ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

দেশে প্রথম এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ হচ্ছে, চুক্তি সই

প্রকাশিত: ০৫:৫১, ১৯ জুলাই ২০১৬

দেশে প্রথম এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ হচ্ছে, চুক্তি সই

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দেশের প্রথম তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) টার্মিনাল নির্মাণ চুক্তি সই করেছে সরকার। চুক্তি অনুযায়ী এক্সিলারেট এনার্জি বাংলাদেশ লিমিটেড ১৮ মাসের মধ্যে টার্মিনালটি নির্মাণ শেষ করবে। সেই হিসাবে ২০১৮ সালে টার্মিনালটি ব্যবহার শুরু হবে। এলএনজি আমদানি শুরু হলে এক লাফে দেশের প্রধান জ্বালানি গ্যাসের দাম অনেকটা বেড়ে যাবে। যদিও চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে জানানো হয় বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি এই বর্ধিত জ্বালানির দাম সমন্বয় করার জন্য উপযুক্ত হয়ে উঠছে। চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে জানানো হয় এলএনজির দাম ভোক্তা পর্যায়ে সহনীয় রাখতে দেশের গ্যাসের দামের সঙ্গে সমন্বয় করা হবে। এখন দেশে গড় গ্যাসের দাম ইউনিট প্রতি দুই দশমিক দুই ডলার। তবে আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম কমায় এলএনজির দামও কমেছে। বর্তমানে এলএনজি প্রতি বিটিইউ ৭ থেকে ৮ ডলারে পাওয়া যায়। দৈনিক ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি আমদানি করা হলেও দেশে গ্যাসের দাম এখনকার প্রায় দ্বিগুণ হয়ে যাবে। অর্থাৎ এলএনজি আমদানির শুরুতেই গ্যাস ব্যবহারকারীদের জন্য এখন দ্বিগুণ দাম গুনতে হবে। চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী আশা করেন, ভাসমান টার্মিনালটি থেকে আগামী বছর শেষ নাগাদ জাতীয় গ্রিডে আমদানি করা গ্যাস সরবরাহ করা যাবে। নির্ধারিত সময়ের আগেই কাজ শেষ করলে এক্সিলারেট এনার্জি পার্টারশিপ এর জন্য প্রণোদনা থাকবে বলেও জানান তিনি। এখন আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি বিটিউ এলএনজির দাম সর্বোচ্চ আট ডলার। সেই হিসাবে বছরে এলএনজি আমদানিতে অন্তত এক দশমিক ৫৬ বিলিয়ন ডলার খরচ হবে। ভাসমান টার্মিনাল ব্যবহারের জন্য বছরে ৯০ মিলিয়ন ডলার ব্যয় হবে। এটিই ৩ ভাগ এবং ভ্যাট ১৫ ভাগ মিলিয়ে বছরে দুই হাজার ২৫৪ কোটি টাকা পরিশোধ করতে হবে। নির্মাণ চুক্তিটি সরকারের পক্ষে উপসচিব জনেন্দ্র নাথ সরকার এবং টার্মিনাল ব্যবহার চুক্তিটি পেট্রোবাংলার পক্ষে সংস্থার সচিব সৈয়দ আশফাকুজ্জামান স্বাক্ষর করেন। অপরদিকে দুটি চুক্তিতেই এক্সিলারেট এনার্জি প্রধান উন্নয়ন কর্মকর্তা ড্যানিয়েল বুসটস সই করেন। প্রধান অতিথির বক্তৃতায় উপদেষ্টা বলেন, আমরা অতিথিপরায়ন জাতি। এ বিষয়ে আমাদের সুনাম রয়েছে। কিছু মানুষ পথভ্রান্ত হয়ে উগ্রবাদের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে। তাদের তিনি প্রকৃত ইসলামের পথে ফিরে আসার আহ্বান জানান। উপদেষ্টা বলেন, ইতিহাসে কোন দিনই