ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ প্রতিরোধে ইসলাম

প্রকাশিত: ০৪:১২, ১৯ জুলাই ২০১৬

সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ প্রতিরোধে ইসলাম

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন ‘সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ প্রতিরোধে ইসলাম’ শীর্ষক একটি ভাষ্য তৈরি করেছে। ভাষ্যটি পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো। আজ পড়ুন এর দ্বিতীয় কিস্তি] সন্ত্রাস নয়Ñ দাওয়াতই হচ্ছে ইসলামের সঠিক পথ বিশ্ব জাহানের রহমত-রাহমাতুল্লিল আল-আমীন মহানবী (সা) পৃথিবীতে এসেছিলেন মানুষের আত্মিক পরিশুদ্ধির মাধ্যমে ইহকালের কল্যাণ ও পরকালের নাজাতের পথপ্রদর্শক হিসেবে। তিনি দাওয়াতের মাধ্যমেই মানুষকে আল্লাহর পথে আহ্বান করেছিলেন। এ সম্পর্কে আল্লাহ তা’য়ালা বলেন, (হে রাসূল) আপনি মানুষকে আপনার প্রতিপালকের দিকে আহ্বান করুন হিকমত ও সৎ উপদেশের মাধ্যমে এবং তাদের সঙ্গে কথা বলুন উত্তম পন্থায়। আপনার প্রতিপালকের পথ ছেড়ে কে বিপথগামী হয় সে সম্পর্কে তিনি সবিশেষ অবহিত আছেন এবং কারা সৎ পথে আছে সে বিষয়েও তিনি সম্যক অবহিত (সূরা নাহল, আয়াত : ১২৫)। দাওয়াতের পথই হচ্ছে ইসলামের প্রকৃত পথ। নবী করীম (সা)-এর ওফাতের পর সাহাবায়ে কিরাম, তাবেয়ীন, তাবে-তাবেয়ীন ও আউলিয়াগণ এ দাওয়াতের মাধ্যমে মানুষকে ইসলামে দীক্ষিত করেছেন। তাঁদের অনুপম চারিত্রিক আদর্শ ও ইসলামের পূতপবিত্র সৌন্দর্যের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে মানুষ ইসলামের সুশীতল ছায়াতলে আশ্রয় গ্রহণ করেছে। আমাদের উপমহাদেশে আজ ৭০ কোটি মুসলমানের বাস। তাঁরা এ অনুপম দাওয়াতেরই ফসল। জঙ্গীবাদ প্রতিরোধে জামায়াতীদের কবল থেকে শিক্ষা ব্যবস্থা পুনরুদ্ধার করতে হবে মওদুদীপন্থী জামায়াত-শিবির সারাদেশে কিন্ডারগার্টেনসহ বিভিন্ন ধরনের কোচিং সেন্টার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালনার মাধ্যমে তাদের ভ্রান্ত আদর্শের কর্মীবাহিনী যেমন গঠন করছে, তেমনি গত পঞ্চাশ বছর ধরে তারা অত্যন্ত সুকৌশলে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থাকেও বিকৃত করেছে। এর ফলে আলেম তৈরির পথে বাধা সৃষ্টি করছে। শিক্ষা কারিকুলামকে ধ্বংস করে তারা অর্ধশিক্ষিত ও আলেম নামধারী ব্যক্তির মাধ্যমে মওদুদীপন্থী কর্মী তৈরি করছে। এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে হলে প্রকৃত আলেম সমাজকেই এগিয়ে আসতে হবে। সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদের পথ বন্ধ করার জন্য এর কোন বিকল্প নেই। নবী করীম (সা) শুধু রাহমাতুল্লিল মুসলিমীন নন, তিনি ‘রাহমাতুল্লিল আলামীন’। আল্লাহ তায়ালা বিশ্বজগতের রহমতস্বরূপ নবী করীম (সা)-কে হায়াতুন্নবী বিশেষণে জমিনে প্রেরণ করেছেন। তিনি নবী করীম (সা)-এর মাধ্যমে ওহীর জ্ঞান পবিত্র কোরান এবং নবী করীমের (সা) কর্মময় জীবন সুন্নতকে দ্বীনি দাওয়াত ও দ্বীনি শিক্ষার ভিত্তি করেছেন। নবী করীম (সা) এক্ষেত্রে বিশ্ববাসীর জন্য নমুনা, অনুসরণ ও অনুকরণীয়। কিয়ামত পর্যন্ত তাঁর নমুনার ওপর ভিত্তি করে কোরান-সুন্নাহর দাওয়াত ইহুদী, খ্রীস্টান, হিন্দু, বৌদ্ধ ও নাস্তিকসহ সকল বিশ্ববাসীর নিকট তাঁর ধারাবাহিকতায় পৌঁছে দিয়েছেন তাঁর সাহাবা-ই-কেরাম, তাবেয়ীন, তাবে-তাবেয়ীন, ওলামা ও আউলিয়া কেরাম। নবী করীম (সা) জোর করে কাউকে মুসলিম বানাতে আসেননি। যারা তাঁর দাওয়াতে সাড়া দিয়েছেন, তিনি তাদেরকে কালেমা পড়িয়েছেন, তিনি জমিনকে বা রাষ্ট্রকে কালেমা পড়াননি বা পড়াতে আসেননি। এ প্রসঙ্গে উল্লেখ্য, নবী করীম (সা) ৬০৯ খ্রিস্টাব্দে নবুয়ত লাভ করেন। সেই নবুয়তকাল থেকে শুরু করে ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ১৩৩৭ বছরে নবী করীম (সা) খোলাফায়ে রাশিদীন, সাহাবা-তাবেয়ীন এবং তাঁদের পরবর্তী কেউই রাষ্ট্রকে বা জমিনকে কালেমা পড়াননি অথবা ‘ইসলামিক স্টেট’ ‘মুসলিম স্টেট’ করেননি কিংবা সেদিকে আহ্বানও করেননি। ১৯৪৭-এ পাকিস্তান প্রথম তার নামকরণ করে ‘ইসলামী প্রজাতন্ত্র’। এরপর ইরান, মৌরিতানিয়া ও চাদ তাদের দেশের নামের সঙ্গে ‘ইসলামী রাষ্ট্র বা প্রজাতন্ত্র’ শব্দ যুক্ত করে। ওআইসিভুক্ত ৫৭ রাষ্ট্রের বাকি ৫৩টি রাষ্ট্রের কোনটিই তার নামের সঙ্গে ‘ইসলামী রাষ্ট্র, রাজ্য, প্রজাতন্ত্র’ জাতীয় কোন শব্দ সংযুক্ত করেনি। ইসলামী স্টেট বা মুসলিম স্টেট করার বিষয়ে পবিত্র কোরান ও হাদিসে কোন নির্দেশনা নেই। জামায়াত-শিবির পরিচালিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সন্ত্রাস-জঙ্গীবাদের অন্যতম উৎস বাংলাদেশে জামায়াত-শিবিরের প্রতিষ্ঠিত ও পরিচালিত নামে-বেনামে কিন্ডারগার্টেন, মডেল, আইডিয়াল, ক্যাডেট, পিস স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও সাধারণ বা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্ধারিত কারিকুলাম বহির্ভূত বেশকিছু চটকদার চটি বইসহ মওদুদী দর্শনের পুস্তকাদি ও প্রচারপত্রের মাধ্যমে বিকৃত ধর্মীয় শিক্ষা প্রদান করা হয়; যা শিশু-কিশোর ও তরুণ-যুবকদের সন্ত্রাস-জঙ্গী মানসিকতা সৃষ্টির অন্যতম প্রধান উৎস। ইসলামের বিকৃত ব্যাখ্যাসহ এসব চটি বই পড়ানো রাষ্ট্রবিরোধী। তাই তা বন্ধ করতে হবে। ইসলামী মাইক্রোক্রেডিট জামায়াত-শিবিরের পুনর্বাসন ও জঙ্গী অর্থায়নের নেটওয়ার্ক দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে গাছ কেটে, সড়কে বাধা সৃষ্টি করে এবং সরকার ও রাষ্ট্রবিরোধী মিছিল-মিটিং করে কোমলমতি শিক্ষার্থী ও সাধারণ ধর্মপ্রাণ মানুষদের সন্ত্রাস ও জঙ্গী তৎপরতা অনুশীলনের হাতেখড়ি প্রদান করা হয়। কোথাও প্রকাশ্যে এবং কোথাও পর্দার অন্তরালে এর নেতৃত্বে থাকে জামায়াত-শিবির। এক্ষেত্রে অর্থায়নের সুযোগটি সৃষ্টি হয় সমগ্র দেশে সর্বাধিক বিস্তৃত ইসলামী ব্যাংকিংয়ের নামে সুদি ধারার ইসলামী মাইক্রোক্রেডিটের মাধ্যমে। গ্রামীণ ব্যাংক, ব্র্যাক, আশা ও অন্যান্য এনজিও উচ্চহারে সুদভিত্তিক মাইক্রোক্রেডিট শুরু করলেও বর্তমানের মাইক্রোক্রেডিটের প্রধানতম নিয়ন্ত্রণ জামায়াত-শিবির পরিচালিত একটি ইসলামী নামের ব্যাংকের হাতে। এক্ষেত্রে কেবল ২০১৫ সালেই এ ব্যাংকটির পল্লী অঞ্চলে লোন ও বিনিয়োগ গ্রহণের জন্য সদস্য করা হয়েছে প্রায় ১০ লাখ এবং লোন ও বিনিয়োগ দেয়া হয়েছে প্রায় ৬ লাখ নারী-পুরুষকে। বর্তমানে বাংলাদেশের মাইক্রোক্রেডিট সিংহভাগ পরিচালিত হয় এ ব্যাংকটির মাধ্যমে। এ অর্থায়নের সঙ্গে কর্মরত প্রায় আড়াই হাজার ফিল্ড অফিসার জামায়াত-শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। ইসলামের নামে এ মাইক্রোক্রেডিট পরিচালনার দাবি করা হলেও এখানে সুদকে মুনাফা নাম দিয়ে ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে ইসলামের নামে সুকৌশলে সুদি চর্চা হয় এবং জামায়াতী অপরাজনীতির সেøা-পয়জন ঢুকিয়ে দেয়া হয়। এই মাইক্রোক্রেডিট সূত্রে জামায়াত-শিবির পুনর্বাসিত হয় এবং তাদের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে তরুণ-যুবক জঙ্গী তৎপরতার দিকে পা বাড়ায়। মুসলিম উম্মাহর মধ্যে বিভক্তি সৃষ্টিকারী এবং বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাসের উস্কানিদাতা ডাঃ জাকির নায়েক ও পিস টিভির অপপ্রচার ভারতের ডাঃ জাকির নায়েক তার পিস টিভির মাধ্যমে মুসলিম উম্মাহর মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করছে। পিস টিভির মাধ্যমে তিনি বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাসের উস্কানি দিচ্ছেন। তিনি একজন লা-মাযহাবী ও সালাফী। এ দেশের জনগণের মধ্যে মাত্র শতকরা ২% লোক লা-মাযাহাবী, সালাফী ও মওদুদীপন্থী জামায়াত-শিবির চক্র। এরা ডাঃ জাকির নায়েকের মতাদর্শে বিশ্বাসী। তাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে বিশ্বব্যাপী ইসলামী রাষ্ট্র কায়েম করে ক্ষমতায় আরোহণ করা। মধ্যপ্রাচ্যে জঙ্গী ও সন্ত্রাসী সংগঠন আইএস ২০২০ সালের মধ্যে ভারত উপমহাদেশে তাদের সাম্রাজ্য বিস্তারের ঘোষণা দেয়। এ লক্ষ্যে তারা বাংলাদেশকে করিডর হিসেবে ব্যবহার করে মানচিত্র প্রণয়ন করেছে। চলবে...
×