুলে ধরেন। ডোনোভান লিভিংস্টোন তার গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করেন জ্যাক ব্রাইট হাইস্কুল থেকে ২০০৫ সালে। এর পর তিনি শিক্ষার ওপর দুইটি মাস্টার ডিগ্রী নেন। একটি কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় ও অন্যটি হার্ভাড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। তার বক্তব্যের একটি অংশে তার গ্রেড সেভেন এর শিক্ষক সুসান পারকার কথা স্মরণ করে বলেন সুসান পারকার এর জন্যই তিনি ৭১তম ডিবেইট এর অনুষ্ঠানে অংশ নিতে পারেন। স্কুলে এর পর থেকেই তার আমূল পরিবর্তন ঘটে। ডোনোভান লিভিংস্টোনের বাবা মা দুইজনই অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক। তাদের অনুপ্রেরণাই আজ তিনি এতদূর এগিয়েছেন। বর্তমানে সামাজবিজ্ঞানে রিসার্চ সহকারি হিসেবে কর্মরত আছেন ডোনোভান লিভিংস্টোন। তার জুরি বোর্ডের শিক্ষকরা যখন শোনেন কবিতার মাধ্যমে তিনি বক্তব্য প্রদান করতে চাই তখন তারা বাধা প্রদান করেন এবং বলেন, পূর্ববর্তীরা যেভাবে সমাপনী বক্তব্য দিয়েছেন ঠিক সেভাবেই তাকে দিতে অনুরোধ করেন। কিন্তু সব বাধা পেড়িয়ে তিনি তার বক্তব্য প্রদান করেন তার কাব্যিক ছন্দে। এর মূল কারণ আগেও তিনি একটি ক্লাবের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। যেখানে শুধু কবিতা নিয়ে ক্লাস হতো। সেখানে তিনি দেখেছেন কিভাবে একটি কবিতার মাধ্যমে তথা কথিত সমাজ ব্যবস্থার ত্রুটিগুলো চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখানো যায়। কবিতার মাধ্যমে তিনি শিক্ষা ব্যবস্থায় জাতিগত বৈষম্য সম্পর্কে তার মনোভাব তুলে ধরেন। কালোরা সবসময়ই অবহেলিত। আমি নিজেই অনেক দিন কালো অন্ধকার কূপের মাঝে ছিলাম। আমাকে অনুমতি নিয়ে আলোর মুখ দেখতে হতো কিন্তু এখন আর সেইদিন নেই। এখন আমি নীল আকাশের তারাদের সহপাঠী, আমি আমার ছায়াপথে ভবিষ্যত প্রজন্মদের পথ আলোকিত করতে পারি। তাই এখন আর বসে থাকার সময় নেই এখন সময় হলো এগিয়ে যাবার। শিক্ষা মানুষের জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত কাজে লাগে, শিক্ষার কোন মৃত্যু নেই যা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মাতরে অসীম ক্ষমতার উৎস হিসেবে কাজ করে। শিক্ষা হলো মানুষের উন্নতির চাবি কাঠি। কিন্তু দুর্ভাগ্য যে আমি একজন কৃষ্ণাঙ্গ বিধায় অনেক বিভাজন ও আক্রমণ দেখেছি ও শিকার হয়েছি। যেখানে একটি শিশুকে তার অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়। একটি ফুলের বাগান আর একটি শ্রেণীকক্ষের মধ্যে মূল পার্থক্য হলো সময়। প্রতিনিয়ত আমি অবিচার সহ্য করেও সবার সঙ্গে এগিয়ে চলার চেষ্টা করছি। আমি আজ এই মঞ্চে দাড়িয়ে প্রেম এবং ব্যথা দুটিই অনুভব করছি। আমি তাদের দেখেছি যাদের মুখোশ এবং নষ্টামির নিচে, খাটি হতাশা বিদ্যমান। আপনারা আমাদের ক্রীতদাসকরণ করে রেখেছেন কিন্তু ধূমকেতুর মতো আমার জন্ম।
×