ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

জাতীয় ঐক্য নিয়ে দেয়া প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য হতাশাজনক

প্রকাশিত: ০৫:৫৫, ১৯ জুলাই ২০১৬

জাতীয় ঐক্য নিয়ে দেয়া প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য হতাশাজনক

স্টাফ রিপোর্টার ॥ জাতীয় ঐক্য নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেয়া বক্তব্যকে হতাশাজনক বলে মন্তব্য করেছে বিএনপি। দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে পুনরায় ঐক্যের আহ্বান জানিয়ে বলেন, বিপুল জনগণের সমর্থপুষ্ট দল বিএনপি বাদ দিয়ে ঐক্য হয় কিভাবে। শুধু ক্ষমতাসীন ১৪ দলীয় জোটের ঐক্যকে প্রধানমন্ত্রী কিভাবে জাতীয় ঐক্য বলেন? প্রধানমন্ত্রী যে ঐক্যের কথা বলেছেন তা মূলত সরকারে আসীন দলগুলোর। এমনকি তাদের এ মহাজোটেরও ঐক্য নয়। গত বরিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সংবাদ সম্মেলনে দেয়া বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় বিএনপির পক্ষ থেকে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। প্রধানমন্ত্রী তার সংবাদ সম্মেলনে বলেন, জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে জাতীয় ঐক্য ইতোমধ্যে হয়ে গেছে। যাদের ঐক্য হলে সত্যিকারভাবে সন্ত্রাস দূর করা যাবে, তাদের ঐক্য কিন্তু ঠিকই গড়ে উঠেছে। এই ঐক্য থাকবে। দেশের জনগণই বিপদগামীদের খুঁজে বের করে বিচারের মুখোমুখি দাঁড় করাবে। এর প্রতিক্রিয়ায় নয়াপল্টন দলের কেন্দ্রীয় কর্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে নজরুল ইসলাম খান বলেন, একজন দায়িত্বশীল নেতার এ ধরনের বক্তব্য জাতিকে হতাশ করেছে। এক দল দিয়ে জাতীয় ঐক্য হয় না। এটা জাতির কাছে গ্রহণযোগ্য কিনা তিনিই ভাল বোঝেন। জাতীয় ঐক্য দরকার দেশের স্বার্থেই। এজন্য সব দলকে একসঙ্গে বসতে হবে। দেশকে জঙ্গীবাদের হাত থেকে বাঁচাতে হবে। দেশের এই জঙ্গীদের মোকাবেলা করতে হলে জাতীয় ঐক্যের কোন বিকল্প কোন পথ নেই। সরকারে পক্ষে একা জঙ্গী দমন করাও সম্ভব নয়। সন্ত্রাস ও উগ্রবাদ দমনে সবাইকে নিয়ে জাতীয় ঐক্য তৈরি করতে হবে। বিশিষ্টজনসহ সমাজের সবাইকে এর বিরুদ্ধে গণপ্রতিরোধ গড়ে তোলার কথা বলেন তিনি। নজরুল ইসলাম খান বলেন, ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্যই সন্ত্রাস ও উগ্রবাদকে ক্ষমতাসীনরা পরোক্ষভাবে সহযোগিতা করছে। তাদের সেই ভ্রান্ত রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের কারণেই আজ দেশব্যাপী সন্ত্রাস ও উগ্রবাদ বিস্তার লাভ করেছে। সরকারের সীমাহীন ব্যর্থতা, অযোগ্যতা, নির্লিপ্ততা, দায়িত্বহীনতা ও ভ্রান্ত নীতির কারণেই সন্ত্রাস, জঙ্গীবাদ মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। সারাদেশে জনগণের জানমালের নিরাপত্তা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। সমাজে সৃষ্টি হয়েছে অনাকাক্সিক্ষত অস্থিরতা। সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরও উল্লেখ করেন, বিএনপি শুরু থেকেই সরকারকে এ বিষয়ে সতর্ক করলেও এবং এ বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানালেও সরকার তাতে কর্ণপাত করেনি। এ জাতীয় ঘটনা