ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বাড়ছে নিখোঁজ

প্রকাশিত: ০৫:৪৭, ১৯ জুলাই ২০১৬

বাড়ছে নিখোঁজ

শংকর কুমার দে ॥ গুলশান ও শোলাকিয়ায় সন্ত্রাসী হামলার পর জঙ্গী সম্পৃক্ততার সন্দেহে নিখোঁজের তালিকায় ছাত্র-যুবকের পর এবার চিকিৎসক দম্পতিরাও। রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে এখন পর্যন্ত নিখোঁজ হওয়া প্রায় দু’শ’ জনের নাম পরিচয় পাওয়া গেছে, যাদের মধ্যে কয়েকজন তরুণীও রয়েছেন। নিখোঁজদের মধ্যে বেশ কয়েকজন বিদেশ চলে যাওয়ার তথ্য পেয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এর মধ্যে অন্তত সাত থেকে দশটি চিকিৎসক দম্পতি নিখোঁজ রয়েছে, যারা তুরষ্কে গেছে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। এ ছাড়াও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে দশ জনের নিখোঁজের ছবি সংবলিত বায়োডাটা প্রকাশ করে ফিরে আসার আহ্বানে এখনও কেউ ফিরে তো আসেইনি, বরং রাজধানীর রামপুরা থেকে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রসহ একই পরিবারের পাঁচজন নিখোঁজ হওয়ার বিষয়ে রামপুরা থানায় জিডি হয়েছে। এ ছাড়া আরও তিন নারী ও চার জন পুরুষসহ নতুন সাত নিখোঁজ ব্যক্তির সন্ধান চেয়েছে তাদের উৎকণ্ঠিত পরিবার। দুই দফায় অভিভাবকদের বরাত দিয়ে নিখোঁজ হওয়া প্রায় বিশজনের নাম ঠিকানা প্রকাশ করা হয়েছে। রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশের নিখোঁজরা আসলে কোথায় গেছে, কী করছে, তার সুনির্দিষ্ট কোন তথ্য পাওয়া না যাওয়ার কারণে আশঙ্কা, আতঙ্ক, উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা দেখা দিচ্ছে। এই ধরনের পরিস্থিতিতে নিখোঁজরা জঙ্গী তৎপরতায় জড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা থকে জঙ্গী অবস্থা থেকে কেউ স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এলে প্রত্যেককে ১০ লাখ টাকা পুরস্কার এবং জঙ্গীদের বিষয়ে তথ্যদাতাদের পরিচয় গোপন রেখে প্রতিজনকে ৫ লাখ টাকা পুরস্কারসহ ১৫ লাখ টাকার পুরস্কার দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে র‌্যাব। পুলিশ, র‌্যাব ও গোয়েন্দা সূত্রে এ খবর জানা গেছে। সূত্র জানান, আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর মাধমে অভিভাবকদের পক্ষ থেকে নিখোঁজ ব্যক্তিদের ফিরে আসার জন্য আহ্বান জানানোর পরও নিখোঁজরা ফিরে না এসে বরং নিখোঁজের তালিকা কলেবরে বর্ধিত হওয়ার কারণে জঙ্গী সম্পৃক্ততার ভয়ঙ্কর চিত্র ফুটে উঠছে। প্রায় এক বছরের মধ্যেই রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে সম্ভ্রান্ত পরিবারের বিত্তবান ঘরের উচ্চ শিক্ষিত ছাত্র, যুবক, শিক্ষক, চিকিৎসক শ্রেণীর জঙ্গী সম্পৃক্ততায় জড়িয়ে পড়ার বিষয়টি সামনে আসায় আতঙ্ক ও উদ্বেগ দেখা দিচ্ছে। আবার নিখোঁজদের অনেকেই বিভিন্ন সময় ফেসবুকে দেয়া স্ট্যাটাসে কয়েকজনের আকাক্সক্ষার বিষয়ে স্পষ্ট