ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

শুধুমাত্র গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হলেই কার্যকর হবে

সহজ হলো বাংলাদেশ-ভারত বন্দী বিনিময় চুক্তি

প্রকাশিত: ০৫:৫০, ১৯ জুলাই ২০১৬

সহজ হলো বাংলাদেশ-ভারত বন্দী বিনিময় চুক্তি

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ কারও বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হলে প্রমাণ উপস্থাপন না করেও বাংলাদেশ ও ভারত নিজেদের মধ্যে আসামি বিনিময় করতে পারবে। ফৌজদারি মামলায় বিচারাধীন বা দ-প্রাপ্ত আসামি বিনিময়ে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে বিদ্যমান বহিঃসমর্পণ চুক্তির একটি ধারা সংশোধন করে ওই সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছে। এ লক্ষ্যে সোমবার ভারতের সঙ্গে করা এই ‘বহিঃসমর্পণ চুক্তি’ সংশোধনের প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। সোমবার সচিবালয়ে মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে এ অনুমোদন দেয়া হয়। পাশাপাশি মন্ত্রিসভা ৩৪তম ও ৩৫তম বিসিএসে কারিগরি ও পেশাগত ক্যাডারে শূন্যপদে কোটা শিথিলের প্রস্তাব, সিনিয়র স্টাফ নার্স নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রার্থী সঙ্কটে কোটার শূন্যপদ মেধা তালিকার ভিত্তিতে পূরণ করা এবং ‘বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট আইন-২০১৬’ এর খসড়ার অনুমোদন দিয়েছে। বৈঠকে উপস্থিত মন্ত্রিসভার এক সদস্য বলেন, মন্ত্রিসভা বৈঠকে নির্ধারিত এজেন্ডার পর আলোচনায় স্থান পায় দেশ-বিদেশের সম্প্রতিক সন্ত্রাসী ও জঙ্গী ঘটনাগুলো। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, তুরস্কের জনগণ সেনা ক্যু প্রতিরোধ করে আমাদের দেশের উস্কানিদাতাদের শিক্ষা দিয়েছে। শুধু আমাদের দেশেই নয়, গোটা বিশ্বকে তারা একটা শিক্ষা দিল। এ থেকে আনেক কিছু শেখার আছে। তিনি বলেন, আমাদের দেশের জনগণও জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে উঠেছে। মানুষ জঙ্গীবাদ চায় না। ফ্রান্সের সাম্প্রতিক ঘটনা উল্লেখ করে তিনি বলেন, জঙ্গীবাদ শুধু বাংলাদেশে নয়, গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে। তবে আমরা এটি প্রতিহত করব। কোন অবস্থাতে বাংলার মাটিতে তাদের মাথা তুলে দাঁড়াতে দেব না। মন্ত্রীদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যে যেখানে কথা বলবেন, সকলে বলবেন, জঙ্গীবাদ প্রতিরোধ গণসচেতনতা বাড়াতে হবে। অভিভাবকরা তাদের সন্তানরা কে কোথায় কী করছে, খোঁজ রাখবেন। আমাদের সন্তান যারা প্রলোভনে পড়ে জঙ্গী কর্মকা-ে সম্পৃক্ত হচ্ছে, শুরুতে বুঝতে পারলে তাদের নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হবে। গুলশানের ঘটনা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এটি বর্হিবিশ্বের কাছে আমাদের ভাবমূর্তি নষ্ট করেছে। তবে আমরা এর মূল উৎপাটন করতে চাই। বাংলার মটিতে এদের ঠাঁই হবে না। প্রধানমন্ত্রী সাম্প্রতিক মঙ্গোলিয়া সফর সম্পর্কে মন্ত্রিসভাকে অবহিত করেন। মঙ্গোলিয়ান সরকারের আপ্যায়নের ভূয়সী প্রশংসা করে এ আপ্যায়নের বর্ণনা করেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, মঙ্গোলিয়া সরকার সম্মেলনে যোগ দেয়া বিভিন্ন রাষ্ট্রপ্রধানকে ঘোড়া উপহার দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, মঙ্গোলিয়া থেকে ঘোড়া আনা ব্যাপক ব্যয়বহুল। তিনি বলেন, এই ঘোড়া আনতে গেলে খাজনার চেয়ে বাজনা বেশি। তাই এ ঘোড়া না এনে সেখানে রেখে এসেছেন। বরং সেখানে থাকলে তারা বলবেনÑ এটি বাংলাদেশের ঘোড়া। গ্রেফতারি পরোয়ানা হলেই ভারত-বাংলাদেশ আসামি হস্তান্তর ॥ কারও বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হলে প্রমাণ উপস্থাপন না করেও বাংলাদেশ ও ভারত নিজেদের মধ্যে আসামি বিনিময় করতে পারবে। মন্ত্রিসভা বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সাংবাদিকদের বলেন, ভারতের সঙ্গে করা এই ‘বহিঃসমর্পণ চুক্তি’ সংশোধনের প্রস্তাব দিয়েছে মন্ত্রিসভা। ফৌজদারি মামলায় বিচারাধীন বা দ-প্রাপ্ত আসামি বিনিময়ে ২০১৩ সালের ২৮ জানুয়ারি ভারতের সঙ্গে ‘বহিঃসমর্পণ চুক্তি’ করে বাংলাদেশ। ওই বছরের ৭ অক্টোবর এ চুক্তিতে অনুসমর্থন দেয় মন্ত্রিসভা। চুক্তির একটি জটিল ধারা ভারত সরকার সহজ করার অনুরোধ করেছিল। যদি আমাদের দেশে কোন জজ, ম্যাজিস্ট্রেট, ট্রাইব্যুনাল বা এ ধরনের অথরিটি এ্যারেস্ট ওয়ারেন্ট ইস্যু করে থাকে আর সে যদি ভারতের লোক হয় তাহলে আমরা তার জন্য বহিঃসমর্পণের সুপারিশ করতে পারব। বাংলাদেশের কেউ ভারতে আছে কিন্তু বাংলাদেশে তার বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট জারি হয়ে গেছে, ট্রায়াল করার জন্য ভারত সরকার তাকে বাংলাদেশের কাছে হস্তাস্তর করবে। অনুরূপভাবে ভারত সরকার যদি ওয়ারেন্ট থাকা কাউকে চায় আমরা তাকে হ্যান্ডওভার করে দেব। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, আগে গ্রেফতারি পরোয়ানা থাকা কাউকে বিচারের সম্মুখীন করতে বহিঃসমর্পণের জন্য প্রমাণ উপস্থাপন করতে হতো। চুক্তি সংশোধনের প্রস্তাবে মন্ত্রিসভা অনুমোদন দেয়ায় এখন গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হলেই যে কাউকে বহিঃসমর্পণের সুপারিশ করা যাবে। বাংলাদেশে ১৮ বছর কারাবন্দী থাকার পর উত্তর-পূর্ব ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন উলফার নেতা অনুপ চেটিয়াকে গতবছর নবেম্বরে ভারত সরকারের কাছে হস্তাস্তর করে বাংলাদেশ। এর কয়েক দিনের মাথায় নারায়ণগঞ্জের চাঞ্চল্যকর সাত খুনের প্রধান আসামি নূর হোসেনকে বাংলাদেশের হাতে ফিরিয়ে দেয় ভারত। আট বছর আগে বাংলাদেশে অনুপ চেটিয়ার সাজার মেয়াদ শেষ হলেও তাকে হস্তান্তরের বিষয়টি বহুদিন আটকে ছিল। বলা হচ্ছিল, আসামি প্রত্যর্পণ চুক্তি না থাকায় তাকে ফেরানো যাচ্ছে না। শেষপর্যন্ত ২০১৩ সালে দুই দেশের মধ্যে বহিঃসমর্পণ চুক্তি হলেও প্রমাণ দাখিলের বাধ্যবাধকতার কারণে ওই আইনে তাকে ফেরানো যায়নি। একই জটিলতা ছিল নূর হোসেনের ক্ষেত্রেও। শেষপর্যন্ত তাদের হস্তান্তর করা হলেও তা বহিঃসমর্পণ চুক্তির আওতায় হয়নি বলে সে সময় জানিয়েছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। কিভাবে হস্তান্তর হয়েছে সেই ব্যাখ্যায় তিনি সে সময় বলেছিলেন, এটা বন্দীবিনিময় চুক্তির মাধ্যমে হয়নি। তাদের ছেড়ে দেয়ার আগে সে দেশের রাষ্ট্রদূতকে জানানো হয়েছে। এখন ছেড়ে দেয়ার পর তারা নিয়ে গেছে। দুই বিসিএসে শূন্যপদে কোটা শিথিল ॥ ৩৪তম ও ৩৫তম বিসিএসে কারিগরি ও পেশাগত ক্যাডারে শূন্যপদে কোটা শিথিলের প্রস্তাবে সায় দিয়েছে মন্ত্রিসভা। ফলে মুক্তিযোদ্ধা, নারী কিংবা নৃতাত্ত্বিক কোটায় কাউকে না পাওয়া গেলে মেধাতালিকা থেকে শূন্যস্থান পূরণ করা হবে। সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে কোটা শিথিলের প্রস্তাব অনুমোদন হয় বলে জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম। তিনি বলেন, নিয়োগ হয়ে যাওয়া ৩৪তম বিসিএসে কারিগরি ও পেশাগত ক্যাডারে কোটার বিপরীতে ৬৭২টি শূন্যপদ রয়েছে। এ পদগুলো ৩৫তম বিসিএসের মেধাতালিকা থেকে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে পূরণ করা হবে। অন্যদিকে লিখিত পরীক্ষা হয়ে যাওয়া ৩৫তম বিসিএসে মোট ১৮০৩টি পদে নিয়োগ দেয়া হবে। এই বিসিএসেও কারিগরি ও পেশাগত ক্যাডারে কোটার বিপরীতে যোগ্য লোক না পাওয়া গেলে সেগুলোও এই বিসিএসের মেধাতালিকা থেকে পূরণ করা হবে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, মুক্তিযোদ্ধা, নারী, নৃতাত্ত্বিক ইত্যাদি কোটার বিপরীতে যোগ্য লোক পাওয়া যাচ্ছে না। এ কারণে পদশূন্য থেকে যাচ্ছে। এতে সঙ্কট তৈরি হয়েছে। এসব পদ পূরণে মন্ত্রিসভা থেকে অনুমোদন নেয়া হলো। দশ হাজার নার্স নিয়োগে শূন্যপদে কোটা শিথিল ॥ সিনিয়র স্টাফ নার্স নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রার্থী সঙ্কটে কোটার শূন্যপদ মেধাতালিকার ভিত্তিতে পূরণ করা হবে। এজন্য বিধান সংশোধনের প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। সিনিয়র স্টাফ নার্স পদে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে বিশেষ কোটার কোন পদ যোগ্য প্রার্থীর অভাবে পূরণ করা সম্ভব না হলে সেসব পদ জাতীয় মেধাতালিকার শীর্ষে অবস্থানকারী প্রার্থীদের দিয়ে পূরণ এবং বিশেষ কোটার অপূরণকৃত পদ সংরক্ষণের বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সার্কুলারের বিধান শিথিলকরণের প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, সিনিয়র স্টাফ নার্সের অনেক পদ শূন্য আছে। প্রায় ১০ হাজার পদের মধ্যে কোটার কারণে অনেক পদ শূন্য রাখার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছিল। কোটা শিথিল করার অনুমতি দেয়ার পরিপ্রেক্ষিতে শূন্যপদে মেধারভিত্তিতে শীর্ষে অবস্থানকারী তালিকা থেকে পূরণ করা হবে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, কোটায় সিনিয়র স্টাফ নার্স নিয়োগের বিষয়টি শিথিল করা হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধা কোটায় না পাওয়া গেলে পদগুলো খালি থাকত। এখন নিয়োগের ক্ষেত্রে সেটা মেধারভিত্তিতে পূরণ করা সম্ভব হবে। মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, নাতি-পুতি কাউকে পাচ্ছি না। ৯ হাজার ৬১৬টি পদ পূরণের নিয়োগের কোটার ক্ষেত্রে এ শিথিল আদেশ প্রযোজ্য হবে। নতুনভাবে নিয়োগের ক্ষেত্রে বিধান শিথিলে আবারও মন্ত্রিসভার অনুমোদন নিতে হবে বলেও জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীন সেবা পরিদফতরের আওতায় দ্বিতীয় শ্রেণীর ‘সিনিয়র স্টাফ নার্স’ পদে নিয়োগ সরকারী কর্মকমিশনে (পিএসসি) প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট আইন অনুমোদন ॥ বৈঠকে ‘বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট আইন-২০১৬’ এর খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দেয়া হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এ আইনটি আগেই ছিল। ১৯৭৪ সালের দ্য জুট রিসার্চ ইনস্টিটিউট এ্যাক্টের মাধ্যমে পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করা হয়। এরপর আইনের অনেক সংশোধন আনা হয়। এর মধ্যে কিছু কিছু সংশোধন সামরিক শাসনামলে হয়েছে। এজন্য এটিকে নতুনভাবে সাজিয়ে আনা হয়েছে। আগের তুলনায় আইনটির পরিসর একটু বেড়েছে। বিজ্ঞানী, পরিচালক, প্রবিধান, বিধি, সম্পদের সংজ্ঞা সংযোজন করা হয়েছে। নতুন আইনে শাখা পর্যায়ে অফিস স্থাপনের বিধান রাখা হয়েছে।
×