ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

যমুনার দুর্গম চরে জঙ্গীবিরোধী যৌথ অভিযান

প্রকাশিত: ০৫:৪৯, ১৯ জুলাই ২০১৬

যমুনার দুর্গম চরে জঙ্গীবিরোধী যৌথ অভিযান

সমুদ্র হক/মাহমুদুল আলম নয়ন, বগুড়া অফিস ॥ বগুড়ার যমুনা তীরবর্র্তী এলাকা সারিয়াকান্দি ও ধুনটের দুর্গম চরাঞ্চলে সন্ত্রাস ও জঙ্গীবিরোধী অভিযান শুরু হয়েছে। র‌্যাব, বিজিবি ও পুলিশের সমন্বয়ে গঠিত যৌথবাহিনী এই অভিযান পরিচালনা করে। সোমবার ভোর থেকে শুরু হওয়া এই অভিযান দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে দিনভর সারিয়াকান্দির চরের ১০ গ্রাম ও ধুনটের চরের পাঁচ গ্রামে চলে। র‌্যাব, বিজিবি ও পুলিশের প্রায় ৫শ’ সদস্য এই অভিযানে অংশ নেয়। সূত্র জানায় ওই দুই উপজেলার দুর্গম চরাঞ্চলে গোপনে জঙ্গীদের প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে এমন তথ্যের ভিত্তিতে এই অভিযান শুরু হয়েছে যা অব্যাহত থাকবে। যমুনার এসব উপজেলা সদর থেকে নদীপথে ২০ থেকে ৩০ কিলোমিটারের মধ্যে। শ্যালো ইঞ্জিনচালিত নৌকায় পৌঁছতে সময় লাগে দুই থেকে তিন ঘণ্টা। র‌্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ চালুয়ার জামথৈল চরের শাহজালাল বাজরে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে জানান, শোলাকিয়ায় হামলাকারী আটক জঙ্গী শফিকুলকে যমুনার চরাঞ্চলে অস্ত্র ও বোমা প্রশিক্ষণ দিয়ে কিশোরগঞ্জ নিয়ে যাওয়া হয় হামলার জন্য। এমন তথ্যের ভিত্তিতে এবং আগের তথ্যসূত্র ধরে যমুনার চরাঞ্চলে অভিযান চালানো হয়। র‌্যাবের মহাপরিচালক বলেন জঙ্গীদের তথ্য দেয়া হলে ৫ লাখ টাকা পুরস্কার এবং যে সব জঙ্গী আত্মসমর্পণ করবে তাদের প্রত্যেককে দশ লাখ টাকা করে দেয়া হবে। যারা তথ্য দেবেন তাদের পরিচয় গোপন রাখা হবে এবং পরিবারের নিরাপত্তা দেয়া হবে। র‌্যাব ডিজি বলেন, অশান্তির শকুনেরা কোমলমতি কিশোরদের মগজ ধোলাই করে কসাইদের মতো ব্যবহার করছে। তাদের সম্পর্কে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান তিনি। চরাঞ্চলে যাতে জঙ্গীরা আশ্রয় না পায় সে জন্য সজাগ থাকতে হবে। গণসচেতনতা গড়ার লক্ষ্যে তিনি বলেন জঙ্গীদের নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। তারা সংখ্যায় বেশি নয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের দমন করবেই। অপর একটি খবরে বলা হয় অভিযানে অনেক তথ্য পাওয়া গেছে এবং এখনও মিলছে। এসব তথ্যের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। বগুড়া গাইবান্ধা রংপুর কুড়িগ্রাম জেলার প্রত্যেক চরেই নজরদারি ও অভিযান অব্যাহত থাকবে। বগুড়ায় অভিযানের সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্যরা