ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

শীঘ্রই চালু হচ্ছে ৩৮৫টি, ইতোমধ্যে চালু ১০০

পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক ॥ ক্ষুদ্রঋণের উচ্চ সুদ থেকে মুক্তি দিতে দ্রুত হচ্ছে শাখা খোলা

প্রকাশিত: ০৫:৪৯, ১৯ জুলাই ২০১৬

পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক ॥ ক্ষুদ্রঋণের উচ্চ সুদ থেকে মুক্তি দিতে দ্রুত হচ্ছে শাখা খোলা

এম শাহজাহান ॥ পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের আরও ৩৮৫টি শাখা খোলার অনুমতি দেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক আইন অনুযায়ী ‘একটি বাড়ি একটি খামার’ প্রকল্পটিও ব্যাংকের অধীনে চালিয়ে নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। শীঘ্রই ৩৮৫টি উপজেলায় একযোগে পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হতে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে ১০০টি শাখা উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এতে করে সারাদেশে ৪৮৫টি উপজেলায় পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের কার্যক্রম ব্যাপকভাবে শুরু হতে যাচ্ছে। গ্রামীণ অর্থনীতির সম্প্রসারণ এবং ক্ষুদ্র ঋণের উচ্চ সুদের যন্ত্রণা থেকে সাধারণ মানুষকে রেহাই দিতে এই ব্যাংক কাজ করবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এ তথ্য। জানা গেছে, পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরুর সঙ্গে একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পটি বিলুপ্তির ঘোষণা থাকলেও ফের মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। ইতোমধ্যে প্রকল্প পরিচালক এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য পূরণে মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব করেছেন। তার এই প্রস্তাব বিবেচনায় নিয়ে ব্যাংকের অধীনে একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পটি চালিয়ে নেয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জনকণ্ঠকে বলেন, পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের একশ’ শাখা উদ্বোধনের পর এবার আরও ৩৮৫টি শাখা খোলার অনুমতি দেয়া হয়েছে। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ইতোমধ্যে শাখা খোলার অনুমতিপত্র সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোতে পাঠিয়েছেন। তাই সারাদেশে এবার পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের কার্যক্রম পরিচালিত হবে। তিনি বলেন, একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পটি ব্যাংকের অধীনে পরিচালিত হবে। এটি এখনই বন্ধ হচ্ছে না। প্রকল্পটি ব্যাংকেরই একটি চলমান প্রক্রিয়া হিসেবে চালিয়ে নেয়া হবে। তিনি বলেন, এতে আইনের লঙ্ঘন হচ্ছে না, কারণ পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক আইনের ৩৯ ধারায় এ বিষয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছেÑ একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পটি ব্যাংকের একটি চলমান প্রকল্প হিসেবে পরিচালনা করা যাবে। জানা গেছে, পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক আইন অনুযায়ী গত পহেলা জুলাই থেকে সব শাখা ব্যাংকে রূপান্তর হয়েছে। তবে এবার অর্থমন্ত্রীর অনুমতি পাওয়ায় বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলো দ্রুত আরও ৩৮৫টি শাখায় আনুষ্ঠানিকভাবে ব্যাংকিং কার্যক্রম শুরু করার উদ্যোগ গ্রহণ করবে। এদিকে গত ২০১৩ সালের ৯ অক্টোবর একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের অনুষ্ঠানে পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। তাঁর এই ঘোষণার পর গত ২০১৪ সালের ৮ জুলাই জাতীয় সংসদে পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক