ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বগুড়ায় যক্ষ্মা চিকিৎসা ॥ রোগীদের ভোগান্তি

ইনডোর-আউটডোরের ব্যবধান ৬ কিলোমিটার

প্রকাশিত: ০৪:২০, ১৯ জুলাই ২০১৬

ইনডোর-আউটডোরের ব্যবধান ৬ কিলোমিটার

সমুদ্র হক ॥ বগুড়ায় টিবি ক্লিনিক ও টিবি হাসপাতালের অবস্থান দুই মেরুতে। একটি শহরের দক্ষিণে ঠনঠনিয়ায়, আরেকটি উত্তরে উপশহরে। ব্যবধান ৬ কিলোমিটার। ক্লিনিকটি বহির্বিভাগ; হাসপাতাল অন্তর্বিভাগ। ক্লিনিকের এক্স-রে ও রসায়নাগারের জিন এক্সপার্ট যন্ত্র অনেক দিন ধরে বিকল। স্বাস্থ্য বিভাগের নিয়মানুযায়ী সকল হাসপাতালেই ইনডোর ও আউটডোর একসঙ্গে থাকার কথা। বগুড়ায় এমন ব্যবধানে ইনডোর ও আউটডোর কার্যক্রম চলছে দীর্ঘদিন ধরে। রোগীদের ভোগান্তি বাড়ছে। কর্তৃপক্ষ জানালেন, হাসপাতাল ও ক্লিনিক একই সঙ্গে রাখার জন্য স্বাস্থ্য বিভাগে বহু দেনদরবার হয়েছে। চিঠি চালাচালি হয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একজন যুগ্মসচিব বগুড়ায় তদন্ত করে গেছেন। ইনডোর ও আউটডোর একসঙ্গে রাখার পক্ষে রিপোর্টও দিয়েছেন। কোন কাজ হয়নি। এ বিষয়ে জেলা সিভিল সার্জন রোগীদের ভোগান্তির কথা স্বীকার এবং বিষয়টির গুরুত্ব অনুভব করে বলেন, টিবি হাসপাতালটি আরও আধুনিকায়ন করে পূর্ণাঙ্গ এ্যাজমা হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এ পরিকল্পনাটি ঝুলে আছে। টিবি বা যক্ষ্মা ভাল হয়Ñ এমন স্লোগানে স্বাস্থ্য অধিদফতর দীর্ঘদিন ধরে প্রচার চালাচ্ছে। যক্ষ্মারোধে সরকারী ও বেসরকারী নানা কার্যক্রম বাস্তবায়িত হচ্ছে। বিশেষ করে ডিরেক্ট অবজার্ভড ট্রিটমেন্ট (ডট) অনেক সুফল এনেছে। যক্ষ্মা রোগীর সংখ্যা কমছে এটাও যেমন ঠিক, চিকিৎসার অবহেলায় রোগীও বাড়ছে। যক্ষ্মা ধরা পড়ার পর রোগ নিরাময়ে প্রথম কয়েকটি ডোজ সেবনের পর রোগী অনেক সময় মনে করে যক্ষ্মা সেরে গেছে। ওষুধ সেবন বন্ধ করে দেয়। ফলে রোগটি ফিরে আসে ভয়াবহ আকারে। বিংশ শতকের মধ্যভাগেই এ রোগ যে প্রতিরোধ করা সম্ভব তার সফল চিকিৎসার উদ্ভাবন ঘটে। তারই আলোকে বগুড়ায় যক্ষ্মা হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা হয় ষাটের দশকে। এরপরই স্থাপিত হয় যক্ষ্মা ক্লিনিক। একই সেবার প্রতিষ্ঠান অনেক দূরত্বে দুই জায়গায় হওয়ায় রোগীদের ভোগান্তি পোহাতে হয়। শহরের উত্তরে ঠনঠনিয়া ক্লিনিকে কাশি পরীক্ষা এক্স-রে জিন এক্সপার্ট যন্ত্র। সেখানে পরীক্ষা নিরীক্ষার পর রোগী ভর্তি করার অনুমতিপত্র দেয়া হয়। এ পত্র নিয়ে রোগীকে যেতে হয় ৬ কিলোমিটার দূরে উপশহরের ২০ শয্যার হাসপাতালে। সেখানে চিকিৎসা কার্যক্রমে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে ও রিপোর্ট দেখাতে ফের ছুটতে হয় ঠনঠনিয়ায়। রোগী সেরে যাওয়ার পর ছাড়পত্র নিতে হয় ক্লিনিক থেকে। ফের ভোগান্তি। যক্ষ্মা বা বক্ষব্যাধি ক্লিনিক ও হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়কের দায়িত্বে আছেন কনসালটেন্ট। দুই প্রান্তের দুই বিভাগ দেখভাল করতে তাকে হিমশিম খেতে হয়। প্রশাসনিক দায়িত্ব তাকে পালন করতে হয়। প্রতি মাসে গড়ে অন্তত তিন শ’ জটিল রোগী কাশি পরীক্ষার জন্য ক্লিনিকে আসে। বগুড়া ছাড়াও রোগী আসে নাটোর, জয়পুরহাট, নওগাঁ, গাইবান্ধা ও সিরাজগঞ্জ থেকে। জটিল রোগী ভর্তি করতে হয়। এদিকে ক্লিনিকের একমাত্র এক্স-রে মেশিনটি প্রায় আট বছর ধরে অচল হয়ে আছে। রসায়নাগারের (ল্যাবরেটরি) জিন এক্সপার্ট যন্ত্রের চারটি মডিউলের দুটিই দীর্ঘদিন ধরে নষ্ট। এ দুই মডিউল দিয়ে প্রতিদিন গড়ে ৮০ জনের কাশি পরীক্ষা সম্ভব হয়। যে কারণে অনেক রোগীর কাশি পরীক্ষা এক দিনে করা যায় না। এদিকে হাসপাতালে চিকিৎসা কর্মকর্তার দুটি পদের মধ্যে একটি পদ গত নবেম্বর থেকেই শূন্য। কিছুদিন হয় ধুনট ও কাহালু উপজেলা থেকে দুইজন মেডিক্যাল অফিসারকে প্রেষণে হাসপাতাল ও ক্লিনিকে পাঠানো হয়েছে। তারা নিয়মিত আসেন না। এভাবেই চলছে বগুড়ায় যক্ষ্মাসেবা কার্যক্রম।
×