চরের মানুষের মধ্যে গণসচেতনতামূলক বক্তব্য দিয়ে জঙ্গীদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়ার আহ্বান জানান। কিছুদিন ধরেই নানা মাধ্যমে খবর পাওয়া যাচ্ছিল জঙ্গীরা ব্রহ্মপুত্র ও যমুনার দুর্গম চরে অবস্থান নিয়ে বিপথগামী তরুণদের দলে ভিড়িয়ে অস্ত্র চালনা ও বোমা বিস্ফোরণের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। সম্প্রতি ঢাকার গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তরাঁয় জঙ্গী হামলা এবং কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া ঈদের জামাতের কিছু দূরে জঙ্গী হামলার বিষয়টি তদন্ত করতে দুর্গম চরে প্রশিক্ষণের তথ্য পায় পুলিশ ও র‌্যাব। বিশেষ করে গুলশানের হলি আর্টিজনে হামলাকারী ৫ জঙ্গীর পরিচয় উদ্ঘাটনে বগুড়ার দুই জনের সন্ধান মেলে। যার একজন শফিকুল ইসলাম উজ্জ্বলের বাড়ি ধুনটের চিথুলিয়া গ্রামে। শোলাকিয়ায় জঙ্গী হামলাতেও বগুড়ার এক জঙ্গীর সম্পৃক্ততা খুঁজে পাওয়া গেছে। যমুনার দুর্গম চরে যে জঙ্গী মহড়া ও প্রশিক্ষণ হয় তার আঁচ পাওয়া যায় এলাকার মানুষের কাছ থেকে। লোকজন বলাবলি করে, মাঝে মধ্যেই গভীর রাতে চরের ভেতরে বোমা বিস্ফোরণের মতো বিকট আওয়াজ শোনা যায়। এই শব্দ কিসের তা ঠাহর করতে পারে না তারা। তবে সোমবারের যৌথবাহিনীর অভিযান দেখে এলাকার লোকজনের কথা- তাদের এতদিনের ধারণা ভুল ছিল না। বগুড়ার সারিয়াকান্দির চর উত্তর ও দক্ষিণ ট্যাংরাকুড়া, পাকেরদহ, গুচ্ছগ্রাম কোটাপুর জামথৈল ঘাঘুয়ারচর কাজলার চরসহ ১০ গ্রাম এবং ধুনটের নিমগাছি সোনাহাটা নানন্দিয়া নাংলু ও ফরিদপুরে অভিযান চালানো হয়। অভিযানে তিনটি চাপাতি, তিনটি ছুরি, জিহাদী বই, এক কয়েল তারের কু-লী, ম্যাগজিন রাখার পেটি (থলে) উদ্ধার করা হয়। র‌্যাব-১২ কমান্ডিং অফিসার শাহাবুদ্দিন খান, র‌্যাব-৫ এর মেজর মঞ্জুর মোরশেদ, র‌্যাব-১৩ এর মেজর মাহমুদ, বগুড়ার অতিরিক্তি পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান, সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার গাজীউর রহমানসহ উর্ধতন কর্মকর্তা অভিযানে ছিলেন। বগুড়ার সীমানার উল্টো পাড়ের জেলা জামালপুরের ডিসি শাহাবুদ্দিন অভিযানের সময় ছিলেন। উল্লেখ্য, সারিয়াকান্দিতে যমুনার চরের ওপারের জামালপুর জেলার চর এলাকা। জঙ্গী ও দুষ্কৃৃতকারীরা এক এলাকায় অপরাধ করে পাশের এলাকায় গিয়ে আশ্রয় নেয়। এ বিষয়ে র‌্যাব ও পুলিশের কর্মকর্তারা বলেন দেশের প্রতিটি চরাঞ্চলেই নজরদারি করা হবে এবং অভিযান চলবে। জঙ্গীদের নির্মূল করতে সকল ব্যবস্থা নেয়া হবে। অভিযানের পাশাপাশি প্রতিটি এলাকায় জনসচেতনতামূলক বক্তব্য দেয়া হয়।
×