ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

গুলশানে পুলিশী ভূমিকার প্রশংসা করেছে সব দেশ ॥ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

প্রকাশিত: ০৫:৫৪, ১৯ জুলাই ২০১৬

গুলশানে পুলিশী ভূমিকার প্রশংসা করেছে সব দেশ ॥ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রাজধানীর গুলশানের ক্যাফেতে জঙ্গী হামলার পর পরিস্থিতি সামাল দিতে গিয়ে পুলিশ যে ভূমিকা নিয়েছিল বিভিন্ন দেশ তার প্রশংসা করেছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। একই সঙ্গে এটাও জানিয়েছেন, সব জঙ্গীর সূত্র এক। গুলশান হামলায় নিহত দুই পুলিশ সদস্য স্মরণে রবিবার রাতে রাজারবাগের টেলিকম মিলনায়তনে এক সভায় একথা বলেন তিনি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এ ঘটনার পর জাপানের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আমার কাছে এসেছিলেন, তিনিও প্রশংসা করে গেছেন। আমার কাছে যেসব রাষ্ট্রদূত এসেছিলেন। সেই দিনের ঘটনায় সবাই পুলিশের প্রশংসা করে গেছেন। গুলশান ও শোলাকিয়ায় জঙ্গী হামলায় নিহত পুলিশ সদস্যদের রাষ্ট্রীয় খেতাব দেয়ার একটি প্রস্তাবে সহমত জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, যে চারজন শাহাদত বরণ করলেন তাদের অবশ্যই, জাতীয় সম্মান দেখানো উচিত বলে আমি মনে করি। গত ১ জুলাই রাতে গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তরাঁয় অস্ত্রধারীরা দেশী-বিদেশী অতিথিদের জিম্মি করে। পরিস্থিতি সামাল দিতে গিয়ে হামলাকারীদের বোমা-গুলিতে নিহত হন গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী কমিশনার রবিউল ইসলাম ও গুলশান থানার ওসি সালাহউদ্দীন। আহত হন বেশ কয়েক পুলিশ সদস্য। ওই ঘটনার পর পিছু হটে পুলিশ। তবে সারারাত পুলিশ, র‌্যাব ও বিজিবি সদস্যরা ক্যাফেটি ঘিরে রাখার পর সকালে সেখানে কমান্ডো অভিযান চালানো হয়। এরপর সেখান থেকে ১৭ বিদেশীসহ ২০ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। অভিযানে নিহত হয় পাঁচ জঙ্গী। এছাড়া ঈদের সকালে কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় জঙ্গীদের হামলায় দুই পুলিশ নিহত হন। পুলিশ সার্ভিস এ্যাসোসিয়েশন আয়োজিত এই সভায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দাবি করেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় জনগণ যেমন মুক্তিযোদ্ধাদের পাশে থাকত এখন তেমনই জনগণ পুলিশের পাশে সহযোগিতার জন্য এগিয়ে আসছে। পুলিশের সাফল্য গণমাধ্যমে যাতে প্রচার হয় সেজন্য উদ্যোগ নিতে অনুষ্ঠানে উপস্থিত তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুকে অনুরোধ করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আপনার মিডিয়ায় পুলিশের সফলতাগুলো তুলে ধরুন। শুধু পুলিশ নয়, আমাদের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আরও যারা আছেন তাদের সবার সাফল্য আপনি বলবেন। তাহলে পুলিশ উৎসাহিত হবে, সমাজ উৎসাহিত হবে, সবাই উৎসাহিত হবে। চলমান সঙ্কট সম্পর্কে আসাদুজ্জামান খান বলেন, সব সময় বলে আসছি, আমরা একটা ষড়যন্ত্রের শিকার হচ্ছি। এই ষড়যন্ত্র আমাদের দেশে থেকে হচ্ছে, বিদেশ থেকেও ইঙ্গিত আসছে, সহযোগিতা আসছে। সেগুলো কিন্তু আজকে চিহ্নিত করতে পেরেছি। গুলশান হামলার ভয়াবহতা তুলে ধরে তিনি বলেন, আমরা জঙ্গীদের তৎপরতা দেখেছি, তাদের হিংস্রতা দেখেছি, তাদের ভয়াবহতাও দেখেছি। আমরা অগ্নিসন্ত্রাস দেখেছি, টার্গেট কিলিং দেখেছি। আমরা সেই ১ তারিখে যে বর্বরতা দেখলাম, যে নৃশংসতা দেখলাম এ ধরনের ঘটনা এ দেশের মানুষ আগে কখনও দেখেনি। কী নৃশংসভাবে হত্যার পরও তাদের মাথা থেকে দেহ আলাদা করা হয়েছিল। এখানে কেউ বাদ যায়নি। নারী-পুরুষ কেউ বাদ যায়নি। সেই দৃশ্যও আমরা দেখলাম। আমরা দেখলাম শোলাকিয়ার ঈদগাহ মাঠের পাশে কী তা-ব তৈরির চেষ্টা নেয়া হয়েছিল। অথচ সবাই এরা বাংলাদেশের মানুষ। এগুলো সব একই সূত্রে গাথা। কখনও হুজি, কখনও জেএমবি, কখনও আনসারউল্লাহ বাংলা টিম, কখনও আনসার আল ইসলাম, কখনও হিযবুত তাহরীর হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে।’ জঙ্গীরা সব একই ‘সুতোয় গাঁথা’ মন্তব্য করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সেই একাত্তরে স্বাধীনতাবিরোধীদের চেহারা দেখেছি। এরপর একে একে আপনাদের চেহারা দেখে চিহ্নিত হয়েছেন। আমাদের পুলিশ বাহিনী, গোয়েন্দা সংস্থা আপনাদের সবাইকে চিহ্নিত করে ফেলেছে। জনরোষ থেকে বাঁচতে চাইলে তওবা করে ভাল রাস্তায় হাঁটুন। আপনারা চিহ্নিত হয়েছেন, অচিরে আপনারা সবই দেখতে পারবেন। ঢাকা মহানগর পুলিশের কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া বলেছেন, প্রতিনিয়ত ঢাকায় হামলার হুমকি পাচ্ছি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, আজকে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ প্রতিনিয়ত মেসেজ পাচ্ছি যে, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে হামলা হবে, ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে হামলা হবে। তবে যে কোন ধরনের পরিস্থিতি মোকাবেলায় পুলিশ প্রস্তুত রয়েছে । সাম্প্রতিক জঙ্গী হামলার পর পুলিশ সদস্যরা ‘কঠিন’ সময় পার করছেন বলে মন্তব্য করে ডিএমপি কমিশনার বলেন, ব্যক্তিগতভাবে বলি, জিম করে ওজন কমাতে পারিনি, ডায়েট করে ওজন কমাতে পারিনি; এই ঘটনায় চার কেজি ওজন কমেছে। আমার আইজি থেকে শুরু করে কনস্টেবল পর্যন্ত ‘উই আর ফেসিং দ্য সেম সিচুয়েশন।’ অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী মোজাম্মেল হক, বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী মীর্জা আজম, পুলিশের মহাপরিদর্শক একেএম শহীদুল হক, অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক জাবেদ পাটোয়ারি উপস্থিত ছিলেন।
×