ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

স্বপ্নদলের দুই নাটকের প্রদর্শনী

প্রকাশিত: ০৪:৩১, ১৯ জুলাই ২০১৬

স্বপ্নদলের দুই নাটকের প্রদর্শনী

সাজু আহমেদ ॥ ঈদ-উল-ফিতরের পর দুটি প্রযোজনা মঞ্চায়ন করতে যাচ্ছে দেশের নন্দিত নাট্য সংগঠন স্বপ্নদল। এর মধ্যে আগামীকাল শিল্পকলা একাডেমির এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার হলে সন্ধ্যায় মঞ্চস্থ হবে ‘চিত্রাঙ্গদা’ এবং ২২ জুলাই ঢাকার বাইরে পাবনা শিল্পকলা একাডেমিতে মঞ্চস্থ হবে দলের আরেকটি নন্দিত প্রযোজনা ‘ত্রিংশ শতাব্দী’। দুটি নাটকেরই নির্দেশনা দিয়েছেন স্বপ্নদলের প্রধান জাহিদ রিপন। ঢাকায় ‘চিত্রঙ্গদা’ : দলসূত্রে জানা গেছে আগামীকাল বুধবার সন্ধ্যা সাতটায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার হলে ‘চিত্রাঙ্গদা’ নাটকের ৪৯তম মঞ্চায়ন অনুষ্ঠিত হবে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অমর সৃষ্টি ‘চিত্রাঙ্গদা’ নাটকের নির্দেশনা দিয়েছেন জাহিদ রিপন। ‘চিত্রাঙ্গদা’ নাটকের বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন সোনালী, মিতা, মোস্তাফিজ, শ্যামল, শিশির, সামাদ, জেবু, নাবলু, তানভীর, তানিয়া, কাসপিয়া, ঊষা, শুভ, অমর, আলী, জুয়েনা, বিপুল, সাইদ, সালাম, তীর্থ প্রমুখ। ‘চিত্রাঙ্গদা’ নাটকের কাহিনীতে দেখা যায় মহাবীর অর্জুন সত্যপালনের জন্য একযুগ ব্রহ্মচর্যব্রত গ্রহণ করে মনিপুর বনে এসেছেন। মনিপুর-রাজকন্যা চিত্রাঙ্গদা, অর্জুনের প্রেমে উদ্বেলিত হলেও অর্জুন রূপহীন চিত্রাঙ্গদাকে প্রত্যাখ্যান করেন। অপমানিত চিত্রাঙ্গদা প্রেমের দেবতা মদন এবং যৌবনের দেবতা বসন্তের সহায়তায় এক বছরের জন্য অপরূপ সুন্দরীতে রূপান্তরিত হন। এবারে অর্জুন যথারীতি চিত্রাঙ্গদার প্রেমে পড়েন। কিন্তু অর্জুনকে লাভ করেও চিত্রাঙ্গদার অন্তর দ্বন্দ্বে ক্ষতবিক্ষত হতে থাকেÑ অর্জুন প্রকৃতপক্ষে কাকে ভালোবাসেন, চিত্রাঙ্গদার বাহ্যিক রূপ নাকি তার প্রকৃত অস্তিত্বকে? এভাবে ‘চিত্রাঙ্গদা’ পৌরাণিক কাহিনীর আড়ালে যেন এ কালেরই নর-নারীর মনোদৈহিক সম্পর্কের টানাপোড়েন এবং পাশাপাশি পারস্পরিক সহাবস্থানের প্রেরণারূপে উপস্থাপিত হয়। আর প্রযোজনাটির উপস্থাপনায় প্রয়োগ করা হয়েছে হাজার বছরের নাট্য-ঐতিহ্যের ধারায় রবীন্দ্রনাথ-প্রত্যাশিত আধুনিক ‘বাঙলা নাট্যরীতি’। রবীন্দ্রনাথ মহাভারতের চিত্রাঙ্গদা-উপাখ্যান অবলম্বনে ১৮৯২-এ কাব্যনাট্যরূপে এবং ১৯৩৬-এ নৃত্যনাট্যরূপে ‘চিত্রাঙ্গদা’ রচনা করেন। এর মধ্যে কাব্যনাট্য পা-ুলিপিটি অবলম্বনে স্বপ্নদলের ‘চিত্রাঙ্গদা’ প্রযোজনা নির্মিত হয়েছে। স্বপ্নদলের ‘চিত্রাঙ্গদা’ প্রযোজনাটি ২০১১-এ সার্ধশত রবীন্দ্রবর্ষ উপলক্ষে বাংলাদেশ সরকারের সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অনুদানে