প্রতিষ্ঠার আইন পাস করা হয়। এছাড়া ওই বছরের ৩১ আগস্ট প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পকে স্থায়ী রূপদান করে বিশেষায়িত ‘পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক’ প্রতিষ্ঠা করা হয়। বর্তমান এই প্রকল্পের অধীনে দেশের সকল ইউনিয়নে প্রতি ওয়ার্ডে ১টি করে সমিতি গঠিত হয়েছে ও এর সদস্য সংখ্যা প্রায় ২৪ লাখের মতো। পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক পরিচালনার জন্য ইতোমধ্যে ৮ হাজার ৮২৫টি পদ সৃজন করা হয়েছে। আগে একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের অধীনে ৭ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান করা হয়েছিল। এখন ব্যাংকের অধীনে চেয়ারম্যান, এমডি, ডিএমডি, জিএম, ডিজিএম, এজিএম, এসপিও, পিও, এ্যাসিসট্যান্ট অফিসার পদসহ মাঠ সহকারীরা রয়েছেন। ইতোমধ্যে এই সমিতি দেশের সুবিধাবঞ্চিত মানুষের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিতা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। সহজ শর্তে ঋণ পাওয়ার পাশাপাশি গ্রামীণ অর্থনীতি বিকাশে ভূমিকা রাখছে এ প্রকল্পটি। ইতোমধ্যে এনজিওগুলোর ঋণ বিতরণের নামে গলাকাটা সুদের ব্যবসা কিছুটা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়েছে এই প্রকল্পের মাধ্যমে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সকল উপজেলায় ব্যাংকের শাখা চালুর মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচনে জন্য একটি মাইলফলক হবে। দরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিত মানুষকে সঞ্চয়ে উদ্বুদ্ধ করা, নারীর ক্ষমতায়ন ও অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করতে সরকার এটিকে বিশেষাতি ব্যাংক ঘোষণা করেছে। পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের চেয়ারম্যান ড. মিহির কান্তি মজুমদার জানিয়েছেন, ৪৮৫টি উপজেলার ৪ হাজার ৫০৩ ইউনিয়নের ৪০ হাজার ৫২৭ গ্রামে একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে। ইতোমধ্যে ১০০ উপজেলায় ভবন নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। এসব উপজেলায় শাখা চালু হচ্ছে। আরও ২০০ উপজেলায় ভবন নির্মাণ কাজ এ বছর শেষ হবে। ২০০ কোটি টাকা পরিশোধিত মূলধন নিয়ে চালু হচ্ছে এ ব্যাংক। এর মধ্যে ৯৮ কোটি টাকা প্রকল্পের আওতায় গঠিত সমিতির শেয়ারহোল্ডারদের। পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক যাদের ঋণ দিবে ॥ গ্রামীণ ব্যাংকসহ এনজিওগুলো ক্ষুদ্র ঋণের বিপরীতে উচ্চ মাত্রার সুদ আদায় করছে। এতে গরিব হয়ে পড়ছে আরও গরিব। বাড়ছে অর্থনৈতিক শোষণ। কিন্তু পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক থেকেই এবার জামানতবিহীন ঋণ দেয়া হবে। গরিব ও সমাজের প্রান্তিক মানুষদের অর্থনৈতিক কর্মকা-ের মূল ধারায় আনতে ৪৫টি খাতে ঋণ দিবে এই ব্যাংক। সরকার মনে করছে, এই ব্যাংক পুরোপুরিভাবে কার্যক্রম শুরু করলে ক্ষুদ্র ঋণের কিস্তির যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাবে দেশের খেটে খাওয়া গরিব মানুষ। কমে আসবে ক্ষুদ্র ঋণের সুদ হার। একই সঙ্গে ক্ষুদ্র ঋণের নামে বিভিন্ন এনজিও এবং ঋণদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে শৃঙ্খলা ফিরে আসবে। পাশাপাশি ঋণগ্রহীতারা সঞ্চয় করবেন এই ব্যাংকে। ফলে চাঙ্গা হবে গ্রামীণ অর্থনীতি। ব্যাংকটি দারিদ্র্য বিমোচনে ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে। পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের অনুমোদিত মূলধন ১ হাজার কোটি টাকা রাখার বিধান রাখা হয়েছে। একই সঙ্গে পরিশোধিত মূলধন ২০০ কোটি টাকা রাখা হয়েছে। পরিশোধিত মূলধনের ৫১ শতাংশ দেবে সরকার। ৪৯ শতাংশ দেবে একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের অধীনে গঠিত সমিতি।
×