হত্যা-সন্ত্রাস এসব জয়যুক্ত হয়নি। বিদেশীরা, প্রতিবেশীরা আমাদের বন্ধু। আমাদের নিজেদের নিরাপত্তার সঙ্গে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে কাজ করতে হবে। বিগত ২০১০ সালে টার্মিনাল নির্মাণে দরপত্র আহ্বান করা হয়। পরবর্তীতে ২০১০ সালে মোট তিনটি প্রতিষ্ঠান আগ্রহ দেখিয়ে প্রস্তাব দেয়। তবে ওই প্রস্তাব ধরেই বিদ্যুত জ্বালানি সরবরাহ বিশেষ আইনে কাজটি দেয়ার প্রক্রিয়া শুরু করা হয়। এর ভিত্তিতে ২০১৪ সালের ২৬ জুন চুক্তির টার্মশিট অনুস্বাক্ষর হয়। পরবর্তীতে ২০১৫ সালের ১৪ জানুয়ারি টার্মশিটটি অনুমোদন করে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। টার্মশিটটি গত বছর ফেব্রুয়ারিতে স্বাক্ষর করা হয়। পরে প্রাথমিক জরিপ করে নেদারল্যান্ডসের একটি কোম্পানি প্রতিবেদন দেয়। গত ৩১ মার্চ টার্মিনালটির চুক্তি অনুস্বাক্ষর করা হয়। অনুষ্ঠানে বিদ্যুত জ্বালানি এবং খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, আমাদের অর্থনীতি দ্রুত বিকশিত হচ্ছে। সরকার জ্বালানির সংস্থানে কাজ করে যাচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা আরও চারটি স্থায়ী এলএনজি টার্মিনাল করব এছাড়া ভাসমান আরও দুটো টার্মিনাল করার প্রস্তাব আমাদের কাছে রয়েছে উল্লেখ করে বলেন, আমরা এসব নিয়ে কাজ করছি। আগামী ২০১৮ সাল নাগাদ দেশীয় গ্যাসের উৎপাদন কমতে শুরু করবে। আমরা আরও ১০৮টি নতুন কূপ খননের উদ্যোগ নিয়েছি। এখান থেকে গ্যাস তোলার পাশাপাশি আমাদের চাহিদা মেটাতে এলএনজি আমদানি করতে হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি। তিনি বলেন, আমাদের দৈনিক সাড়ে তিন হাজার মিলিয়ন ঘনফুটের মতো এলএনজির চাহিদা তৈরি হবে। প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমাদের বিদেশী মেহমানদের নিরাপত্তার দিকে বিশেষ নজর দিচ্ছি। সাম্প্রতিক সময়ে ঘটে যাওয়া দুর্ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করে বলেন। আমরা নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করছি। এ ধরনের সন্ত্রাস সৃষ্টি করে উন্নয়নের গতিকে পিছিয়ে রাখা যাবে না। তিনি এলএনজি আসলে জ্বালানির দাম বৃদ্ধি পাবে উল্লেখ করে বলেন, কিভাবে ব্যয় সমন্বয় করে উৎপাদন খরচ কমানো যায় সেই কৌশল আমাদের রপ্ত করতে হবে। চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে এক্সিলারেট এনার্জির প্রধান উন্নয়ন কর্মকর্তা ড্যানিয়েল বুসটস বলেন, বাংলাদেশ দ্রুত অর্থনৈতিক উন্নয়ন হচ্ছে। গত কয়েক বছর প্রবৃদ্ধি ছয় শতাংশের ওপর রয়েছে। টেকসই উন্নয়নের জন্য জ্বালানির সংস্থান খুব গুরুত্বপূর্ণ। তিনি প্রকল্পে আর্থিক সহায়তা প্রদানের জন্য বিশ্বব্যাংকের গ্রুপ প্রতিষ্ঠানকে (আইএফসি) ধন্যবাদ জানান। চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে অন্যানের মধ্যে বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্সিয়া ব্লুম বার্নিকাট, পেট্রোবাংলা চেয়ারম্যান ইশতিয়াক আহমেদ, জ্বালানি সচিব নাজিম উদ্দিন চৌধুরী বক্তৃতা করেন।
×