ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

গবেষণা প্রতিবেদনে তথ্য

নারীর প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণে গার্মেন্টস খাত দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে

প্রকাশিত: ০৮:২৬, ১৮ জুলাই ২০১৬

নারীর প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণে গার্মেন্টস খাত দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ নারীদের প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণের কারণে বাংলাদেশের গার্মেন্টস খাত দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। আবার নারীর ক্ষমতায়ন এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রেও গার্মেন্টস খাতের রয়েছে বড় অবদান। তাই দেশের যে কোন পরিস্থিতির কারণে এ শিল্পের যাতে কোন ক্ষতি না হয় সেদিকে সবার নজর দেয়া প্রয়োজন। প্রাকৃতিক দুর্ঘটনাসহ কোন একটি সমস্যা তৈরি হলেই বিদেশী ক্রেতারা পোশাক না কেনার হুমকি দেন। ভবিষ্যতে এ ধরনের নেতিবাচক কথা বলে এ শিল্প খাতকে চাপের মুখে না ফেলার নীতি গ্রহণ করার সময় হয়েছে। গার্মেন্টস খাতে কাজ করার সুযোগে নারীদের তিনটি বিষয়ে দ্রুত উন্নতি হয়েছে। এগুলো হচ্ছে- তাদের ছেলেমেয়েরা নিয়মিত স্কুলে যাচ্ছে, বাল্যবিবাহ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়েছে এবং অল্প বয়সে মা হওয়ার প্রবণতা কমে গেছে। ফলে বাংলাদেশের নারী উন্নয়নে গার্মেন্টস শিল্পকে আরও এগিয়ে নিতে হবে। রবিবার রাজধানীর গুলশানের লেকশোর হোটেলে দ্য ইন্টারন্যাশনাল গ্রোথ সেন্টার (আইজিসি), ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গবর্ননেন্স এ্যান্ড ডেভলপমেন্ট (বিআইজিডি) এবং ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌথ উদ্যোগে দেশের গার্মেন্টস খাত ও নারীর অবদান নিয়ে একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে। ওই প্রতিবেদনে এসব কথা বলা হয়েছে। অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন বলেন, সরকারী নীতিগত সহায়তার কারণে দেশের নারীরা এগিয়ে যাচ্ছে। গার্মেন্টস খাতের আজকের এই অবস্থানে আসার পেছনে নারীদের অবদান সবচেয়ে বেশি। বর্তমান এ শিল্পের ৮০ শতাংশ শ্রমিক নারী। তাদের নিখুঁত কারিগরি দক্ষতায় বাংলাদেশের পোশাক নিজস্ব ব্র্যান্ডে পরিচিতি পেয়েছে। আর এসবই সম্ভব হয়েছে নীতিগত সহায়তা প্রদানের কারণে। তিনি বলেন, সরকার নারীর ক্ষমতায়নে যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। স্থানীয় সরকার ব্যবস্থায় এক-তৃতীয়াংশ প্রতিনিধিত্ব রয়েছে নারীদের। সেখানেও নারীরা ভাল করছেন। সরকার নারীদের জন্য জেন্ডার বাজেট প্রণয়ন করছে। এতে করে দেশে নারী উদ্যোক্তা তৈরি হচ্ছে। নারীরা বিভিন্ন সেক্টরে বিনিয়োগ করে কর্মসংস্থান তৈরি করছেন। ব্যাংকগুলো নারীদের সহজ শর্তে ঋণ দিচ্ছে। এর ফলে দ্রুত বাংলাদেশের নারীরা এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন। এদিকে, গবেষণার মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন যুক্তরাষ্ট্রের ইয়েল স্কুল অব ম্যানেজমেন্টের অধ্যাপক মুশফিক মোবারক এবং রোজ স্কুল অব বিজনেস মিশিগান ইউনিভার্সিটির সহকারী অধ্যাপক আচিওটা আডবারু। গবেষণায় আরও বলা হয়েছে, নারীর ক্ষমতায়ন, বাল্যবিবাহ রোধ, শিশু মৃত্যু হ্রাস, অল্প বয়সে সন্তান গ্রহণ না করা এবং পিছিয়ে পড়া ছেলেমেয়েদের স্কুলে যাওয়ার পেছনে গার্মেন্টস খাতের বড় অবদান রয়েছে। পড়াশুনা না করেও কাজের দক্ষতা দেখিয়ে নারীরা চাকরি করার সুযোগ পাচ্ছেন। এতে করে তাদের অর্থনৈতিক সঙ্কট দূর হওয়ার পাশাপাশি সামাজিকভাবে তারা ভাল আছেন। এ কারণে এ খাতের বিদেশী ক্রেতা যারা আছেন তাদের বিষয়টি উপলব্ধি করতে হবে। রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পরই বড় বড় ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলো বাংলাদেশ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়ার হুমকি দিয়েছে। এছাড়া কোন কিছু ঘটলেই ক্রেতারা এ ধরনের হুমকি-ধমকি দিয়ে থাকেন। তাদের এই আচরণ ঠিক নয়। ক্রেতাদের বুঝতে হবে, গার্মেন্টস আছে বলেই বাংলাদেশের নারীরা সবদিক দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। এমডিজি অর্জনে বাংলাদেশ যে সাফল্য পেয়েছে সেখানেও নারীদের বড় অবদান রয়েছে। তাই কোন কিছু ঘটলেই বাংলাদেশ থেকে পোশাক না নেয়ার যে হুমকি দেয়া হয় তা ঠিক নয়। বিদেশী বায়ারদের এই আচরণ থেকে সরে আসতে হবে।
×