করে দিয়েছে। প্রথম দফায় দশ জন নিখোঁজের কূল-কিনারা না হওয়ার পর এখন আবার দ্বিতীয় দফায় নিখোঁজ হিসেবে সামনে আসা দশজনের মধ্যে তিনজন নারীও আছেন। এরা কোনপথে যোগাযোগ করেছেন বা আদৌ তারা জঙ্গী হিসেবে আন্তর্জাতিক যোগাযোগ সম্পন্ন করতে পেরেছেন কিনা, তা জানা না গেলেও পরিস্থিতি ও প্রেক্ষাপট বিশ্লেষণ করে তুরস্কের দিকেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সন্দেহের তীর বলে জানা গেছে। নিখোঁজের তালিকায় আরও সাত জনের নাম ॥ এবার নিখোঁজের তালিকায় আরও সাত জনের নাম পেয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এদের মধ্যে পাঁচ জন একই পরিবারের সদস্য। এই পাঁচ জনের মধ্যে আছেন স্বামী-স্ত্রী ও তাদের দুই মেয়ে ও এক ছেলে। গত বছর থেকে চলতি বছরের বিভিন্ন সময় তারা নিখোঁজ হয়েছেন। নিখোঁজ এই সাত জন দেশেই আছেন নাকি বিদেশে অবস্থান করছেন, তা জানার চেষ্টা করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। একইসঙ্গে তারা কোন ধরনের জঙ্গী কার্যক্রমে জড়িয়ে পড়েছেন কি না তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তবে তারা স্বেচ্ছায় অজ্ঞাত স্থানে চলে গেছেন বলে জানতে পেরেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এর আগে জঙ্গী সংগঠনের সঙ্গে জড়িয়ে পড়া স্বেচ্ছায় নিখোঁজ থাকা দশ তরুণের ছবি ও তথ্য প্রকাশ করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এই দশ তরুণের অনেকেই সিরিয়া গিয়ে আন্তর্জাতিক জঙ্গী সংগঠন ইসলামিক স্টেটের (আইএস) সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়েছেন বলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ধারণা করছে। তাদের অনেকে গত বছর ও চলতি বছরের বিভিন্ন সময় নিখোঁজ হন। অভিভাবকের পক্ষ থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে জানানোর পর জানা গেছে, নতুন করে প্রকাশ হওয়া নিখোঁজ সাত জন হলেন- বনানীর তাওসীফ হোসেন, পাসপোর্ট নম্বর- বিই০৩৫২৭৬১ এবং ডব্লিউ০৫৫৯২২৭, খিলগাঁও চৌধুরীরপাড়ার ডা. রোকনুদ্দীন খন্দকার, পাসপোর্ট নম্বর- এএফ১০১৩০৮৮, তার স্ত্রী নাইমা আক্তার, পাসপোর্ট নম্বর- বিসি০০০৬৯৩৭, রোকনুদ্দীন খন্দকারের দুই মেয়ে রেজওয়ানা রোকন, পাসপোর্ট নম্বর- বিসি০০৩৫১৯৮ ও রামিতা রোকন, পাসপোর্ট নম্বর- বিসি০০৪৫৩৩৯, ছেলে সাদ কায়েস, পাসপোর্ট নম্বর বিএফ০৪৮৬৬৪২ এবং সেজাদ রউফ ওরফে অর্ক ওরফে মরক্কো পাসপোর্ট নম্বর ৪৭৬১৪৫৯৯২। এর আগে নিখোঁজ হওয়া দশ ব্যক্তি হলেন- ঢাকার তেজগাঁওয়ের মোহাম্মদ বাসারুজ্জামান, বাড্ডার জুনায়েদ খান, পাসপোর্ট নম্বর-এএফ ৭৪৯৩৩৭৮, চাঁপাইনবাবগঞ্জের নজিবুল্লাহ আনসারী, ঢাকার আশরাফ মোহাম্মদ ইসলাম, ব্রিটিশ পাসপোর্ট নম্বর-৫২৫৮৪১৬২৫, সিলেটের তামিম আহমেদ চৌধুরী, পাসপোর্ট নম্বর-এল ০৬৩৩৪৭৮ এবং এএফ ২৮৩৭০৭৬, ঢাকার ইব্রাহীম হাসান খান, পাসপোর্ট নম্বর-এএফ ৭৪৯৩৩৭৮, লক্ষ্মীপুরের এটিএম তাজউদ্দিন, পাসপোর্ট নম্বর-এফ ০৫৮৫৫৬৮, ঢাকার ধানমণ্ডির জুবায়েদুর রহিম, পাসপোর্ট নম্বর-ই ১০৪৭৭১৯, সিলেটের মোহাম্মদ সাইফুল্লাহ ওজাকি, পাসপোর্ট নম্বর-টিকে ৮০৯৯৮৬০ ও মোহাম্মদপুরের জুন্নুন শিকদার, পাসপোর্ট নম্বর-বিই ০৯৪৯১৭২। এদের মধ্যে নিখোঁজ জুন্নুন শিকদার জঙ্গীবাদে সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের হাতে একবার গ্রেফতার হয়েছিলেন। পরে আদালত থেকে জামিনে বের হয়ে আত্মগোপনে চলে যায় জুন্নুন শিকদার। গোয়েন্দা সূত্র জানায়, নিখোঁজ হওয়া দশ জনের প্রথম তালিকায় তামিম আহমেদ চৌধুরী বাংলাদেশী নাগরিকত্বের পাশাপাশি কানাডার নাগরিক। তার কানাডিয়ান পাসপোর্ট নম্বর-ডব্লিউপি-৪৯৮৭২২, জেএইচ ১৩০১৩৩। এছাড়া আশরাফ মোহাম্মদ ইসলাম বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক। নিখোঁজদের মধ্যে জুবায়েদুর রহিম ও আশরাফ মোহাম্মদ ইসলাম দু’জনেই একে অপরের পরিচিত। তারা দু’জনই নিষিদ্ধ ঘোষিত হিযবুত তাহরীরের নেতা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সৈয়দ গোলাম মাওলার স্ত্রী জেনিফার আহমেদের পরিচালনাধীন আর্থ হাউজ অল্টারনেটিভ স্কুলের ছাত্র ও শিক্ষক ছিলেন। তারা গোলাম মাওলার মাধ্যমে জঙ্গী কার্যক্রমে সম্পৃক্ত হয়েছেন বলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা ধারণা করছেন। নিখোঁজ ব্যক্তিদের খোঁজা হচ্ছে। তারা যাতে দেশের বাইরে যেতে না পারেন সেজন্য তাদের ছবি ও পাসপোর্ট নম্বরসহ সব ইমিগ্রেশন পয়েন্টে সতর্কতা জারি করা হয়েছে। নেত্রকোনার দুই মাদ্রাসাছাত্রসহ তিন যুবক নিখোঁজ ॥ প্রায় এক বছর ধরে জেলার দুই মাদ্রাসা ছাত্রসহ তিন যুবক নিখোঁজ রয়েছে। তাদের সন্ধান চেয়ে পরিবারের সদস্যরা থানায় জিডি করেছেন। গুলশান ও শোলাকিয়ায় জঙ্গী হামলার পর স্থানীয় পুলিশ ওই তরুণদের সন্ধানে জোর তৎপরতা শুরু করেছে। নিখোঁজ যুবকরা হচ্ছে- আব্দুল্লাহ আল রাফি (১৪), আল-আমীন (১৩) ও ওয়াসিম মিয়া (২২)। আব্দুলাহ আল রাফির বাড়ি নেত্রকোনা শহরের পূর্ব কাটলী এলাকায়। তার বাবা মোঃ আব্দুস সাত্তার সেনাবাহিনীতে কর্মরত। রাফি কুড়পার এলাকার একটি হাফিজিয়া মাদ্রাসায় পড়ত এবং ওই মাদ্রাসার ছাত্রবাসেই থাকত। ২০১৫ সালের ২৭ ডিসেম্বর সে মাদ্রাসা থেকে বাসায় আসে এবং পরদিন মাদ্রাসায় যাবার কথা বলে বাসা থেকে বের হয়। এরপর তার আর কোন সন্ধান মেলেনি। এছাড়া গাজীপুর জেলার টঙ্গী এলাকার আইয়ুব আলীর ছেলে আল-আমীন নেত্রকোনা শহরের মোক্তারপাড়া এলাকায় রেজাউল ইসলাম নামে জনৈক ভাড়াটিয়ার তত্ত্বাবধানে ছিল। আল-আমিন শহরের নাগড়া এলাকার একটি হাফিজিয়া মাদ্রাসায় পড়ত এবং ওই মাদ্রাসার ছাত্রাবাসেই থাকত। গত বছরের ৯ মার্চ সে নিখোঁজ হয়। এর পর থেকে তারও কোন সন্ধান মেলেনি। ওদিকে পূর্বধলা উপজেলার ধোবা-হোগলা গ্রামের মোঃ আব্দুল গনির ছেলে ওয়াসিম মিয়া ওমান যাবার প্রস্তুতির কথা বলে চলতি বছরের ১২ এপ্রিল ঢাকায় যান। এর পর আর তিনি বাড়ি ফেরেননি। পরিবারের লোকজনও তাঁর সঙ্গে আর যোগাযোগ করতে পারেননি। এ ব্যাপারে জেলা পুলিশের এক উর্ধতন কর্মকর্তা বলেন, ওই নিখোঁজ যুবকরা জঙ্গী বা সন্ত্রাসী কর্মকা-ে জড়িত হয়েছে কিনা, সে রকম কোন তথ্য আমাদের জানা নেই। তবে সাম্প্রতিক ঘটনাবলীর পর আমরা তাদের সন্ধানে তৎপরতা জোরদার করেছি। হেঁটে এক এক করে ঢুকেছিল জঙ্গীরা ॥ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, গুলশান আর্টিজান বেকারি ও আশপাশের ক্যামেরাগুলো একত্র করে যা দেখছি, জঙ্গীরা গাড়ি ব্যবহার করেনি, হেঁটে হেঁটে আসছে, দু’জন-একজন করে আসছে। তিনি বলেন, ভিডিওতে যা দেখেছি, এ সমস্ত যুবক দুজন-একজন করে হাঁটতে হাঁটতে (গুলশানের বেকারির) ভেতরে ঢুকেছে। ভিডিওতে এ লোকগুলোকে রাস্তায় হাঁটতে দেখেছি। গত ১ জুলাই গুলশানের এই ক্যাফেতে জঙ্গীরা একটি মাইক্রোবাসে করে ঢুকে অস্ত্রের মুখে সবাইকে জিম্মি করেছিল বলে ভবনের এক নিরাপত্তাকর্মী জানিয়েছিলেন। ওই সময়কার একটি সিসি ক্যামেরায় ধারণ করা ভিডিওতে তা দেখা গেছে বলে সোমবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তরে এ কথা বলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। কূটনীতিক পাড়া গুলশানের ৭৯ নম্বর সড়কে বিদেশীদের কাছে জনপ্রিয় ওই ক্যাফেতে জঙ্গীরা ঢুকে অস্ত্রের মুখে সবাইকে জিম্মি করে। তাদের মোকাবেলায় গিয়ে নিহত হন দুই পুলিশ কর্মকর্তা। এরপর জঙ্গীরা ১৭ বিদেশীসহ ২০ জনকে হত্যা করে। প্রায় ১২ ঘণ্টা পর কমান্ডো অভিযান চালিয়ে ওই রেস্তরাঁর নিয়ন্ত্রণ নেয় সশস্ত্রবাহিনী। ওই অভিযানে ছয় হামলাকারী নিহত এবং একজনকে আটক করা হয় বলে সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়। গুলশানে নজিরবিহীন এই হামলায় জড়িতদের বেশিরভাগ উচ্চ মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান ছিলেন বলে তথ্য প্রকাশ হয়েছে। এই তরুণরা ঘরছাড়া ছিলেন বলে তাদের পরিবারগুলোর দাবি। তথ্য ছিল, তবে কোথায় তা ছিল না ॥ গুলশানে হামলার বিষয়ে গোয়েন্দাদের কাছে আগাম তথ্য ছিল বলে একদিন আগে দেয়া বক্তব্য থেকে সরে এসে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, গোয়েন্দারা হামলার আশঙ্কা করলেও স্থানের বিষয়ে স্পষ্ট ছিল না। রবিবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছিলেন, আমাদের কাছে গোয়েন্দা রিপোর্ট ছিল যে একটা কিছু হতে যাচ্ছে, হতে পারে গুলশান এলাকায়। আমরা নানানভাবে তৈরি ছিলাম। তার ওই বক্তব্যের প্রেক্ষাপটে গোয়েন্দা তথ্যের পরও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর আগাম সতর্কতার ঘাটতি নিয়ে সমালোচনা উঠেছে। সোমবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তারা আশঙ্কা করছিল এ ধরনের একটি ঘটনা ঘটতে পারে। কোথায় হবে, কখন হবে, কিভাবে হবে সেগুলো ছিল না। তিনি বলেন, এ ধরনের গোয়েন্দা তথ্য কিন্তু রোজই আসে। এ রকম হতে পারে, (হামলা) হবেই এ ধরনের তথ্য কিন্তু আসেনি। বাংলাদেশে নির্দিষ্ট স্থানের নাম উল্লেখ করে আরও জঙ্গী হামলার যে আশঙ্কার কথা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আসছে, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন, তথ্য অনুযায়ী তো বাংলাদেশ আজকে তটস্থ হয়ে গেছে। সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে যেভাবে প্রচারিত হচ্ছে এতে মানুষ আতঙ্কিত হচ্ছে। আমরা সব কিছুই আমলে নেই। আমরা যত ঘটনা, যত সংবাদ, যত তথ্য, ইচ্ছে করে বলুক আর উদ্দেশ্যমূলকভাবে বলুক, আমরা সব কিছু আমলে নেই, সব কিছু বিশ্লেষণ করি। জঙ্গী হামলা নিয়ে ফেসবুকে যারা তথ্য দিচ্ছেন বিটিআরসি তা নজরদারি করছে কি না- এ প্রশ্নে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ফেসবুকে যেসব তথ্য আসছে তা কোথা থেকে আসে তার সন্ধান করতে একটু সময় লাগে, সবই নজরদারিতে আছে, সবই দেখা হচ্ছে বলে জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। পরিচয় ও জঙ্গী আস্তানার বদল ॥ রাজধানী ঢাকা ও ঢাকার বাইরে একাধিক আস্তানা ব্যবহার করে জঙ্গীরা নিজেদের আড়াল করে রেখেছিল বলে নিশ্চিত হয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। জঙ্গী সহযোগী শনাক্ত করার জন্য ঘাঁটি খুঁজে বের করার চেষ্টা করা হচ্ছে। যে কোন ধরনের বড় এ্যাকশনের জন্য পরিকল্পনা, হামলা ও পালিয়ে থাকার জন্য জঙ্গীদের পৃথক ঘাঁটি থাকতে পারে যা স্বাভাবিক বলে মনে করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তদন্তে দেখা গেছে, ঢাকায় হামলার ক্ষেত্রেও তারা সহজেই ছাত্র সেজে একাধিক এলাকায় বসবাস করেছে। গত ৬ জুলাইয়ের পর থেকে গুলশান হামলার ঘটনায় জঙ্গী ও তাদের সহযোগীদের একের পর এক আস্তানা বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে। যেখানে তাদের ফেলে যাওয়া গ্রেনেড ও পোশাক উদ্ধার হচ্ছে বলে পুলিশ দাবি করছে। পুলিশের ধারণা গুলশানে হামলার আগে এসব বাসায় অবস্থান নিয়েছিল জঙ্গীরা। এসব বিষয়ে বর্তমানে তদন্ত করছে কাউন্টার টেররিজম এ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ইউনিট। এর মধ্যে ঢাকার গুলশানে হলি আর্টিজান রেস্তরাঁয় হামলাকারী নিবরাস ইসলাম পরিচয় গোপন করে সাঈদ নামে ঝিনাইদহ শহরের সোনালীপাড়ায় বাসা ভাড়া নিয়েছিল। এমন খবর পাওয়ার পর থেকেই শুরু হয় একের পর এক অভিযান আর বেরিয়ে আসতে থাকে একের পর এক আস্তানা। গুলশান হামলা তদন্তে জানা গেছে, হলি আর্টিজান রেস্টুরেন্টে হামলার আগে জঙ্গীরা বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার ৬ নম্বর রোডের ই-ব্লকের টেনামেন্ট-৩ এর ফ্ল্যাট -এ/৬ এ একত্রিত হয়েছিল। হামলার পর জঙ্গীদের সহযোগী সদস্যরা পালিয়ে যায়। তারা গত মে মাসের ১৬ তারিখে ফ্ল্যাটটি ভাড়া নিয়েছিল। এছাড়া ফ্ল্যাট মালিক ও নর্থ সাউথের প্রো-ভিসি গিয়াস উদ্দিন আহসান বাড়ি ভাড়া দেয়ার ক্ষেত্রে ভাড়াটিয়াদের তথ্য সংশ্লিষ্ট থানায় জমা দেয়া থেকে বিরত ছিলেন। এ কারণে গিয়াস উদ্দিনসহ ৪ জনকে আটক করেছে পুলিশ। আদালত তাদের ৮ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে। মোবাইল ফোনের কললিস্ট পরীক্ষা ॥ নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপ-উপাচার্য গিয়াউদ্দিন আহসান, তার ভাগ্নে আলম চৌধুরী, ভবনের তত্ত্বাবধায়ক মাহবুবুর রহমান তুহিন ও মিরপুরের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক নূরুল ইসলামকে ৮ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। এর মধ্যে প্রো-ভিসি গিয়াসউদ্দিনসহ অন্যদের মোবাইল ফোনের কললিস্ট পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে। তারা জঙ্গীদের বাড়ি ভাড়া দেয়ার সময়ে তাদের সঙ্গে কথাবার্তা বলেছে কি না? ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের এক কর্মকর্তা জানান, গুলশানের হামলায় জড়িত জঙ্গীরা ঢাকার শেওড়াপাড়া ও বসুন্ধরার দুই আস্তানায় যাতায়াত ও অবস্থান করত। এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য আছে। তথ্য যাচাই-বাছাই করেই এসব বাসার মালিকদের গ্রেফতার করা হয়েছে। জামালপুরে আনন্দ মিছিল, মিষ্টি বিতরণ ॥ নিজস্ব সংবাদদাতা জামালপুর থেকে জানান, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধকালে জামালপুরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে আলবদর বাহিনীর উদ্যোক্তা আশরাফ হোসাইনসহ তিনজনের মৃত্যুদণ্ড ও পাঁচজনের আমৃত্যু কারাদণ্ডের আদেশে আনন্দ মিছিল ও মিষ্টি বিতরণ হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধকালে জামালপুর সদর উপজেলার স্বজনহারা ব্যক্তিরাও এ রায়ে স্বস্তি প্রকাশ করেছেন। তবে পলাতক আসামিদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে রায় কার্যকরের দাবি জানিয়েছেন জামালপুরবাসী। রায় শোনার পর সোমবার বেলা ১২টার দিকে গণজাগরণ মঞ্চ জামালপুর জেলা শাখার আহ্বায়ক তানভীর আহম্মেদের নেতৃত্বে শহরে একটি আনন্দ মিছিল বের হয়। মিছিল শেষে শহরের দয়াময়ী এলাকায় তারা সাধারণ মানুষের মধ্যে মিষ্টি বিতরণ করেন। শহীদ নুরুল মোল্লিকের ভাগ্নে আজিজুর রহমান ডল বলেন, একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধকালীন একদিন আলবদর বাহিনীর প্রধান আশরাফ হোসাইনসহ কয়েকজনের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধ নিয়ে মামার ঝগড়া হয়। এরপর আলবদর আশরাফ হোসাইনের নেতৃত্বে মামাকে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে হত্যা করা হয়েছিল। ৪৩ বছর পর আসামিদের রায়ের খবরে অনেক খুশি হয়েছি। পলাতকদের দ্রুত গ্রেফতার করে রায় কার্যকর হলে আরও খুশি হব। শহীদ নুরুল মোল্লিকের সহধর্মিনী রৌশনারা মোল্লিক এই রায় শুনে আবেগাপ্লুত হয়ে কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ৪৩ বছর পর সঠিক বিচার পেয়ে বর্তমান সরকারের কাছে কৃতজ্ঞ । পলাতক যুদ্ধাপরাধীদের অবিলম্বে গ্রেফতার করে দ্রুত বিচার কার্যকর করার দাবি জানান তিনি ।
×