স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ আধুনিক লেগস্পিনকে যারা শিল্পে রূপ দিয়েছেন মুশতাক আহমেদ-শেন ওয়ার্ন তাদের অন্যতম। একসঙ্গে দুই গ্রেটকে স্মরণ করালেন ইয়াসির শাহ। ক্রিকেট-তীর্থে ২০ বছর আগে পাকিস্তানকে সর্বশেষ টেস্ট ম্যাচ জিতিয়েছিলেন ওয়াকার ইউনুস, সেবার ছিলেন মুশতাক, ১০ উইকেট নিয়ে এবার লর্ডস জয়ের ‘নায়ক’ ইয়াসির। কাকতালীয়ভাবে সিরিজে পাকিদের স্পিন-দীক্ষা দিচ্ছেন মুশতাক। কেবল তাই নয়, গ্রেট শেন ওয়ার্নের পর প্রথম ‘লেগস্পিনার’ হিসেবে আইসিসির টেস্ট র্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষে উঠে এলেন ইয়াসির শাহ। ৬ উইকেট নিয়ে প্রথম ইনিংসেই নাম লিখিয়েছেন লর্ডসের অনার্স বোর্ডে, দ্বিতীয় ইনিংসে আরও ৪। ১৩ টেস্টে এখন তার উইকেট ৮৬, যা একটি নতুন রেকর্ড। আরও অনেক অর্জন হাতছানি দিয়ে ডাকছে ৩০ বছর বয়সী পাকিস্তানী লেগস্পিনারকে।
রক্তে নিষিদ্ধ ড্রাগের (ওষুধ) অনুপস্থিতি ধরা পড়ায় আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে তিন মাস নিষিদ্ধ ছিলেন ইয়াসির। সব মিলিয়ে সাত মাস পর ফেরা, সেটিও ইংল্যান্ডের মতো বিরূপ কন্ডিশনে। অথচ এক ম্যাচে কত সমীকরণ বদলে দিলেন লেগস্পিনের এ নতুন বিস্ময়। ইনজুরির জন্য মাঠে নেই প্রতিপক্ষ শিবিরের ভয়ঙ্কর পেসার জেমস এ্যান্ডারসন। সেই তাকে পেছনে ফেলেই আইসিসি বোলারদের তালিকায় শীর্ষস্থান দখল করলেন ইয়াসির। লর্ডস টেস্টে এমন দুর্দান্ত পারফর্মেন্সে ‘চার’ থেকে ‘এক’ নম্বরে পাকিস্তানী স্পিনার। ১৯৯৬ সালের ডিসেম্বরে শীর্ষে উঠেছিলেন মুশতাক। এরপর দলটিতে কত বড় বড় বোলার এলেন, ওয়াসিম আকরাম, ওয়াকার ইউনুস, শোয়েব আকতার, সাকলাইন মুস্তাক, সঈদ আজমল... কেউ পারেননি। ২০০৫ সালে শেন ওয়ার্নের পর কোন লেগস্পিনার হিসেবে টেস্টে বিশ্ব র্যাঙ্কিংয়ের মুকুট ইয়াসিরের মাথায়।
বোলারদের র্যাঙ্কিংয়ে পরের চারটি স্থানে রবিচন্দ্রন অশ্বিন, জেমস এ্যান্ডারসন, স্টুয়ার্ড ব্রড ও ডেল স্টেইন। একদিক দিয়ে তো মুশতাক-ওয়ার্নকেও ছাড়িয়ে গেছেন। লর্ডসের ইতিহাসে ১০ উইকেট (ম্যাচে) নেয়া মাত্র দ্বিতীয় লেগস্পিনার ইয়াসির! যেখানে নাম নেই মুশতাক-ওয়ার্নেরও। ১৯৪৭ সালে সর্বশেষ এই কীর্তিটা গড়েছিলেন ডগ রাইট। আর সকল ধরনের স্পিন (অফস্পিনারসহ) হিসেবে ধরলে ইয়াসিরকে নিয়ে সংখ্যাটা ‘সাত’। ক্যারিয়ারে ১৩ টেস্টে ইয়াসিরের উইকেট এখন ৮৬। ১৩ টেস্ট খেলে আর কোনো বোলারই এত উইকেট পাননি। বিরল এক রেকর্ডের হাতছানি তার সামনে। সেটি অভিষেকের পর দ্রুত ১০০ উইকেটের। রেকর্ডটা ১২০ বছরের পুরনো! শত শিকারে জর্জ লেম্যানের লেগেছিল ১৬ টেস্ট, ইয়াসির যেভাবে খেলছেন, বাকি দুই বা তিন টেস্টে উইকেটের তিন অঙ্কে পৌঁছে যাওয়া খুবই সম্ভব। মাত্র ১৪ উইকেট দরকার। লর্ডসে যিনি ১০ উইকেট নেন, বাকি তিন টেস্টের ছয় ইনিংস মিলিয়ে সংখ্যাটা তো ‘মাত্র’ই!
আরও একটি বিষয় ভুলে গেলে চলবে না। এই টেস্টেই দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট হাতে ইয়াসির করেছেন মহামূল্যবান ৩০ রান, প্রথম ইনিংসে ১১*। ক্লোজ ম্যাচে পাকিস্তানের ৭৫ রানের জয়ে তার ৪১ রানের ‘বড়’ মহিমাটাই ফুটে ওঠে। তবে ইয়াসির খুশি দলের জয়ে,‘এটা দলীয় নৈপুণ্যের ফসল। আমি ভাল করতে চেয়েছি। এজন্য মুশি (মুশতাক) ভাইয়ের প্রতি কৃতজ্ঞ।’
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: