ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

এরদোগানের প্রতি বিশ্ব নেতৃবৃন্দ

দমননীতি চালাবেন না

প্রকাশিত: ০৪:১৩, ১৯ জুলাই ২০১৬

দমননীতি চালাবেন না

তুরস্কের ব্যর্থ অভ্যুত্থানকে নিজের ইচ্ছামতো যা কিছু তা করার স্বাধীনতা হিসেবে ব্যবহার না করতে সে দেশের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগানকে সতর্ক করে দিয়েছেন বিশ্ব নেতৃবৃন্দ। ওই অভ্যুত্থান চেষ্টা তার ক্ষমতা সুসংহত করার অজুহাত হয়ে দাঁড়িয়েছেÑ এমন উদ্বেগের মধ্যে ওই বার্তা উচ্চারণ করা হলো। এরদোগান ওই ঘটনায় জড়িত থাকার সন্দেহে তার বিরোধীদের আটক করেছেন। সিনিয়র সেনা কর্মকর্তাসহ ৬ হাজারেরও বেশি সৈন্য ও বিচারককে গ্রেফতার করা হয়েছে। খবর টেলিগ্রাফ ও রুশ টিভির। তুরস্কে ভিন্নমতাবলম্বীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হতে পারে বলে ক্রমবর্ধমান আশঙ্কার মধ্যে ইউরোপীয় রাজনীতিকরা অভ্যুত্থান চেষ্টা এরদোগানকে আইনের শাসন উপেক্ষা করার স্বাধীনতা দেয়নি বলে তাকে হুঁশিয়ার করে দেন। ইউরোপীয় কমিশনার গুন্টার ওটিনগার বলেন, এরদোগান যদি মৌলিক গণতান্ত্রিক অধিকার আরও সঙ্কুচিত করতে অভ্যুত্থান চেষ্টাকে কাজে লাগানোর সিদ্ধান্ত নেন, তাহলে তিনি তুরস্ককে ইইউ ও প্রতিরক্ষা জোটের মূল মূল্যবোধ থেকে দূরে নিয়ে যাবেন। ইসলামিক স্টেটের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে তুরস্ক এ জোটের গুরুত্বপূর্ণ মিত্র। ওটিনগার বলেন, এরদোগান দেশের মধ্যে তার অবস্থানকে শক্তিশালী করবেন, কিন্তু তিনি আন্তর্জাতিকভাবে নিজেকে একঘরে করবেন। প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বলেন, তিনি গ্রেফতার করা অভ্যুত্থান ষড়যন্ত্রকারীদের কারও কারও প্রতি নির্মম আচরণের দৃশ্য দেখে উদ্বিগ্ন হয়েছেন। তাদের প্রায় বিবস্ত্র করে পিটমোড়া করে হ্যান্ডকাফ পরা অবস্থায় রাখা হয়। ওবামা আইনের শাসনের মধ্যে কাজ করতে সব দলের প্রতি আহ্বান জানান। জার্মান চ্যান্সেলর এ্যাঞ্জেলা মেরকেল এরদোগানের নাম উল্লেখ না করে তার উদ্দেশে বলেন, গণতন্ত্রই আইনের শাসনের সর্বোত্তম ভিত্তি, কারণ এটি প্রত্যেকের অধিকারের প্রতি শ্রদ্ধা দেখায় এবং সংখ্যালঘুদের রক্ষা করে। তিনি আরও বলেন, জার্মানি তুরস্কে গণতন্ত্র ও আইনের শাসন রক্ষা করে এমন সবার পক্ষে রয়েছে। রাজনৈতিক পরিবর্তন অবশ্যই পার্লামেন্টের মাধ্যমে আনতে হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন। ইইউ পার্লামেন্টের প্রেসিডেন্ট মার্টিন শুলজও মেরকেলের কথার প্রতিধ্বনি করেন। তিনি বলেন, গণতান্ত্রিক ভিত্তি ভেঙ্গে ফেলতে এবং জনগণের মৌলিক অধিকার অস্বীকার করতে সর্বশেষ ঘটনাকে কাজে লাগানো তুর্কি সরকারের জন্য উচিত হবে না। তিনি বলেন, কেবল সামরিক মিত্র নয়, ইউরোপীয় ইউনিয়নেরও সদস্য হওয়ার প্রার্থী এমন কোন দেশে এক ব্যক্তির শাসন ও স্বেচ্ছাচারী সিদ্ধান্ত গ্রহণযোগ্য নয়। ফরাসী পররাষ্ট্রমন্ত্রী জ্যাঁ-মার্ক ইরোল আইনের প্রতি শ্রদ্ধা দেখাতে এবং শুদ্ধি অভিযান থেকে বিরত থাকতে প্রেসিডেন্ট এরদোগানের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, আমাদের অবশ্যই তুরস্কে সংঘটিত অভ্যুত্থানের নিন্দা করতে হবে। কিন্তু আমরা চাই আইনের শাসন পুরোপুরি কাজ করুক। এরদোগানের জন্য অবাধ স্বাধীনতা নেই। ইরোল তুরস্কে সংঘটিত ব্যাপক ধরপাকড়ের ঘটনার সমালোচনা করে বলেন, শুদ্ধি অভিযানের পথে যাবেন না। যারা গণতন্ত্রের ক্ষতি করেছিল তাদের আইনের আওতায় বিচার করা উচিত। তুরস্ককে সতর্ক করল যুক্তরাষ্ট্র তুরস্কের ব্যর্থ অভ্যুত্থানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের জড়িত থাকার বিষয়ে ‘প্রকাশ্যে পরোক্ষ ইঙ্গিত’ দেয়া নিয়ে তুরস্ককে সতর্ক করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এ ধরনের অভিযোগকে ‘পুরোপুরি মিথ্যা’ অভিহিত করে এ ধরনের দাবি দুই দেশের সম্পর্কের জন্য ‘ক্ষতিকর’ বলে মন্তব্য করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি। শনিবার রাতে তুর্কি টেলিভিশনের সঙ্গে কথা বলার সময় দেশটির শ্রম ও সামাজিক নিরাপত্তা মন্ত্রী সুলেয়মান সোইলু অভ্যুত্থান চেষ্টার পেছনে যুক্তরাষ্ট্র আছে বলে অনুযোগ করেন। এর পরপরই বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান যুক্তরাষ্ট্রে স্বেচ্ছা-নির্বাসনে থাকা তুর্কি ধর্মীয় নেতা ফেতুল্লাহ গুলেনকে এ অভ্যুত্থান প্রচেষ্টার জন্য দায়ী করেছেন এবং তাকে ফেরত পাঠাতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। গুলেন অভিযোগ অস্বীকার করেছেন পেনসিলভানিয়ার বাসভবন থেকে গুলেন অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘গত পাঁচ দশকে আমি নিজেই বেশ কয়েকটি সামরিক অভ্যুত্থানের কারণে ভুগেছি। তাই এ ধরনের কোন উদ্যোগের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠা বিশেষভাবেই অপমানজনক।’
×