ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

শিল্পকলায় ঋত্বিক ঘটকের জ্বালা নাটক প্রদর্শনী

প্রকাশিত: ০৫:৫৬, ১৯ জুলাই ২০১৬

শিল্পকলায় ঋত্বিক ঘটকের জ্বালা নাটক প্রদর্শনী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আনন্দের উল্টো পিঠেই বিষাদের বিচরণ। তাই অভাব-অনটনের তাড়নায় আনন্দের পরিবর্তে জীবন হয়ে ওঠে বিষাদময়। দারিদ্র্যের কশাঘাতে ক্রমাগত বিপন্ন হয়ে পড়ে জীবনের পথচলা। মানুষ হয়ে পড়ে যুক্তিহীন। ফলে যে কোন মুহূর্তে সে পৌঁছাতে পারে যে কোন সিদ্ধান্তে। তবে জেগে ওঠে প্রশ্ন। মানুষের জীবনে এই সঙ্কটের সৃষ্টি হয় কেন? সেই উত্তর খুঁজতে গিয়ে দেখা মেলে দুই শ্রেণীতে বিভক্ত হয়ে আছে মানবসমাজ। একদিকে অবস্থান করছে শোষকের দল আর অন্য প্রান্তে রয়েছে শোষিত জনগোষ্ঠী। এই শোষিত মানুষরাই বেঁচে থাকার জন্য প্রতিনিয়ত লড়াই করছে নানা প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে। এমন পটভূমিতে কিংবদন্তি নির্মাতা ঋত্বিক ঘটক রচনা করেছিলেন নাটক ‘জ্বালা’। ১৯৫০ সালে নাটকটি রচনার অর্ধশতাব্দী পরে এটিকে মঞ্চে নিয়ে এসেছে দৃষ্টিপাত নাট্যদল। প্রযোজনাটির মঞ্চ পরিকল্পনার পাশাপাশি নির্দেশনা দিয়েছেন অভিজিৎ সেনগুপ্ত। এটি দলের ২৪তম প্রযোজনা। সোমবার বৃষ্টিসিক্ত সন্ধ্যায় শিল্পকলা একাডেমির স্টুডিও থিয়েটার হলে মঞ্চস্থ জ্বালা নাটকটি। এটি ছিল দৃষ্টিপাত নাট্যদলের নতুন প্রযোজনাটির দ্বিতীয় প্রদর্শনী। নাটকটির নির্দেশনা প্রসঙ্গে অভিজিৎ সেনগুপ্ত বলেন, চলচ্চিত্র ও নাট্যকার ঋত্বিক ঘটক এক অনন্য ব্যক্তিত্ব। প্রবল জেদী এবং আদর্শে অটল এই মানুষটি আমাকে প্রতিনিয়ত তাড়িত করে। তাঁর সৃষ্টি আমাকে আপ্লুত করে। ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলেন গণনাট্যের সঙ্গে। তাঁর রচিত জ্বালা নাটকটির বিষয়বস্তু আমাকে দারুণভাবে আকৃষ্ট করেছে। ফর্মের দিক থেকে এ্যাবসার্ড হলেও বিষয়ের ক্ষেত্রে উন্মোচিত হয়েছে মানুষের অন্তর্নিহিত উপলব্ধি। মানব জীবনের দুবির্ষহ যন্ত্রণার সুনিপুণ উপস্থাপন হচ্ছে এই নাটক। নাটকের পটভূমি ১৯৫০ সালের হলেও বিষয়ের কারণে এটি এখনও প্রাসঙ্গিক ও সমসাময়িক। শোষক শ্রেণীর ক্রমাগত মুনাফার লোভে সৃষ্ট শ্রেণী বৈষম্য এখনও উপস্থিত সমাজে। জ্বালা নাটকের চরিত্ররা সবাই বাঁচতে চায়। তবে অভাবের তাড়না এসে ধাক্কা দেয় সেই বাঁচার আকাক্সক্ষায়। ক্ষুধা আর দারিদ্র্যে রুদ্ধ হয়ে যেতে থাকে জীবনের গতি। তবুও বাঁচার আকাক্সক্ষায় চলতে থাকে প্রাণপণ লড়াই। ক্রমাগত লড়াই করতে একসময় ক্লান্ত হয়ে পড়ে শোষিত মানুষগুলো। বেঁচে থাকার পথগুলো সঙ্কীর্ণ হতে থাকলে বাড়তে থাকে হতাশা। বাঁচতে চাওয়া মানুষগুলো ক্লান্ত হয়ে একদিন ধাবিত হয় আত্মহননের পথে। তাদের উপলব্ধি ছিল আত্মহত্যার মাধ্যমে খুঁজে পাবে মুক্তির পথ। তবে বাস্তবে কি সেটা সম্ভব হলো? তাই মানুষের মুক্তি আসে কোন্ পথেÑসে প্রশ্নেরই উত্তর খোঁজার চেষ্টা করা হয়েছে এই নাটকে। প্রযোজনাটির বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন সুমী ইসলাম, মারুফ ইসলাম, আব্দুল হালিম আজিজ, রাকিব হোসেন, অভিজিৎ সেনগুপ্ত ও সুনীল কুমার দে।
×