ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বান্দরবান-কক্সবাজার সীমান্তে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তৎপর ॥ থমকে গেছে মৌলবাদী গোষ্ঠী

জঙ্গীদের মাঠে নামিয়ে ফায়দা হাসিলের চেষ্টা ব্যর্থ

প্রকাশিত: ০৫:৫৪, ১৯ জুলাই ২০১৬

জঙ্গীদের মাঠে নামিয়ে ফায়দা হাসিলের চেষ্টা ব্যর্থ

এইচএম এরশাদ, কক্সবাজার থেকে ॥ মৌলবাদী গোষ্ঠী ও তাদের সমর্থিত কয়েকটি রাজনৈতিক দলের কয়েক নেতার সঙ্গে গোপন বৈঠকে পরামর্শের পর নতুন লোকবল নিয়োগ, আরএসও’র প্রশাসনিক শক্তি বৃদ্ধি ও ভারি অস্ত্র সংগ্রহের মাধ্যমে ক্রমেই ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছিল মিয়ানমারের বিচ্ছিন্নতাবাদী জঙ্গী সংগঠন আরএসও। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রচেষ্টা ও তাদের তৎপরতায় ইদানীং দৃশ্যত থমকে গেছে আরএসও জঙ্গীগোষ্ঠী। ওই জঙ্গী সংগঠনের মাধ্যমে একাধিক রাজনৈতিক দল ও মৌলবাদী সংগঠন সরকারকে বেসামাল অবস্থায় নিয়ে ফায়দা হাসিল করতে চেয়েছিল। টেকনাফে শরণার্থী ক্যাম্পে আনসার ব্যারাকে সরকারী অস্ত্র লুটের মধ্য দিয়ে এদের পরিকল্পনার অংশবিশেষ শুরু করা হয়। তবে সরকার কঠোর অবস্থানে এবং তাৎক্ষণিক যৌথবাহিনীর ব্যাপক তৎপরতার কারণে জঙ্গীরা আর এগোতে পারেনি। সীমান্ত এলাকা, রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন এবং বিভিন্ন স্তরের লোকজনের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। একাধিক সূত্র জানায়, ১৯৭৮ সালে জেনারেল জিয়াউর রহমানের শাসনামলে দলে দলে অনুপ্রবেশ করে তিন লক্ষাধিক রোহিঙ্গা আশ্রয় নেয় কক্সবাজার ও বান্দরবান জেলায়। মৌলবাদ সমর্থিত রোহিঙ্গা জঙ্গীগোষ্ঠী (আরএসও) আশির দশক থেকে বান্দরবান-কক্সবাজার সীমান্তে সক্রিয় জঙ্গী সংগঠন পরিচালনা করছে। মিয়ানমার সীমান্তে একটি স্বাধীন ইসলামী রাষ্টৃ প্রতিষ্ঠাই আরএসও’র লক্ষ্য বলা হলেও বর্তমানে তারা এক শ্রেণীর রাজনৈতিক নেতার পরামর্শে আন্তর্জাতিক জঙ্গী সংগঠনের হয়ে সরকারবিরোধী বিভিন্ন প্ররোচনা ও দেশদ্রোহী কাজে লিপ্ত হয়ে পড়েছে। ফিলিপিন্স, পাকিস্তান, আফগানিস্তানসহ মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপের কয়েকটি দেশে ছড়িয়ে রয়েছে বিচ্ছিন্নতাবাদী এ সংগঠনের নেটওয়ার্ক। তাদের সঙ্গে হরদম যোগাযোগ রয়েছে আরএসও’র বাংলাদেশে বিভিন্ন স্থানে ঘাপটি মেরে থাকা প্রথমসারির একাধিক জঙ্গীর। সূত্র জানায়, বান্দরবান-কক্সবাজার সীমান্তে সক্রিয় একাধিক উগ্রপন্থী গোষ্ঠীর মধ্যে আরএসও-ই সবচেয়ে শক্তিশালী। লন্ডন প্রবাসী এদের নেতা নূরুল ইসলাম গ্রুপ অর্থ সংগ্রহের মূল কাজটি করে থাকে। বাংলাদেশে থেকে এর সমন্বয় করেন আরএসও’র প্রধান দুই নেতা মৌলভী আবু ছালেহ এবং হাফেজ ছলাহুল ইসলাম। অভিযোগ রয়েছে, আরাকান বিদ্রোহী গ্রুপকে অর্থ ও অস্ত্র দিয়ে পৃষ্ঠপোষকতা করে থাকে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন জঙ্গী সংগঠন। আরএসও’র প্রশিক্ষিত জঙ্গীরা বর্তমানে পরিচয় গোপন রেখে মসজিদ-মাদ্রাসাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে দায়িত্ব পালন করছে বলে জানা গেছে। এসব তথ্য জেনে বিভিন্ন স্থানে নজরদারি আরও বৃদ্ধি করেছে গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা। বর্তমানে আরএসও’র কয়েকটি অঙ্গসংগঠনও গড়ে উঠেছে। এরই একটি আরাকান রোহিঙ্গা ইউনিয়ন (আরআরইউ)। ২০১১ সালের ৩০ ও ৩১ মে সৌদি আরবের রিয়াদে অনুষ্ঠিত এক সভায় এ সংগঠনটির আত্মপ্রকাশ হয়। এর দায়িত্ব দেয়া হয়েছে আবুল ফয়েজ জিলানী, ড. মোহাম্মদ ইউনুস ও নুরুল ইসলামকে। আবু সিদ্দিক আরমানকে আরআরইউর কক্সবাজারের সমন্বয়কারী হিসেবে দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল। ২০১২ সালের ৩০ আগস্ট রামুতে আটক হলেও পরে পুলিশের দুর্বল রিপোর্ট দাখিলের পর কারাগার থেকে মুক্ত হয় ছয় জঙ্গী। ২০১২ সালের ১৩ জুলাই রিয়াদ থেকে বাংলাদেশে ফেরেন তিনি। ৩০ আগস্ট গোপন বৈঠক চলাকালে রামুর দারিয়ারদীঘি এলাকা থেকে পুলিশ আরমানসহ ছয় জঙ্গী সদস্যকে আটক করেছিল। আটকদের মধ্যে মুহাম্মদ ইউনুচ, রুহুল আমিন, লোকমান হাকিম, মুহাম্মদ ওয়াজেদ জালাল ও মুহাম্মদ নুর আল ফয়সালকে অঢেল টাকা দিয়ে জঙ্গীরা কৌশলে মুক্ত করে নিয়েছে। কক্সবাজার ও বান্দরবান জেলাকে মিয়ানমারের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন আরএসও’র কার্যক্রম পরিচালনায় অন্যতম ভেবে দুই জেলার বিভিন্ন স্থানে গড়ে তোলা হয়েছে আরএসও অর্থায়নে পরিচালিত রোহিঙ্গাদের জন্য একাধিক মাদ্রাসা ও এতিমখানা। বান্দরবান ও কক্সবাজারে আরএসও’র শক্তিশালী নেটওয়ার্ক রয়েছে। জেলা সদরের পিএমখালী, লিংক রোড, রামুর ঈদগড়, গর্জনিয়া, কচ্ছপিয়া, টেকনাফের শাপলাপুর, উখিয়ার কুতুপালং, নাইক্ষ্যংছড়ি, লামা, আলীকদমে রয়েছে ওই বিচ্ছিন্নতাবাদীদের শক্ত নেটওয়ার্ক।
×