নির্মিত হয়। পাবনায় ‘ত্রিংশ শতাব্দী : পাবনার বনমালী শিল্পকলা কেন্দ্রের আমন্ত্রণে স্বপ্নদলের অন্যতম প্রযোজনা ‘ত্রিংশ শতাব্দী’ নাটকের বিশেষ মঞ্চায়ন হবে। পাবনায় প্রযোজনাটির ৮৩তম মঞ্চায়ন অনুষ্ঠিত হবে। দলসূত্রে জানা গেছে আগামী শুক্রবার সন্ধ্যা সাতটায় বনমালী শিল্পকলা কেন্দ্র মিলনায়তনে নাটকের মঞ্চায়ন হবে। নাটক মঞ্চায়নের লক্ষ্যে স্বপ্নদলের সদস্যরা ২১ জুলাই রাতে পাবনার উদ্দেশ্যে ঢাকা ত্যাগ করবে। বাদল সরকারের মূল রচনা অবলম্বনে ‘ত্রিংশ শতাব্দী’ নাটকের রূপান্তরসহ নির্দেশনা দিয়েছেন জাহিদ রিপন। ‘ত্রিংশ শতাব্দী’ প্রযোজনার অভিনয় শিল্পীরা হলেন জুয়েনা শবনম, ফজলে রাব্বি সুকর্ন, সামাদ ভূঞা, শিশির সিকদার, মোস্তাফিজুর রহমান, জেবুন নেসা, শাখাওয়াত শ্যামল, মেহেদী রানা, তানভীর শেখ ও জাহিদ রিপন। যুদ্ধোন্মাদনার বিরুদ্ধে শৈল্পিক প্রতিবাদ ‘ত্রিংশ শতাব্দী’ নাটকের মূলকাহিনী পৃথিবীর ইতিহাসের সবচেয়ে কলঙ্কজনক অধ্যায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালে জাপানের হিরোশিমা-নাগাসাকির আণবিক বোমা বিস্ফোরণের অনভিপ্রেত বিষাদময় পরিণতি। এর সমান্তরালে গুরুত্বের সঙ্গে উপস্থাপিত হয়েছে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, বসনিয়া, আফগানিস্থান, পাকিস্তান-ভারত, ইরাকে আগ্রাসন, গাজা-কুয়েত-তিউনিশিয়া-ইয়ামেন-সিরিয়া-তুরস্ক-ফ্রান্স তথা গুলশান-শোলাকিয়ায় সাম্প্রতিক বর্বরতা প্রভৃতি প্রসঙ্গ। ‘ত্রিংশ শতাব্দী’ প্রযোজনায় নানাবিধ দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্লেষণের মাধ্যমে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে যুদ্ধবাজ-যুদ্ধাপরাধী-অশান্তিকামীদের স্বরূপ এবং তাদের কর্মের তাৎক্ষণিক ও সুদূরপ্রসারী বীভৎসতার চিত্র উদঘাটিত হয়েছে। সভ্যতা ধ্বংসকারী মানবসৃষ্ট যুদ্ধ-গণহত্যা-অনাচারের বিপরীতে মানুষ হিসেবে বর্তমান কর্তব্য অনুধাবন এবং এক্ষেত্রে দর্শককে সিদ্ধান্ত গ্রহণের মুখোমুখি স্থাপনই ‘ত্রিংশ শতাব্দী’ প্রযোজনার প্রত্যাশা। আর প্রযোজনাটির উপস্থাপনায় প্রয়োগ করা হয়েছে হাজার বছরের নাট্য-ঐতিহ্যের ধারায় আধুনিক বাংলা নাট্যরীতি। প্রসঙ্গত, স্বপ্নদলের ‘ত্রিংশ শতাব্দী’ প্রযোজনাটি যুক্তরাজ্যের লন্ডনে ইউরোপের স্বনামখ্যাত নাট্যোৎসব ‘১৩তম এ সিজন অব বাংলা ড্রামা-২০১৫’, নয়াদিল্লীর ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামা (এনএসডি)-তে এশিয়ার বৃহত্তম ও মর্যাদাপূর্ণ ভারতের রাষ্ট্রীয় নাট্যোৎসব ‘১৭তম ভারত রং মহোৎসব-২০১৫’, কলকাতার দমদমে ‘শম্ভু মিত্র ও বিজন ভট্টাচার্য স্মৃতি আন্তর্জাতিক নাট্যোৎসব-২০১৬’সহ ভারতের নদীয়া ও কল্যাণীতে আমন্ত্রিত প্রদর্শনীর মাধ্যমে ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়।
×