ঘটলেই তার দায় বিএনপি ও অন্যান্য বিরোধী দলের ওপর চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেছে। মূলত তারা তাদের রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতেই সব সময় এ ধরনের দোষারোপের রাজনীতি করেছে। অহেতুক বিরোধী দলের হাজার হাজার নিরপরাধ নেতাকর্মীকে গ্রেফতার, মিথ্যা মামলায় দিয়ে হয়রানি করে প্রকৃত অপরাধীদের অপকর্ম চালিয়ে যাওয়ার সুযোগ দেয়া হয়েছে। তিনি সন্ত্রাস ও উগ্রবাদের বিরুদ্ধে জাতীয় ঐক্যের গুরুত্ব তুলে ধরে এ সময় আবারও সরকারকে ঐক্যের ডাকে সারা দেয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, এরপরও আমরা আহ্বান জানাব। রাজনৈতিক প্রতিহিংসা বা ব্লেইম গেম নয় দেশের নিরাপত্তা ও ভাবমূর্তি, জননিরাপত্তার স্বার্থে পরিস্থিতির গুরুত্ব অনুধাবন করে দলমত নির্বিশেষে জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি করতে হবে। দেশ ও জাতিকে অনিশ্চিত ভবিষ্যত থেকে রক্ষা করার আহ্বান জানান। বলেন, বিএনপি মনে করে শুধুই বিরোধী দলের ঐক্য কিংবা শুধুই সরকারের তার দল বা জোটের যে ঐক্য তা সঙ্কট সমাধানের জন্য যথেষ্ট নয়। সকলের সম্মিলিত ঐক্য এই ধরনের সঙ্কট সমাধানের মূল উপায়। কারণ সমস্যাটা বিস্তৃত হয়ে গেছে। আজ গ্রাম থেকে শহর, বন্দর থেকে গঞ্জ কোথাও কেউ নিরাপদ বোধ করছে না। প্রধানমন্ত্রী নাকচ করলেও বিএনপির পক্ষ থেকে জাতীয় ঐক্যের ডাক থাকবেই উল্লেখ করে বলেন, সরকার এখন রাজি হয় নাই। গতকাল রাজি হয় নাই। আগামীকাল রাজি হতে পারে। আমরা বলতেই থাকব, বসে থাকব না। আমরা আমাদের কাজ করতে থাকব উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, শুধু ক্ষমতাসীনদের ঐক্য সন্ত্রাস ও উগ্রবাদ দমন করতে পারেনি। বরং তা বৃদ্ধি ও বিস্তৃতি করেছে। শুধু সব দল মতের ঐক্যই কেবল এ ধরনের ঘটনার হ্রাস, সংকুচিত ও নিঃশেষ করতে পারবে। জাতীয় ঐক্যের অংশ হিসেবে সরকার তৃণমূলে কমিটি গঠন শুরু করেছে বলে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, তৃণমূলে যে কমিটি হবে আওয়ামী লীগের কমিটি হবে। আমরা বলতে চাই যে শুধু সরকার পারবে না, শুধু আমরাও পারব না। সবাই মিলে পারব। জনগণের সর্বাত্মক ঐক্যই এটা প্রতিরোধ করতে পারে। প্রধানমন্ত্রী ঐক্য প্রক্রিয়ার বিএনপির প্রস্তাব নাকচ করলেও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে জাতীয় ঐক্য গড়তে বিএনপি বিভিন্ন পেশার মানুষের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে যা দরকার তা করবে বলে সংবাদ সম্মেলনে উল্লেখ করেন। সংবাদ সম্মেলনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যের সমালোচনা করে নজরুল ইসলাম খান বলেন, গুলশান ও শোলাকিয়া হামলার আশঙ্কার কথা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যদি আগেই জানতেন তা হলে আগেই এই হামলা প্রতিরোধ কেন করেননি। জেনেও কোন ব্যবস্থা না নেয়ায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অন্যায় করেছেন। সংবাদ সম্মেলনে এ সময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, সেলিমা রহমান, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, আবুল খায়ের ভুঁইয়া, আবদুস সালাম আজাদ ও শহিদুল ইসলাম বাবুল প্রমুখ।
×